শিরোনাম :
Logo জীবননগরের ১১০ পিচ ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক Logo বাঁচতে চায় ক্যান্সারে আক্রান্ত নোবিপ্রবি শিক্ষার্থী মশিউর Logo কচুয়ার পালাখাল মডেল ইউনিয়নে জামায়াতে ইসলামীর ঈদ পূনর্মিলনী ও মতবিনিময় সভা Logo চাঁদপুরে ২০ হাজার আবাসিক গ্রাহকের গ্যাস সরবারহ বন্ধ Logo কয়রায় জেজেএস এর উদ্যোগে প্রকল্প অবহিতকরণ সভা অনুষ্ঠিত। Logo ‘জুলাই সনদ প্রণয়ন, সংস্কার ও বিচার দৃশ্যমানের পর নির্বাচন দিতে হবে’ Logo জিয়াউর রহমান ছিলেন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রনায়ক: রিজভী Logo সংসদ নির্বাচনের প্রচারণা পোস্টারে নয়, নতুন বিধিমালা চূড়ান্ত Logo শিক্ষার্থীদের ৯ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জনসংযোগ করছে রাবি সংস্কার আন্দোলন Logo কচুয়ায় দুই শিক্ষককে সংবর্ধনা ও পরীক্ষার্থীদের বিদায় উপলক্ষে দোয়া ও মিলাদ অনুষ্ঠিত

জীবননগরে গাছিদের ব্যস্ত সময়

  • নীলকন্ঠ ডেস্ক: নীলকন্ঠ ডেস্ক:
  • আপডেট সময় : ১২:০১:৪৮ অপরাহ্ণ, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪
  • ৭৩৯ বার পড়া হয়েছে

শীত মৌসুম আসতে এখনও বেশ কিছুদিন বাকি। এরই মধ্যে চুয়াডাঙ্গা জেলার  জীবননগর উপজেলার গ্রামগুলোতে শুরু হয়েছে শীতের আমেজ। রাতে ঠান্ডা-হিমেল বাতাস আর সকালে শিশির ভেজা ঘাস-পাতাই জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। সেই সঙ্গে শুরু হয়েছে খেজুরের রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরিকারী গাছিদের ব্যস্ততা। শীত এগিয়ে আসছে। অযন্তে আর অবহেলায় বেড়ে ওঠা খেজুর গাছের কদরও বেড়েছে। খেজুর গাছ পরিচর্যা-পরিষ্কারসহ রস সংগ্রহের উপযোগী করতে প্রতিদিন ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরাও। অনেকেই আবার মৌসুম চুক্তিতে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করতে শুরু করেছে।

গত বুধবার ও গতকাল বৃহস্পতিবার উপজেলার বিভিন্ন গ্রামগুলোতে ঘুরে দেখা গেছে, গাছিরা কোমরে মোটা রশি বেঁধে খেজুরের গাছ তৈরি করেছে। পেশাদার গাছির পাশাপাশি মৌসুমি গাছিরাও রস সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। বাড়ির আঙ্গিনায় বা রাস্তার ধারে রয়েছে সারি সারি খেজুর গাছ।

আর মাত্র কয়েকদিন পরেই খেজুর গাছে প্রতিদিন বিকেলে গাছিরা সনাতন পদ্ধতিতে খেজুরের গাছ তৈরি শেষে মাটির খালি হাঁড়ি লাগিয়ে ভোরের সূর্য ওঠার আগেই গাছ থেকে রসের হাঁড়ি পেড়ে বাড়িতে নিয়ে আসবে। গাছ থেকে সংগ্রহ করা রস টিনের কাড়াইয়ে জাল দিয়ে তৈরি করবে গুড় ও পাটালি। খেজুর গাছ সুমিষ্ট রস দেয়। রস থেকে তৈরি হয় গুড় ও পাটালি। যার সাদ ও ঘ্রাণ আলাদা। পুরো শীত মৌসুমে চলে এর পিঠা-পুলি আর পায়েস খাওয়ার ধুম।

এছাড়া গ্রামে খেজুর গুড় দিয়ে নতুন আমন ধানের পিঠা, পুলি, মুড়ির মোয়া,চিড়ার মোয়া তৈরির ধুম পড়ে যায়। তবে অগ্রহায়ণ মাসে পুরোদমে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ শুরু হবে এবং চার থেকে পাঁচ মাসব্যাপী খেজুরের রস দিয়ে গুড় তৈরি হবে বলে জানান গাছিরা। খেজুরের রস দিয়ে গুড় তৈরি করে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রি করে সংসারের খরচ মিটায় এবং অনেকে আবার বাণিজিকভাবে গুড় তৈরি  করে বাজারে বিক্রি করছে।

উপজেলার গঙ্গাদাশপুর গ্রামের গাছি মজনুর রহমান, আ. সালাম, হাতেম আলী জানান, শীত মৌসুমের শুরুতেই নিজেদের খেজুর গাছের সাথে গ্রামের অন্যদের খেজুর গাছ বর্গা নিয়ে বাণিজ্যিকভাবে গুড় তৈরি করে গাছের মালিককে ভাগ দিয়ে ও পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে গুড় বাজারে বিক্রি করে থাকি। তারা আরও জানান, খেজুর গাছ কাটা বেশ কষ্টের হলেও সকালে রস ভর্তি হাঁড়ি দেখলে সেই কষ্টের কথা ভুলে যাই।

চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের ছাত্র হাবিবুর রহমান বলেন, খেজুর গাছ ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হওয়ায় খেজুর গাছ দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। এক সময় দেখা যেত শীতের সকালে গাছিরা গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে, বাঁশের ভাঁড়ে কলস বেঁধে গ্রামে গ্রামে বিক্রি করত। এছাড়াও খেজুরের রসের পিঠা পুলি লোভনীয়। শীত কালের বেশির ভাগ পিঠাই তৈরী করা হয় খেজুরের গুড় দিয়ে। বছরের এই সময়টা আসলেই দেখা যায় বাড়ি বাড়ি পিঠা পুলির উৎসবের ধুম পড়েছে। এছাড়াও খেজুরের রস দিয়ে গুড় বানিয়ে বাজারে বিক্রি করে অনেকে স্বাবলম্বী হচ্ছে।

জীবননগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আলমগীর হোসেন জানান, উপজেলার ৮ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার রাস্তার পাশে বিভিন্ন পরিত্যক্ত স্থানে গড়ে ওঠা খেজুর গাছগুলো শীতের সময় আসলেই কদর বাড়ে। তবে খেজুর গাছ বেশিরভাগ ইটভাটায় পোড়ানোর কারণেই আজকে বিলুপ্তির পথে ইট ভাটায় খেজুর গাছ পোড়ানো বন্ধের বিষয় আমরা বন বিভাগকে বলছি। তারা পদক্ষেপ নিলেই এটা সম্ভব।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

জীবননগরের ১১০ পিচ ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক

জীবননগরে গাছিদের ব্যস্ত সময়

আপডেট সময় : ১২:০১:৪৮ অপরাহ্ণ, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪

শীত মৌসুম আসতে এখনও বেশ কিছুদিন বাকি। এরই মধ্যে চুয়াডাঙ্গা জেলার  জীবননগর উপজেলার গ্রামগুলোতে শুরু হয়েছে শীতের আমেজ। রাতে ঠান্ডা-হিমেল বাতাস আর সকালে শিশির ভেজা ঘাস-পাতাই জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। সেই সঙ্গে শুরু হয়েছে খেজুরের রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরিকারী গাছিদের ব্যস্ততা। শীত এগিয়ে আসছে। অযন্তে আর অবহেলায় বেড়ে ওঠা খেজুর গাছের কদরও বেড়েছে। খেজুর গাছ পরিচর্যা-পরিষ্কারসহ রস সংগ্রহের উপযোগী করতে প্রতিদিন ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরাও। অনেকেই আবার মৌসুম চুক্তিতে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করতে শুরু করেছে।

