সোমবার | ১ ডিসেম্বর ২০২৫ | হেমন্তকাল
শিরোনাম :
Logo খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা, বীরগঞ্জ উপজেলায় অসহায়দের মাঝে খাবার বিতরণ Logo চাঁদপুরে যোগদানের প্রথম দিনেই সাংবাদিকদের সাথে নবাগত পুলিশ সুপারের মতবিনিময় Logo সদরপুরে গার্ডিয়ান এর এরিয়া অফিস উদ্ভোধন অনুষ্ঠানে ১০ লাখ টাকার মৃত্যু দাবী চেক বিতরণ। Logo ৪৫তম বিসিএস-এ ক্যাডার বুটেক্সের ১৩ শিক্ষার্থী Logo হাবিপ্রবিতে মশার উপদ্রবে উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থীরা, ভ্রুক্ষেপ নেই প্রশাসনের Logo জবিস্থ চুয়াডাঙ্গা ছাত্রকল্যাণের নেতৃত্বে সজিব ও তরিকুল Logo মেডিকেল বোর্ডের দেওয়া চিকিৎসা খালেদা জিয়া গ্রহণ করতে পারছেন : ডা. জাহিদ Logo কচুয়ায় সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করেন গণঅধিকার পরিষদ নেতা এনায়েত হাসিব Logo কচুয়ায় ইউএনও হেলাল চৌধুরীর বিদায় সংবর্ধনা Logo জীবননগর ডিগ্রি কলেজ ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা সভাপতি রিংকু, সম্পাদক ফরহাদ

হাসিনার ঘনিষ্ঠরা ব্যাংকখাত থেকে লুট করেছেন ২ লাখ কোটি টাকা : গভর্নর

  • নীলকন্ঠ ডেস্ক: নীলকন্ঠ ডেস্ক:
  • আপডেট সময় : ১২:৩২:৪২ অপরাহ্ণ, মঙ্গলবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৪
  • ৭৫৯ বার পড়া হয়েছে

শেখ হাসিনার আমলে সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের সহায়তায় ক্ষমতাসীনদের সমর্থনপুষ্ট প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা ব্যাংক খাত থেকে ১৭ বিলিয়ন ডলার বা ২ লাখ কোটি টাকা সরিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, জোর করে ওইসব ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নিতে সহায়তা করে ডিজিএফআই।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব পাওয়া মনসুর বলেন, ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর নতুন শেয়ারহোল্ডারদের ঋণ, বাড়িয়ে দেখানো আমদানি ব্যয়ের (ওভার ইনভয়েসিং) মতো কৌশল ব্যবহার করে বাংলাদেশ থেকে আনুমানিক দুই ট্রিলিয়ন টাকা বা ১ হাজার ৬৭০ কোটি ডলার পাচার করা হয়েছে।

তার ভাষায়, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিবেচনা করলেও যে কোনো বিচারে ব্যাংক ডাকাতির সবচেয়ে বড় ঘটনা এটি। এই মাত্রায় কোথাও এমনটা ঘটেনি। এতে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা ছিল এবং গোয়েন্দারা (ব্যাংকের তখনকার সিইওদের) মাথায় বন্দুক না ঠেকালে এটা ঘটতে পারত না। খবর বিডিনিউজের।

গভর্নর ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেন, ডিজিএফআইয়ের সহায়তায় ব্যাংকগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর এস আলমের গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ সাইফুল আলম এবং তার সহযোগীরা ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে অন্তত ১০০০ কোটি ডলার বা ১০ বিলিয়ন ডলার সরিয়েছে। প্রতিদিন তারা নিজেরাই নিজেদের ঋণ দিচ্ছিল।

ফিন্যান্সিয়াল টাইমস লিখেছে, অভিযোগের বিষয়ে এস আলমের বক্তব্য জানতে যোগাযোগ করেছিল তারা। সাইফুল আলমের তরফে ল ফার্ম কুইন ইমানুয়েল উরকুহার্ট অ্যান্ড সুলিভান এক বিবৃতিতে বলেছে, মনসুর যেসব অভিযোগ তুলেছেন সেসবের কোনো সত্যতা নেই।

