মীরসরাইয়ের নিম্নাঞ্চলের পানি নামেনি, বসবাসের অনুপযোগী বসতবাড়ি

  • নীলকন্ঠ ডেস্ক: নীলকন্ঠ ডেস্ক:
  • আপডেট সময় : ০৭:৪২:২৩ পূর্বাহ্ণ, বুধবার, ২৮ আগস্ট ২০২৪
  • ৭১৪ বার পড়া হয়েছে

টানা সাত দিন চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে ভয়াবহ বন্যায় উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের পানি এখনও পুরোপুরি নামেনি। বন্যায় উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভার অন্তত দুই লাখ মানুষ কার্যত পানিবন্দি হয়ে পড়েছিল। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অসংখ্য কাঁচা ও মাটির ঘর। দুই দিন ধরে অধিকাংশ ঘর থেকে পানি নামলেও উঠানে ও গ্রামীণ সড়কে পানি থাকায় স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরতে পারছে না এখানকার মানুষ।

জানা গেছে, গত বুধবার (২১ আগস্ট) থেকে উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের প্রায় ১৬৫টি গ্রাম বন্যার পানি প্লাবিত হয়। প্রথম দিকে উপজেলার ১৮২টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ গবাদিপশু নিয়ে আশ্রয় নেয়। এরপর গত সোমবার থেকে আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়তে শুরু করে লোকজন। তবে এখনও প্রায় ১০ হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে এবং আরও প্রায় ২০ হাজার মানুষ আত্মীয়-পরিজনের বাড়িতে নিরাপদ আশ্রয়ে রয়েছে।

মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) বেলা ৩টার দিকে উপজেলার আবুরহাট উচ্চবিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, এখানে বর্তমানে নারী-বৃদ্ধ ও শিশু মিলে ৭০ জন রয়েছেন। তবে গত কয়েক দিন আগে এখানে প্রায় ১ হাজার লোক আশ্রয় নেয়।

ওই দিন উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের পশ্চিম জোয়ার ও অলিনগর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, এখানে বাড়ি-ঘর থেকে বানের পানি নেমে গেছে। এখানকার মানুষ স্বাভাবিক জীবনে ফেরার জন্য লড়াই করছেন। তবে পশ্চিম জোয়ার গ্রামের অধিকাংশ কাঁচা ও মাটির ঘর মাটিতে মিশে গেছে। এখানে ভেসে গেছে শত শত গবাদিপশু।

গ্রামের বাসিন্দা জহির উদ্দিন জানান, বন্যার শুরুতেই তলিয়ে যায় করেরহাট ইউনিয়নের পশ্চিম জোয়ার গ্রাম। এ গ্রাম ফেনী নদীর পাশে হওয়ার দরুন পানি তীব্রতাও বেশি ছিল। এখানে দরিদ্র পরিবারগুলোর সহায়-সম্বল বলতে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই।

মঙ্গলবার পর্যন্ত ওচমানপুর, ইছাখালী, কাটাছরা, দুর্গাপুর, মিঠানালা, ধুম ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে এখনও প্রায় ৩ ফুট পানি রয়েছে। এসব ইউনিয়নে গ্রামীণ সড়ক, পুকুর, পোলট্রি খামার, কৃষিজমি এখনও পানিতে নিমজ্জিত।

মীরসরাই উপজেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সোমবার সকাল থেকে বিভিন্ন এলাকার বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে। তবে উপজেলার ওচমানপুর, ইছাখালী, কাটাছরা, দুর্গাপুর, মিঠানালা, ধুম ইউনিয়নের কিছু গ্রামে এখনও বন্যার পানি রয়েছে। তবে বাড়ি ঘর থেকে পানি নেমে গেছে। গ্রামীণ কিছু সড়কে এখনও পানি আছে।

মীরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রশাসক মাহফুজা জেরিন জানান, বন্যা পরিস্থিতি আগামী দু-এক দিনের মধ্যে স্বাভাবিক হবে বলে আমরা আশা করছি। এখন আমরা জনস্বাস্থ্য ও পুনর্বাসন নিয়ে পরিকল্পনা করছি। বন্যাকবলিত মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে আমরা ব্যাপক কাজ করছি। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সহায়তা নিয়ে গ্রামে গ্রামে মেডিক্যাল টিম গঠন করে শিশু-নারী ও বৃদ্ধদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

