ঠাকুরগাঁওয়ে এক বিদ্যালয়ে ২১ জন শিক্ষক-কর্মচারীর মধ্যে ১৬ জনই প্রধান শিক্ষকের আত্মীয়-স্বজন বলে জানা গেছে। এ নিয়ে প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমানের বিরুদ্ধে নিয়োগ দুর্নীতির মাধ্যমে বিদ্যালয়টিতে ‘পরিবারতন্ত্র’ তৈরি করার অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয়রা জানান, প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত ৪ জন শিক্ষক-কর্মচারী বাইরের। বাকিরা সকলেই প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমানের নিকটাত্মীয়।
দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে এই স্কুলে থাকা প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমান ক্ষমতার অপব্যবহার করে এমন নিয়োগ দিয়েছেন বলে অভিযোগ আছে।
জানা গেছে, ঠাকুরগাঁও হরিপুর উপজেলার তোররা বাজারে অবস্থিত তোররা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়টি ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০০ সালে এটি এমপিওভুক্ত হয়। নিজের আধিপত্য বিস্তারের জন্য কোনও নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে প্রধান শিক্ষক নিজের ভাই, স্ত্রী, মামাশ্বশুর, ভাইয়ের ফুফু-শাশুড়ি ও ভাগ্নেসহ আত্মীয়দের বিভিন্ন পদে নিয়োগ দেন।
বর্তমানে এ বিদ্যালয়ে শিক্ষক-কর্মচারী মিলিয়ে মোট ২১ জন কর্মরত রয়েছেন। এরমধ্যে সহকারী প্রধান শিক্ষক মহসিন আলী লুৎফর রহমানের চাচাতো ভাই, সহকারী শিক্ষক পারভিন আকতার প্রধান শিক্ষকের স্ত্রী, সহকারী মৌলভী আবেদ আলী লুৎফর রহমানের চাচাতো ভাই, সহকারী শিক্ষক মসলিম উদ্দিনও চাচাতো ভাই, সহকারী শিক্ষক সাবিনা খাতুন চাচাতো বোন, সহকারী শিক্ষক জয়নাল আবেদিন আপন চাচাতো ভগ্নীপতি, কম্পিউটার শিক্ষক জসিমউদ্দিন চাচাতো ভাই, সহকারী শিক্ষক (শরীরচর্চা) আমিনুল ইসলাম মামাশ্বশুর, কৃষি শিক্ষক আব্দুর রউফ আত্মীয়, সহকারী শিক্ষক (গণিত) একরামুল আত্মীয়, সহকারী শিক্ষক আলাউদ্দিন ভাগ্নে, সহকারী শিক্ষক মোছা. হোসনেয়ারা লুৎফর রহমানের চাচাতো ভাইয়ের ফুফু শাশুড়ি, সহকারী শিক্ষক জসীম উদ্দিন চাচাতো বোনের চাচা শ্বশুর, অফিস সহকারী ইউসুফ লুৎফর রহমানের চাচাতো ভাই, পিয়ন আব্দুস সালাম লুৎফর রহমানের ভাগ্নে, আর আয়া কহিনুরও আত্মীয়। এমএলএস মসিউর রহমান প্রধান শিক্ষকের বোনের ছেলে, এবং অফিস সহায়ক কাঞ্চন লুৎফর রহমানের ছোট ভাই। পরিচ্ছন্নতা-কর্মী আকতারুলও নিকটাত্মীয়।
কয়েকদিন আগে নিয়োগ বিধির ব্যত্যয় ঘটিয়ে দুই আত্মীয়কে চতুর্থ শ্রেণির পদে চাকরি দেন লুৎফর রহমান, যা বাতিলের দাবি জানিয়ে ঠাকুরগাঁও আদালতে মামলা করেছিলেন বিদ্যালয়টির সাবেক সভাপতি বেলাল উদ্দিন।
তবে এসব অভিযোগের ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমান বলেন, আমি যা করেছি নিয়ম মেনে করেছি। নিজের পরিবারের সদস্যদের মধ্য থেকে নিয়োগ দেওয়ার ব্যাপারে কথা বললে তিনি কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার রায়হানুল ইসলাম মিয়া বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তোররা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আরিফুজ্জামান জানান, তারা নীতিমালা ও নিয়মনীতি মেনে নিয়োগ দিয়েছেন কিনা তা আমরা খতিয়ে দেখবো। তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।