শিরোনাম :
Logo মুমিনুল চান তিনশ’র লিড, দুইশ’তে আটকাতে চায় জিম্বাবুয়ে Logo স্বর্ণের দামে সব রেকর্ড ভেঙে নতুন ইতিহাস Logo দুবাইয়ে বিগ টিকিট লটারি জিতে লাখপতি দুই বাংলাদেশি Logo বাবা হলেন যুক্তরাষ্ট্রে আটক খলিল, দেখতে পারলেন না সদ্যোজাত সন্তানের মুখ Logo এটিএম আজহার মুক্তি না পাওয়ায় আমরা ব্যথিত, তবে হতাশ নই Logo আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ ৩ বিচারপতি থেকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের পক্ষে বিএনপি Logo ধর্ম নিরপেক্ষতা বিলুপ্তে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে একমত বিএনপি Logo হঠাৎ বৃষ্টিতে চাঁদপুর শহরের মুসলিম কবরস্থান রোড এলাকা সড়কের বেহাল দশা, ভোগান্তিতে এলাকাবাসী Logo ইনসাফের আকাঙ্ক্ষা থেকেই চব্বিশের লড়াই:ব্যারিস্টার ফুয়াদ Logo ইবিতে বিভাগের নাম পরিবর্তসহ দুই দফা দাবিতে প্রশাসন ভবন অবরোধ

শ্রেণিকক্ষ থেকে বেরিয়ে বিষ খেয়ে থানায় গিয়ে ঢলে পড়ল এক কিশোরী

  • amzad khan
  • আপডেট সময় : ১০:৫৫:৫৬ অপরাহ্ণ, বৃহস্পতিবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০২২
  • ৭৮৮ বার পড়া হয়েছে

নরসিংদীর শিবপুরে ইঁদুর মারার বিষ খেয়ে অষ্টম শ্রেণিপড়ুয়া এক কিশোরীর মৃত্যু হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকের বেত্রাঘাত ও অপমান সইতে না পেরে সে বিষ খেয়ে নিজেই থানায় গিয়েছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। সেখানেই ঢলে পড়লে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখান থেকে সদর হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ওই শিক্ষার্থীর নাম প্রভা আক্তার (১৩)। সে শিবপুর উপজেলার বাঘাব ইউনিয়নের জয়মঙ্গল গ্রামের প্রবাসী ভুট্টো মিয়ার মেয়ে। প্রভা শিবপুর সরকারি পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিল।

বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও প্রভার সহপাঠীরা বলছে, প্রভা আজ বিদ্যালয়ের নির্ধারিত পোশাকের সঙ্গে ট্রাউজার পরে এসেছিল। বেলা তিনটার দিকে অষ্টম শ্রেণির শ্রেণিকক্ষে পড়াতে আসেন সমাজবিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক নার্গিস সুলতানা ওরফে কণিকা। এ সময় প্রভার ট্রাউজার পরে আসার বিষয়টি তাঁর নজরে আসে। তিনি প্রভাকে শ্রেণিক্ষে দাঁড় করিয়ে অপমান করেন। একপর্যায়ে তাকে বেত দিয়ে কয়েকটি আঘাত করেন এবং থাপ্পড় দেন। শ্রেণিকক্ষের মধ্যে শিক্ষকের এমন আচরণ মানতে পারেনি প্রভা। ওই সময়ই শ্রেণিকক্ষ থেকে বেরিয়ে বিদ্যালয়ের বাইরে চলে যায় সে।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে শিবপুর থানায় ডিউটি অফিসার ছিলেন এইচ আই জিয়া। ওই ছাত্রীর বরাত দিয়ে তিনি বলেন, বিদ্যালয় থেকে বের হয়ে প্রভা শিবপুর বাজারের একটি দোকান থেকে ইঁদুর মারার বিষ কেনে। পরে এটি খেয়ে শিবপুর থানায় চলে আসে। এসে বলে, ‘ক্লাসে কণিকা ম্যাডাম মেরেছে, তাই ইঁদুর মারার ওষুধ কিনে খেয়েছি।’ এরপরই সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। পরে থানা থেকে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হলে প্রধান শিক্ষক নূর উদ্দিন মোহাম্মদ আলমগীরসহ একদল শিক্ষক তাকে থানা থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান।

বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পর সেখানকার জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। খবর পেয়ে প্রভার মা ও পরিবারের অন্য সদস্যরা হাসপাতালে আসেন। অনেকটা সময় চেষ্টার পরও অবস্থা স্বাভাবিক না হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে নরসিংদী সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে তাকে নরসিংদী সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়।

নরসিংদী সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) লোপা চৌধুরী জানান, শিবপুর থেকে প্রভা নামের ওই স্কুলছাত্রীকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল। এ ঘটনা সংশ্লিষ্ট থানায় জানানো হয়েছে। লাশ এই হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নূর উদ্দিন মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, শিক্ষার্থীর এমন মৃত্যু বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মেনে নিতে পারছেন না। ছাত্রছাত্রীদের মারধর না করার বিষয়ে ওই শিক্ষককে আগেও সতর্ক করা হয়েছিল। কী এমন ঘটেছিল যে ছাত্রী শ্রেণিকক্ষ থেকে বেরিয়ে আত্মহত্যা করে ফেলতে পারে, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