গত বুধবার ও গতকাল বৃহস্পতিবার উপজেলার বিভিন্ন গ্রামগুলোতে ঘুরে দেখা গেছে, গাছিরা কোমরে মোটা রশি বেঁধে খেজুরের গাছ তৈরি করেছে। পেশাদার গাছির পাশাপাশি মৌসুমি গাছিরাও রস সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। বাড়ির আঙ্গিনায় বা রাস্তার ধারে রয়েছে সারি সারি খেজুর গাছ।

আর মাত্র কয়েকদিন পরেই খেজুর গাছে প্রতিদিন বিকেলে গাছিরা সনাতন পদ্ধতিতে খেজুরের গাছ তৈরি শেষে মাটির খালি হাঁড়ি লাগিয়ে ভোরের সূর্য ওঠার আগেই গাছ থেকে রসের হাঁড়ি পেড়ে বাড়িতে নিয়ে আসবে। গাছ থেকে সংগ্রহ করা রস টিনের কাড়াইয়ে জাল দিয়ে তৈরি করবে গুড় ও পাটালি। খেজুর গাছ সুমিষ্ট রস দেয়। রস থেকে তৈরি হয় গুড় ও পাটালি। যার সাদ ও ঘ্রাণ আলাদা। পুরো শীত মৌসুমে চলে এর পিঠা-পুলি আর পায়েস খাওয়ার ধুম।

এছাড়া গ্রামে খেজুর গুড় দিয়ে নতুন আমন ধানের পিঠা, পুলি, মুড়ির মোয়া,চিড়ার মোয়া তৈরির ধুম পড়ে যায়। তবে অগ্রহায়ণ মাসে পুরোদমে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ শুরু হবে এবং চার থেকে পাঁচ মাসব্যাপী খেজুরের রস দিয়ে গুড় তৈরি হবে বলে জানান গাছিরা। খেজুরের রস দিয়ে গুড় তৈরি করে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রি করে সংসারের খরচ মিটায় এবং অনেকে আবার বাণিজিকভাবে গুড় তৈরি  করে বাজারে বিক্রি করছে।

উপজেলার গঙ্গাদাশপুর গ্রামের গাছি মজনুর রহমান, আ. সালাম, হাতেম আলী জানান, শীত মৌসুমের শুরুতেই নিজেদের খেজুর গাছের সাথে গ্রামের অন্যদের খেজুর গাছ বর্গা নিয়ে বাণিজ্যিকভাবে গুড় তৈরি করে গাছের মালিককে ভাগ দিয়ে ও পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে গুড় বাজারে বিক্রি করে থাকি। তারা আরও জানান, খেজুর গাছ কাটা বেশ কষ্টের হলেও সকালে রস ভর্তি হাঁড়ি দেখলে সেই কষ্টের কথা ভুলে যাই।

চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের ছাত্র হাবিবুর রহমান বলেন, খেজুর গাছ ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হওয়ায় খেজুর গাছ দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। এক সময় দেখা যেত শীতের সকালে গাছিরা গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে, বাঁশের ভাঁড়ে কলস বেঁধে গ্রামে গ্রামে বিক্রি করত। এছাড়াও খেজুরের রসের পিঠা পুলি লোভনীয়। শীত কালের বেশির ভাগ পিঠাই তৈরী করা হয় খেজুরের গুড় দিয়ে। বছরের এই সময়টা আসলেই দেখা যায় বাড়ি বাড়ি পিঠা পুলির উৎসবের ধুম পড়েছে। এছাড়াও খেজুরের রস দিয়ে গুড় বানিয়ে বাজারে বিক্রি করে অনেকে স্বাবলম্বী হচ্ছে।

জীবননগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আলমগীর হোসেন জানান, উপজেলার ৮ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার রাস্তার পাশে বিভিন্ন পরিত্যক্ত স্থানে গড়ে ওঠা খেজুর গাছগুলো শীতের সময় আসলেই কদর বাড়ে। তবে খেজুর গাছ বেশিরভাগ ইটভাটায় পোড়ানোর কারণেই আজকে বিলুপ্তির পথে ইট ভাটায় খেজুর গাছ পোড়ানো বন্ধের বিষয় আমরা বন বিভাগকে বলছি। তারা পদক্ষেপ নিলেই এটা সম্ভব।