গত শতাব্দীর ষাটের দশক থেকেই ইসরায়েলের নিজস্ব পারমাণবিক অস্ত্র থাকার বিষয়টি সর্বজনবিদিত হলেও, দেশটি প্রকাশ্যে তা কখনও স্বীকার করেনি। বরং ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কাছাকাছি রয়েছে দাবি করে সম্প্রতি দেশটিকে লক্ষ্য করে হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। এর জবাবে ইরানও পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা অব্যাহত রেখেছে, যা দুই দেশের মধ্যে সংঘাত আরও বাড়াচ্ছে।
শান্তি ও নিরাপত্তা বিষয়ক স্পেনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ডেলাস সেন্টার ফর পিস স্টাডিজের গবেষক ও পদার্থবিজ্ঞানী হাভিয়ের বোহিগাস বিবিসি মুন্ডোকে বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলই একমাত্র দেশ যার কাছে পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) গত মার্চ মাসে জানিয়েছিল, ইরান এখন পর্যন্ত ৬০ শতাংশ বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। ৯০ শতাংশের ওপরে অর্জন করলে পারমাণবিক বোমা তৈরি করা সম্ভব বলে বোহিগাস উল্লেখ করেন।
যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ইরানসহ অন্যান্য দেশগুলো পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তিতে (এনপিটি) স্বাক্ষর করলেও ইসরায়েল এখনও সই করেনি। ফলে চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর মতো একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর আইএইএ-কে তাদের সম্ভাব্য পারমাণবিক স্থাপনাগুলো পরিদর্শন করতে তারা বাধ্য নয়। যদিও ইসরায়েল নিজেই আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার একজন সদস্য।
যেহেতু দেশটি পরিদর্শনের অনুমতি দেয় না, সে কারণে তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পর্কে খুব একটা তথ্যও পাওয়া যায় না। যা তথ্য জানা যায়, সেগুলো মূলত ফাঁস হওয়া তথ্য, মার্কিন প্রতিরক্ষা ও জ্বালানি বিভাগের প্রতিবেদন এবং পারমাণবিক কর্মসূচি পর্যবেক্ষণকারী আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর গবেষণা থেকে প্রাপ্ত। ইসরায়েলের সাবেক পরমাণু প্রকৌশলী মোর্দেচাই ভানুনুর সাক্ষাৎকার থেকেও এ বিষয়ে ধারণা পাওয়া যায়, যিনি ১৯৮৬ সালে ইসরায়েলের পারমাণবিক কর্মসূচির তথ্য ফাঁস করে বহু বছর জেল খেটেছেন।
ইসরায়েলের নেতারা পারমাণবিক কর্মসূচির বিষয়ে তথ্য প্রকাশিত হলেও নিজ মুখে কখনও সেটি স্বীকার করেননি, আবার অস্বীকারও করতে দেখা যায়নি। এক্ষেত্রে তারা বরং অস্পষ্টতা রাখার নীতি মেনে চলেন। পারমাণবিক অস্ত্রের বিষয়ে ইসরায়েলের সরকারের এই নীতিকে বলা হয় “আমিমুত”, যার অর্থ “ইচ্ছাকৃত অস্পষ্টতা”। অধ্যাপক অ্যাভনার কোহেন উল্লেখ করেছেন যে, পারমাণবিক অস্ত্রের বিষয়ে অস্বচ্ছতার এই নীতি ইসরায়েলের সর্বশ্রেষ্ঠ কৌশলগত এবং কূটনৈতিক অর্জন।
পারমাণবিক ওয়ারহেডের সংখ্যা
১৯৮৬ সালে ভানুনু জানিয়েছিলেন যে, ওই সময় ইসরায়েলের কাছে আনুমানিক ১০০ থেকে ২০০টি পারমাণবিক ‘ওয়ারহেড’ ছিল। তবে সুইডেনভিত্তিক পরমাণু অস্ত্র পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মতে, বর্তমানে ইসরায়েলের কাছে ৯০টির মতো ওয়ারহেড থাকতে পারে। এসব ওয়ারহেড তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় প্লুটোনিয়াম দক্ষিণ ইসরায়েলের ডিমোনা শহরের কাছে অবস্থিত নেগেভ পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্রের চুল্লিতে উৎপাদিত হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। এই চুল্লিও আইএইএ’র নজরদারির বাইরে রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা পরমাণু কেন্দ্রগুলো পর্যবেক্ষণ করে এবং ইউরেনিয়াম বা প্লুটোনিয়াম উৎপাদনের আনুমানিক পরিমাণ গণনার মাধ্যমে ধারণা করে থাকে, কতগুলো পারমাণবিক অস্ত্র থাকতে পারে। বোহিগাস জানান, ইসরায়েলের মতো উত্তর কোরিয়ার ক্ষেত্রেও একই পদ্ধতি প্রয়োগ করে তাদের ‘পারমাণবিক ওয়ারহেড’ সম্পর্কে একটি ধারণা পাওয়া গেছে, যা প্রায় ৫০টি।