এ বিষয়ে কথা বলতে শিক্ষক নার্গিস সুলতানার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তিনি কল না ধরায় বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

জানতে চাইলে শিবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সালাউদ্দিন মিয়া বলেন, ওই ছাত্রী থানায় এসে ডিউটি অফিসারকে ঘটনাটি বলছিল। জানতে পেরে তিনি এগিয়ে এসে তার বক্তব্য লিখে রেখেছেন। এ ঘটনায় ওই শিক্ষককে আটকের চেষ্টা চলছে। পরিবারের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

মুমিনুল চান তিনশ’র লিড, দুইশ’তে আটকাতে চায় জিম্বাবুয়ে

শ্রেণিকক্ষ থেকে বেরিয়ে বিষ খেয়ে থানায় গিয়ে ঢলে পড়ল এক কিশোরী

আপডেট সময় : ১০:৫৫:৫৬ অপরাহ্ণ, বৃহস্পতিবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০২২

নরসিংদীর শিবপুরে ইঁদুর মারার বিষ খেয়ে অষ্টম শ্রেণিপড়ুয়া এক কিশোরীর মৃত্যু হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকের বেত্রাঘাত ও অপমান সইতে না পেরে সে বিষ খেয়ে নিজেই থানায় গিয়েছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। সেখানেই ঢলে পড়লে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখান থেকে সদর হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ওই শিক্ষার্থীর নাম প্রভা আক্তার (১৩)। সে শিবপুর উপজেলার বাঘাব ইউনিয়নের জয়মঙ্গল গ্রামের প্রবাসী ভুট্টো মিয়ার মেয়ে। প্রভা শিবপুর সরকারি পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিল।

বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও প্রভার সহপাঠীরা বলছে, প্রভা আজ বিদ্যালয়ের নির্ধারিত পোশাকের সঙ্গে ট্রাউজার পরে এসেছিল। বেলা তিনটার দিকে অষ্টম শ্রেণির শ্রেণিকক্ষে পড়াতে আসেন সমাজবিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক নার্গিস সুলতানা ওরফে কণিকা। এ সময় প্রভার ট্রাউজার পরে আসার বিষয়টি তাঁর নজরে আসে। তিনি প্রভাকে শ্রেণিক্ষে দাঁড় করিয়ে অপমান করেন। একপর্যায়ে তাকে বেত দিয়ে কয়েকটি আঘাত করেন এবং থাপ্পড় দেন। শ্রেণিকক্ষের মধ্যে শিক্ষকের এমন আচরণ মানতে পারেনি প্রভা। ওই সময়ই শ্রেণিকক্ষ থেকে বেরিয়ে বিদ্যালয়ের বাইরে চলে যায় সে।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে শিবপুর থানায় ডিউটি অফিসার ছিলেন এইচ আই জিয়া। ওই ছাত্রীর বরাত দিয়ে তিনি বলেন, বিদ্যালয় থেকে বের হয়ে প্রভা শিবপুর বাজারের একটি দোকান থেকে ইঁদুর মারার বিষ কেনে। পরে এটি খেয়ে শিবপুর থানায় চলে আসে। এসে বলে, ‘ক্লাসে কণিকা ম্যাডাম মেরেছে, তাই ইঁদুর মারার ওষুধ কিনে খেয়েছি।’ এরপরই সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। পরে থানা থেকে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হলে প্রধান শিক্ষক নূর উদ্দিন মোহাম্মদ আলমগীরসহ একদল শিক্ষক তাকে থানা থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান।

বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পর সেখানকার জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। খবর পেয়ে প্রভার মা ও পরিবারের অন্য সদস্যরা হাসপাতালে আসেন। অনেকটা সময় চেষ্টার পরও অবস্থা স্বাভাবিক না হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে নরসিংদী সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে তাকে নরসিংদী সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়।

নরসিংদী সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) লোপা চৌধুরী জানান, শিবপুর থেকে প্রভা নামের ওই স্কুলছাত্রীকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল। এ ঘটনা সংশ্লিষ্ট থানায় জানানো হয়েছে। লাশ এই হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নূর উদ্দিন মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, শিক্ষার্থীর এমন মৃত্যু বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মেনে নিতে পারছেন না। ছাত্রছাত্রীদের মারধর না করার বিষয়ে ওই শিক্ষককে আগেও সতর্ক করা হয়েছিল। কী এমন ঘটেছিল যে ছাত্রী শ্রেণিকক্ষ থেকে বেরিয়ে আত্মহত্যা করে ফেলতে পারে, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

এ বিষয়ে কথা বলতে শিক্ষক নার্গিস সুলতানার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তিনি কল না ধরায় বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

জানতে চাইলে শিবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সালাউদ্দিন মিয়া বলেন, ওই ছাত্রী থানায় এসে ডিউটি অফিসারকে ঘটনাটি বলছিল। জানতে পেরে তিনি এগিয়ে এসে তার বক্তব্য লিখে রেখেছেন। এ ঘটনায় ওই শিক্ষককে আটকের চেষ্টা চলছে। পরিবারের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।