মীরসরাইয়ের নিম্নাঞ্চলের পানি নামেনি, বসবাসের অনুপযোগী বসতবাড়ি

আপডেট সময় : ০৭:৪২:২৩ পূর্বাহ্ণ, বুধবার, ২৮ আগস্ট ২০২৪

টানা সাত দিন চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে ভয়াবহ বন্যায় উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের পানি এখনও পুরোপুরি নামেনি। বন্যায় উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভার অন্তত দুই লাখ মানুষ কার্যত পানিবন্দি হয়ে পড়েছিল। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অসংখ্য কাঁচা ও মাটির ঘর। দুই দিন ধরে অধিকাংশ ঘর থেকে পানি নামলেও উঠানে ও গ্রামীণ সড়কে পানি থাকায় স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরতে পারছে না এখানকার মানুষ।

জানা গেছে, গত বুধবার (২১ আগস্ট) থেকে উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের প্রায় ১৬৫টি গ্রাম বন্যার পানি প্লাবিত হয়। প্রথম দিকে উপজেলার ১৮২টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ গবাদিপশু নিয়ে আশ্রয় নেয়। এরপর গত সোমবার থেকে আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়তে শুরু করে লোকজন। তবে এখনও প্রায় ১০ হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে এবং আরও প্রায় ২০ হাজার মানুষ আত্মীয়-পরিজনের বাড়িতে নিরাপদ আশ্রয়ে রয়েছে।

মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) বেলা ৩টার দিকে উপজেলার আবুরহাট উচ্চবিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, এখানে বর্তমানে নারী-বৃদ্ধ ও শিশু মিলে ৭০ জন রয়েছেন। তবে গত কয়েক দিন আগে এখানে প্রায় ১ হাজার লোক আশ্রয় নেয়।

ওই দিন উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের পশ্চিম জোয়ার ও অলিনগর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, এখানে বাড়ি-ঘর থেকে বানের পানি নেমে গেছে। এখানকার মানুষ স্বাভাবিক জীবনে ফেরার জন্য লড়াই করছেন। তবে পশ্চিম জোয়ার গ্রামের অধিকাংশ কাঁচা ও মাটির ঘর মাটিতে মিশে গেছে। এখানে ভেসে গেছে শত শত গবাদিপশু।

গ্রামের বাসিন্দা জহির উদ্দিন জানান, বন্যার শুরুতেই তলিয়ে যায় করেরহাট ইউনিয়নের পশ্চিম জোয়ার গ্রাম। এ গ্রাম ফেনী নদীর পাশে হওয়ার দরুন পানি তীব্রতাও বেশি ছিল। এখানে দরিদ্র পরিবারগুলোর সহায়-সম্বল বলতে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই।

মঙ্গলবার পর্যন্ত ওচমানপুর, ইছাখালী, কাটাছরা, দুর্গাপুর, মিঠানালা, ধুম ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে এখনও প্রায় ৩ ফুট পানি রয়েছে। এসব ইউনিয়নে গ্রামীণ সড়ক, পুকুর, পোলট্রি খামার, কৃষিজমি এখনও পানিতে নিমজ্জিত।

মীরসরাই উপজেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সোমবার সকাল থেকে বিভিন্ন এলাকার বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে। তবে উপজেলার ওচমানপুর, ইছাখালী, কাটাছরা, দুর্গাপুর, মিঠানালা, ধুম ইউনিয়নের কিছু গ্রামে এখনও বন্যার পানি রয়েছে। তবে বাড়ি ঘর থেকে পানি নেমে গেছে। গ্রামীণ কিছু সড়কে এখনও পানি আছে।

মীরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রশাসক মাহফুজা জেরিন জানান, বন্যা পরিস্থিতি আগামী দু-এক দিনের মধ্যে স্বাভাবিক হবে বলে আমরা আশা করছি। এখন আমরা জনস্বাস্থ্য ও পুনর্বাসন নিয়ে পরিকল্পনা করছি। বন্যাকবলিত মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে আমরা ব্যাপক কাজ করছি। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সহায়তা নিয়ে গ্রামে গ্রামে মেডিক্যাল টিম গঠন করে শিশু-নারী ও বৃদ্ধদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে।