শিরোনাম :
Logo শেরপুরে ন্যাশনাল লাইফ ইনস্যুরেন্সের ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ৫ লক্ষ টাকার চেক প্রদান Logo পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালো ৬ বছরের শিশু জিদান Logo কুয়েট শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে নোবিপ্রবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ। Logo ড. ইউনূসের নামে দুদকের মামলা বাতিল Logo কৃষিবিদদের বৈষম্য নিরসনে ৫ দফা দাবি প্রদান রাবি শিক্ষার্থীদের Logo বেনজীরের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের ‘রেড নোটিশ’ জারি Logo শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনার পরও অনশনে অনড় কুয়েট শিক্ষার্থীরা Logo জাল ভিসা নিয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দূতাবাসের Logo জাল ভিসা নিয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দূতাবাসের Logo ইন্টারনেটের খরচ কমানোর ঘোষণা, জানা গেল কোন স্তরে কমছে কত

হরিণের রক্ত ও দুধ খেয়ে বরফাঞ্চলে থাকে এই নৃগোষ্ঠি

  • আপডেট সময় : ০৪:০৮:৩৭ অপরাহ্ণ, শুক্রবার, ২ অক্টোবর ২০২০
  • ৮২৪ বার পড়া হয়েছে

নিউজ ডেস্ক:

পূর্ব আফ্রিকার জন্মভূমি ছেড়ে আদি মানুষেরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে আনুমানিক ৮০ হাজার বছর আগে। এমনই মত নৃ-বিজ্ঞানীদের।

এরপর কালের পরিক্রমায় তাদের উত্তরসূরীরা দক্ষিণ মেরু ছাড়া পৃথিবীর আর সব স্থলভাগেই আধিপত্য বিস্তার করেছিল। মানুষ ছাড়া খুব কম সংখ্যক প্রজাতির প্রাণীই এভাবে পুরো বিশ্বজুড়ে বসতি স্থাপন করেছে।

তবে অনবদ্য এই অর্জনের জন্য আমাদের পূর্বসূরীদের প্রচুর পরিশ্রম, ভোগান্তি এবং আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। অতিক্রম করতে হয়েছে খরস্রোতা নদী, দুর্গম পর্বতমালা এবং উত্তাল মহাসাগরের মতো অনতিক্রম্য সব বাধা।

খাপ খাইয়ে নিতে হয়েছে বরফ জমা শীত এবং ফোস্কা ফেলার মতো উত্তপ্ত আবহাওয়ার সঙ্গে। বৈরী প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের এই মানিয়ে নেবার সক্ষমতার এক অনুপম নিদর্শন রেখে চলেছে নেনেট নামক ঐতিহ্যবাহী একটি গোত্রের সদস্যরা।

সুমেরু বৃত্তের অন্তর্ভূক্ত উত্তর পশ্চিম রাশিয়ার তুন্দ্রাভূমিতে বসবাসকারী সেই নেনেট গোত্রের মানুষ সম্পর্কে আজ বিস্তারিত জানাবো। বিশ্ব মানচিত্রে নেনেট গোত্রের আবির্ভাব সম্পর্কে জানতে হলে আমাদের এখন থেকে প্রায় সাড়ে তিন হাজার বছর আগে ফিরে যেতে হবে।

ওই সময় প্রায় ২০০০ বছর ধরে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছিল। যার ফলে এখন থেকে প্রায় সাড়ে ৬০০০ বছর আগে সুচিত্রা এক সংক্ষিপ্ত বরফ যুগের প্রভাব থেকে পৃথিবীর ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসছিল।

এর ধারাবাহিকতায় ইউরোপ এবং এশিয়া মহাদেশের উত্তরাঞ্চলে বিস্তীর্ণ এলাকায় জমাট বরফের পুরো স্থল গলে নিচের স্থলভাগ পুনরায় সূর্যের দেখা পায়। ফলে মানুষের জন্যই অঞ্চলটি নতুন করে শিকার চাষাবাদ এবং বসতি স্থাপনের উপযোগী হয়ে ওঠে।

প্রকৃতির এই উপহারের সুবিধা নিতে উত্তর পূর্ব ইউরোপের কিছু এলাকা থেকে কয়েকটি গোত্র এই তুন্দ্রা এলাকায় বসতি স্থাপন করে। সেখানে অব এবং ইয়েনেসি নদীর অববাহিকায় বসতি স্থাপনকারী।

সেই অভিবাসীদের বংশধররাই বর্তমানে নেনেট হিসেবে পরিচিত। ২০০০ বছরের বেশি সময় ধরে এই মানুষগুলো বংশপরম্পরায় বহির্বৃত্ত এলাকায় বসবাস করছেন।

খ্রিষ্টাব্দ ত্রয়োদশ শতকে এই গোত্র জনপথগুলো, প্রথমে মঙ্গলিও এবং পরে রুশসাম্রাজ্য প্রভাববলয় প্রবেশ করতে বাধ্য হয়। অবশ্য বছরের অধিকাংশ সময় শীতল আবহাওয়ার কারণে জনপদগুলো প্রাকৃতিক দূর্গের মতো সুরক্ষিত থাকাই মঙ্গল এবং রুশদের সেই সাম্রাজ্যবাদী তৎপরতা খুব একটা সফলের মুখ দেখেনি।

শেষ পর্যন্ত বিংশ শতকে ভারি আগ্নেয়াস্ত্রের সজ্জিত সোভিয়েত গোলন্তাজ বাহিনীর হামলার মুখে নিজেদের পরাধীন হিসেবে মেনে নিয়ে ছিলেন নেনেট গোত্রের সদস্যরা। সোভিয়েত সাম্রাজ্যবাদী নীতির কারণে বিংশ শতকে প্রায় পুরোটা জুড়েই সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক আগ্রাসনেরও শিকার হয় নেনেটরা।

বংশপরম্পরায় রেইনডিয়ার জাতীয় হরিণ লালন পালনের মাধ্যমে জীবিকা উপার্জনকারী মানুষদের সেই পেশা ছেড়ে যৌথ-খামারে কৃষি কাজ বেছে নিতে বাধ্য করা হয়। এর ফলে নেনেট গোত্রের কয়েক হাজার সদস্য আরো উত্তরে দুর্গম অরণ্যে চলে গিয়েছিলেন। এদের বংশধররা বর্তমানে ফরেস্ট নেনেট নামে পরিচিত।

আর যারা তুন্দ্রা এলাকায় থেকে গিয়েছিলেন, তাদের নাম দেয়া হয়েছিল তুন্দ্রা নেনেট। এই দুই উপগোত্রের সমাজ ব্যবস্থা এবং সংস্কৃতিতে অসংখ্য মিল থাকলেও, মনের ভাব প্রকাশে ব্যবহৃত ভাষা আলাদা হয়ে গেছে।

যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার আদিবাসীদের রেইনডিয়ার ইউরোপীয় উপনিবেশিকদের হাতে যে ধ্বংসলীলা শিকার হয়েছিলেন, এই নেনেট রুশ সাম্রাজ্যবাদীদের দ্বারা প্রায় একই মাত্রায় নিপীড়ন সহ্য করে।

তবে যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার মতো রাশিয়ায় কখনো মতো প্রকাশের স্বাধীনতা তেমন না থাকায় গণহত্যার এই বর্বর অধ্যায়টি বিশ্বের অধিকাংশ মানুষের অজানাই রয়ে গেছে।

ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

শেরপুরে ন্যাশনাল লাইফ ইনস্যুরেন্সের ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ৫ লক্ষ টাকার চেক প্রদান

হরিণের রক্ত ও দুধ খেয়ে বরফাঞ্চলে থাকে এই নৃগোষ্ঠি

আপডেট সময় : ০৪:০৮:৩৭ অপরাহ্ণ, শুক্রবার, ২ অক্টোবর ২০২০

নিউজ ডেস্ক:

পূর্ব আফ্রিকার জন্মভূমি ছেড়ে আদি মানুষেরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে আনুমানিক ৮০ হাজার বছর আগে। এমনই মত নৃ-বিজ্ঞানীদের।

এরপর কালের পরিক্রমায় তাদের উত্তরসূরীরা দক্ষিণ মেরু ছাড়া পৃথিবীর আর সব স্থলভাগেই আধিপত্য বিস্তার করেছিল। মানুষ ছাড়া খুব কম সংখ্যক প্রজাতির প্রাণীই এভাবে পুরো বিশ্বজুড়ে বসতি স্থাপন করেছে।

তবে অনবদ্য এই অর্জনের জন্য আমাদের পূর্বসূরীদের প্রচুর পরিশ্রম, ভোগান্তি এবং আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। অতিক্রম করতে হয়েছে খরস্রোতা নদী, দুর্গম পর্বতমালা এবং উত্তাল মহাসাগরের মতো অনতিক্রম্য সব বাধা।

খাপ খাইয়ে নিতে হয়েছে বরফ জমা শীত এবং ফোস্কা ফেলার মতো উত্তপ্ত আবহাওয়ার সঙ্গে। বৈরী প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের এই মানিয়ে নেবার সক্ষমতার এক অনুপম নিদর্শন রেখে চলেছে নেনেট নামক ঐতিহ্যবাহী একটি গোত্রের সদস্যরা।

সুমেরু বৃত্তের অন্তর্ভূক্ত উত্তর পশ্চিম রাশিয়ার তুন্দ্রাভূমিতে বসবাসকারী সেই নেনেট গোত্রের মানুষ সম্পর্কে আজ বিস্তারিত জানাবো। বিশ্ব মানচিত্রে নেনেট গোত্রের আবির্ভাব সম্পর্কে জানতে হলে আমাদের এখন থেকে প্রায় সাড়ে তিন হাজার বছর আগে ফিরে যেতে হবে।

ওই সময় প্রায় ২০০০ বছর ধরে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছিল। যার ফলে এখন থেকে প্রায় সাড়ে ৬০০০ বছর আগে সুচিত্রা এক সংক্ষিপ্ত বরফ যুগের প্রভাব থেকে পৃথিবীর ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসছিল।

এর ধারাবাহিকতায় ইউরোপ এবং এশিয়া মহাদেশের উত্তরাঞ্চলে বিস্তীর্ণ এলাকায় জমাট বরফের পুরো স্থল গলে নিচের স্থলভাগ পুনরায় সূর্যের দেখা পায়। ফলে মানুষের জন্যই অঞ্চলটি নতুন করে শিকার চাষাবাদ এবং বসতি স্থাপনের উপযোগী হয়ে ওঠে।

প্রকৃতির এই উপহারের সুবিধা নিতে উত্তর পূর্ব ইউরোপের কিছু এলাকা থেকে কয়েকটি গোত্র এই তুন্দ্রা এলাকায় বসতি স্থাপন করে। সেখানে অব এবং ইয়েনেসি নদীর অববাহিকায় বসতি স্থাপনকারী।

সেই অভিবাসীদের বংশধররাই বর্তমানে নেনেট হিসেবে পরিচিত। ২০০০ বছরের বেশি সময় ধরে এই মানুষগুলো বংশপরম্পরায় বহির্বৃত্ত এলাকায় বসবাস করছেন।

খ্রিষ্টাব্দ ত্রয়োদশ শতকে এই গোত্র জনপথগুলো, প্রথমে মঙ্গলিও এবং পরে রুশসাম্রাজ্য প্রভাববলয় প্রবেশ করতে বাধ্য হয়। অবশ্য বছরের অধিকাংশ সময় শীতল আবহাওয়ার কারণে জনপদগুলো প্রাকৃতিক দূর্গের মতো সুরক্ষিত থাকাই মঙ্গল এবং রুশদের সেই সাম্রাজ্যবাদী তৎপরতা খুব একটা সফলের মুখ দেখেনি।

শেষ পর্যন্ত বিংশ শতকে ভারি আগ্নেয়াস্ত্রের সজ্জিত সোভিয়েত গোলন্তাজ বাহিনীর হামলার মুখে নিজেদের পরাধীন হিসেবে মেনে নিয়ে ছিলেন নেনেট গোত্রের সদস্যরা। সোভিয়েত সাম্রাজ্যবাদী নীতির কারণে বিংশ শতকে প্রায় পুরোটা জুড়েই সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক আগ্রাসনেরও শিকার হয় নেনেটরা।

বংশপরম্পরায় রেইনডিয়ার জাতীয় হরিণ লালন পালনের মাধ্যমে জীবিকা উপার্জনকারী মানুষদের সেই পেশা ছেড়ে যৌথ-খামারে কৃষি কাজ বেছে নিতে বাধ্য করা হয়। এর ফলে নেনেট গোত্রের কয়েক হাজার সদস্য আরো উত্তরে দুর্গম অরণ্যে চলে গিয়েছিলেন। এদের বংশধররা বর্তমানে ফরেস্ট নেনেট নামে পরিচিত।

আর যারা তুন্দ্রা এলাকায় থেকে গিয়েছিলেন, তাদের নাম দেয়া হয়েছিল তুন্দ্রা নেনেট। এই দুই উপগোত্রের সমাজ ব্যবস্থা এবং সংস্কৃতিতে অসংখ্য মিল থাকলেও, মনের ভাব প্রকাশে ব্যবহৃত ভাষা আলাদা হয়ে গেছে।

যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার আদিবাসীদের রেইনডিয়ার ইউরোপীয় উপনিবেশিকদের হাতে যে ধ্বংসলীলা শিকার হয়েছিলেন, এই নেনেট রুশ সাম্রাজ্যবাদীদের দ্বারা প্রায় একই মাত্রায় নিপীড়ন সহ্য করে।

তবে যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার মতো রাশিয়ায় কখনো মতো প্রকাশের স্বাধীনতা তেমন না থাকায় গণহত্যার এই বর্বর অধ্যায়টি বিশ্বের অধিকাংশ মানুষের অজানাই রয়ে গেছে।