বিবৃতিতে পাল্টা অভিযোগে বলা হয়, এস আলম গ্রুপ এবং বাংলাদেশের অন্যান্য নেতৃস্থানীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তী সরকার যেসব ব্যবস্থা নিয়েছে, সেই ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে মৌলিক নীতিগুলোর প্রতিও সম্মান দেখানো হয়নি। এ পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমেছে এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটেছে মন্তব্য করে বিবৃতিতে বলা হয়, (এস আলম) গ্রুপের অতীত ইতিহাস ও অবদানের নিরিখে গভর্নরের অভিযোগ আমাদের কাছে…বিস্ময়কর ও অযৌক্তিক ঠেকছে।

ফিন্যান্সিয়াল টাইমস বলছে, অভিযোগের বিষয়ে তাদের জিজ্ঞাসায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মুখপাত্র আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর সাড়া দেয়নি। ব্রিটিশ পত্রিকাটি প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) বক্তব্যও জানতে পারেনি।

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সব মিলিয়ে দুই দশক ক্ষমতায় ছিলেন। কিন্তু ভোট কারচুপি, বিরোধীদের জেলে পাঠানো ও নির্যাতন এবং ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগে তার শাসন প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী আগস্টে ভারতে পালিয়ে যান। তারপর শান্তিতে নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। শেখ হাসিনা সরকারের সদস্য ও সহযোগীদের বিরুদ্ধে ওঠা অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আমলে নিয়ে বর্তমান সরকার তা পুনরুদ্ধারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

আইএমএফের সাবেক কর্মকর্তা আহসান মনসুর গত মাসে ফিনান্সিয়াল টাইমসকে বলেছিলেন, শেখ হাসিনার মিত্রদের বিদেশি সম্পদ অনুসন্ধানে তিনি যুক্তরাজ্যের সহায়তা চেয়েছেন। আওয়ামী লীগের আমলে নেতৃস্থানীয় ব্যাংকগুলোর বোর্ড সদস্যরা শাসকগোষ্ঠীর নিশানায় ছিলেন বলেও তিনি দাবি করেছেন।

গভর্নর ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেন, বোর্ড সদস্যদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে হোটেলসহ বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যেতেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। তারা অপহৃতদের অস্ত্র ঠেকিয়ে এস আলমের কাছে শেয়ার বেচতে এবং পরিচালকের পদ ছাড়তে বলতেন। একের পর এক ব্যাংকের ক্ষেত্রে তারা এটা করেছে।

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের সাবেক সিইও মোহাম্মদ আবদুল মান্নান ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেছেন, জোর করে ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য তাকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছিল। ২০১৩ সাল থেকে তিনি তৎকালীন সরকারের ঘনিষ্ঠ লোকজনের চাপের মুখে ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পছন্দের লোককে বোর্ডে বসানো এবং ব্যাংকের একজন বিদেশি পরিচালকের হোটেল কক্ষে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনের তল্লাশির কথাও মান্নান বলেছেন।

তিনি বলেন, ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে বোর্ড মিটিংয়ে যাওয়ার পথে তাকে আটকানো হয় এবং একজন ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করতে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর তাকে পদত্যাগে বাধ্য করার জন্য পুরো এক কর্মদিবস সেখানে আটকে রাখা হয়।

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তরফে মান্নানকে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের প্রশাসকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এই ব্যাংকার ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেন, তারা ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে ব্যাংকের চিঠিপত্র তৈরি করেছিল। আমাকে একটি পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করতে হয়েছে।

এস আলম গত এক দশকে ব্যাংক খাতে নিয়ন্ত্রণ বিস্তৃত করেছে। গ্রুপটির ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকসহ সাতটি ব্যাংকে তাদের উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ রয়েছে।

আহসান এইচ মনসুর ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেন, শেখ হাসিনার আমলে নিয়ন্ত্রণ নেওয়া এ রকম প্রায় এক ডজন ব্যাংকের (বেশিরভাগই দেউলিয়া) নিরীক্ষা শেষে চুরি যাওয়া অর্থ উদ্ধারের লক্ষ্য ঠিক করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আমরা এই নিরীক্ষাকে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ আদালতে প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করতে চাই।

শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর ওই ব্যাংকগুলোর শেয়ার হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। আহসান মনসুর বলেন, ওই ব্যাংকগুলোর শেয়ার এখন ভালো মানের জাতীয় বা আন্তর্জাতিক কৌশলগত বিনিয়োগকারীদের কাছে বিক্রি করার পরিকল্পনা করছে কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি দুর্দশাগ্রস্ত সম্পদ ব্যবস্থাপনা বা অবসায়নে একটি সম্পদ ব্যবস্থাপনা ফার্ম গঠনের পরিকল্পনা আছে।

দুবাই, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাজ্য বা অন্য জায়গায় এসব ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডারদের নামে থাকা সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে আন্তর্জাতিক আইনি সংস্থাগুলোকে নিয়োগ দেওয়ার কথাও সাক্ষাৎকারে বলেছেন গভর্নর।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা, বীরগঞ্জ উপজেলায় অসহায়দের মাঝে খাবার বিতরণ

হাসিনার ঘনিষ্ঠরা ব্যাংকখাত থেকে লুট করেছেন ২ লাখ কোটি টাকা : গভর্নর

আপডেট সময় : ১২:৩২:৪২ অপরাহ্ণ, মঙ্গলবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৪

শেখ হাসিনার আমলে সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের সহায়তায় ক্ষমতাসীনদের সমর্থনপুষ্ট প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা ব্যাংক খাত থেকে ১৭ বিলিয়ন ডলার বা ২ লাখ কোটি টাকা সরিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, জোর করে ওইসব ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নিতে সহায়তা করে ডিজিএফআই।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব পাওয়া মনসুর বলেন, ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর নতুন শেয়ারহোল্ডারদের ঋণ, বাড়িয়ে দেখানো আমদানি ব্যয়ের (ওভার ইনভয়েসিং) মতো কৌশল ব্যবহার করে বাংলাদেশ থেকে আনুমানিক দুই ট্রিলিয়ন টাকা বা ১ হাজার ৬৭০ কোটি ডলার পাচার করা হয়েছে।

তার ভাষায়, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিবেচনা করলেও যে কোনো বিচারে ব্যাংক ডাকাতির সবচেয়ে বড় ঘটনা এটি। এই মাত্রায় কোথাও এমনটা ঘটেনি। এতে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা ছিল এবং গোয়েন্দারা (ব্যাংকের তখনকার সিইওদের) মাথায় বন্দুক না ঠেকালে এটা ঘটতে পারত না। খবর বিডিনিউজের।

গভর্নর ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেন, ডিজিএফআইয়ের সহায়তায় ব্যাংকগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর এস আলমের গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ সাইফুল আলম এবং তার সহযোগীরা ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে অন্তত ১০০০ কোটি ডলার বা ১০ বিলিয়ন ডলার সরিয়েছে। প্রতিদিন তারা নিজেরাই নিজেদের ঋণ দিচ্ছিল।

ফিন্যান্সিয়াল টাইমস লিখেছে, অভিযোগের বিষয়ে এস আলমের বক্তব্য জানতে যোগাযোগ করেছিল তারা। সাইফুল আলমের তরফে ল ফার্ম কুইন ইমানুয়েল উরকুহার্ট অ্যান্ড সুলিভান এক বিবৃতিতে বলেছে, মনসুর যেসব অভিযোগ তুলেছেন সেসবের কোনো সত্যতা নেই।

বিবৃতিতে পাল্টা অভিযোগে বলা হয়, এস আলম গ্রুপ এবং বাংলাদেশের অন্যান্য নেতৃস্থানীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তী সরকার যেসব ব্যবস্থা নিয়েছে, সেই ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে মৌলিক নীতিগুলোর প্রতিও সম্মান দেখানো হয়নি। এ পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমেছে এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটেছে মন্তব্য করে বিবৃতিতে বলা হয়, (এস আলম) গ্রুপের অতীত ইতিহাস ও অবদানের নিরিখে গভর্নরের অভিযোগ আমাদের কাছে…বিস্ময়কর ও অযৌক্তিক ঠেকছে।

ফিন্যান্সিয়াল টাইমস বলছে, অভিযোগের বিষয়ে তাদের জিজ্ঞাসায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মুখপাত্র আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর সাড়া দেয়নি। ব্রিটিশ পত্রিকাটি প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) বক্তব্যও জানতে পারেনি।

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সব মিলিয়ে দুই দশক ক্ষমতায় ছিলেন। কিন্তু ভোট কারচুপি, বিরোধীদের জেলে পাঠানো ও নির্যাতন এবং ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগে তার শাসন প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী আগস্টে ভারতে পালিয়ে যান। তারপর শান্তিতে নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। শেখ হাসিনা সরকারের সদস্য ও সহযোগীদের বিরুদ্ধে ওঠা অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আমলে নিয়ে বর্তমান সরকার তা পুনরুদ্ধারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

আইএমএফের সাবেক কর্মকর্তা আহসান মনসুর গত মাসে ফিনান্সিয়াল টাইমসকে বলেছিলেন, শেখ হাসিনার মিত্রদের বিদেশি সম্পদ অনুসন্ধানে তিনি যুক্তরাজ্যের সহায়তা চেয়েছেন। আওয়ামী লীগের আমলে নেতৃস্থানীয় ব্যাংকগুলোর বোর্ড সদস্যরা শাসকগোষ্ঠীর নিশানায় ছিলেন বলেও তিনি দাবি করেছেন।

গভর্নর ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেন, বোর্ড সদস্যদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে হোটেলসহ বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যেতেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। তারা অপহৃতদের অস্ত্র ঠেকিয়ে এস আলমের কাছে শেয়ার বেচতে এবং পরিচালকের পদ ছাড়তে বলতেন। একের পর এক ব্যাংকের ক্ষেত্রে তারা এটা করেছে।

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের সাবেক সিইও মোহাম্মদ আবদুল মান্নান ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেছেন, জোর করে ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য তাকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছিল। ২০১৩ সাল থেকে তিনি তৎকালীন সরকারের ঘনিষ্ঠ লোকজনের চাপের মুখে ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পছন্দের লোককে বোর্ডে বসানো এবং ব্যাংকের একজন বিদেশি পরিচালকের হোটেল কক্ষে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনের তল্লাশির কথাও মান্নান বলেছেন।

তিনি বলেন, ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে বোর্ড মিটিংয়ে যাওয়ার পথে তাকে আটকানো হয় এবং একজন ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করতে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর তাকে পদত্যাগে বাধ্য করার জন্য পুরো এক কর্মদিবস সেখানে আটকে রাখা হয়।

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তরফে মান্নানকে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের প্রশাসকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এই ব্যাংকার ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেন, তারা ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে ব্যাংকের চিঠিপত্র তৈরি করেছিল। আমাকে একটি পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করতে হয়েছে।

এস আলম গত এক দশকে ব্যাংক খাতে নিয়ন্ত্রণ বিস্তৃত করেছে। গ্রুপটির ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকসহ সাতটি ব্যাংকে তাদের উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ রয়েছে।

আহসান এইচ মনসুর ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেন, শেখ হাসিনার আমলে নিয়ন্ত্রণ নেওয়া এ রকম প্রায় এক ডজন ব্যাংকের (বেশিরভাগই দেউলিয়া) নিরীক্ষা শেষে চুরি যাওয়া অর্থ উদ্ধারের লক্ষ্য ঠিক করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আমরা এই নিরীক্ষাকে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ আদালতে প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করতে চাই।

শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর ওই ব্যাংকগুলোর শেয়ার হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। আহসান মনসুর বলেন, ওই ব্যাংকগুলোর শেয়ার এখন ভালো মানের জাতীয় বা আন্তর্জাতিক কৌশলগত বিনিয়োগকারীদের কাছে বিক্রি করার পরিকল্পনা করছে কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি দুর্দশাগ্রস্ত সম্পদ ব্যবস্থাপনা বা অবসায়নে একটি সম্পদ ব্যবস্থাপনা ফার্ম গঠনের পরিকল্পনা আছে।

দুবাই, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাজ্য বা অন্য জায়গায় এসব ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডারদের নামে থাকা সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে আন্তর্জাতিক আইনি সংস্থাগুলোকে নিয়োগ দেওয়ার কথাও সাক্ষাৎকারে বলেছেন গভর্নর।