চাঁদের মাটিতে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে পা রাখবেন রুথবা ইয়াসমিন!

  • নীলকন্ঠ অনলাইন নীলকন্ঠ অনলাইন
  • আপডেট সময় : ১১:৫৬:১২ পূর্বাহ্ণ, বুধবার, ১১ জুন ২০২৫
  • ৭১০ বার পড়া হয়েছে
বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম মহাকাশ অভিযানে অংশ নিচ্ছেন এক নারী। তাও সরাসরি চাঁদের পথে, নারী ক্রু নিয়ে। তিনি ঢাকার রুথবা ইয়াসমিন। বয়সে তরুণ, স্বপ্নে বিশাল। মহাকাশ অভিযানে তার এই যাত্রা শুধু ব্যক্তিগত অর্জন নয়, বাংলাদেশের পতাকা চাঁদের মাটিতে পৌঁছে দেয়ারও প্রথম পদক্ষেপ।

২০২৫ সালের ১৬ এপ্রিল, আন্তর্জাতিক মহাকাশ গবেষণা সংস্থা Space Nation ঘোষণা দেয় তাদের Moon Pioneer মিশনের। এই অভিযানে অংশ নেয়া সবাই নারী। তাদের সঙ্গে কেবল একজন পুরুষ। সে দলেই জায়গা করে নিয়েছেন বাংলাদেশের রুথবা ইয়াসমিন।

স্পেস নেশনের মিশন ঘোষণার দুই দিন আগে ১৪ এপ্রিল, ব্লু অরিজিনের সব নারী ক্রু নিয়ে মহাকাশে পাড়ি জমান পপ তারকা কেটি পেরি। খুব কাছাকাছি সময়ে নারী নিয়ন্ত্রিত একাধিক মহাকাশ মিশন বার্তা দিচ্ছে, নারীরা এখন শুধু মহাকাশে প্রবেশ করছে না, বরং সেখানে জায়গা করে নিচ্ছে।

রুথবার মহাকাশ যাত্রার স্বপ্ন বুনন শুরু হয় শৈশবে। ঢাকার স্কলাস্টিকা স্কুল থেকে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। ২০১৪ সালে Mount Holyoke College থেকে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক শেষ করে ডিগ্রি নেন গণিতে। তবে কোভিড মহামারি তার মহাকাশ ছোঁয়ার স্বপ্নে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। ২০২১ সালেই দেশে ফিরে আসেন রুথবা। তবে থেমে না থেকে রুথবা চালিয়ে যান গবেষণা। United International University থেকে ডেটা সায়েন্সে মাস্টার্স করেন।

২০২৪ সালে রুথবা ফের পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। University of South Alabama থেকে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং–এ স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। আর এখানেই হাতছানি দেয় তার স্বপ্ন পূরণের ঝলক। বৈজ্ঞানিক গবেষণা থেকে মহাকাশ প্রশিক্ষণের সুযোগ পান রুথবা।

তার গবেষণা থিসিসের বিষয় ছিল স্পেস ওয়েদার বা মহাকাশের আবহাওয়া। বিশেষ করে জিওম্যাগনেটিক ঝড় যা পৃথিবীর ম্যাগনেটোস্ফিয়ারকে প্রভাবিত করে। এই থিসিসই হয়ে ওঠে তার মহাকাশ অভিযাত্রার টার্নিং পয়েন্ট। রুথবা বলেন, ‘আমার ভিতরে এক গভীর আকাঙ্ক্ষা ছিল আমার ফিজিক্স ডিগ্রিকে সম্পূর্ণভাবে কাজে লাগানোর। সেখান থেকেই শুরু হয় মহাকাশে পা রাখার স্বপ্ন।’

Space Nation-এর Moon Pioneer প্রশিক্ষণে রূথবা দুটি গুরুত্বপূর্ণ পর্বে অংশ নেন। প্রথম রাউন্ডে তিনি ছিলেন Moon Base EVA Specialist। যিনি মক স্পেসস্যুট পরে চাঁদের পৃষ্ঠে অভিযানে অংশ নেন। দ্বিতীয় রাউন্ডে Mission Control Engineer হিসেবে, Moon Base দলের প্রত্যেক সদস্যকে দূর থেকে নির্দেশনা দিয়ে সফলভাবে নিরাপদে ফেরত আনা ছিল রুথবার কাজ।

দুটি পর্বেই দারুণ নৈপুণ্য ও দক্ষতা দেখিয়ে সফল হন রুথবা। তার মহাকাশ অনুপ্রেরণা, NASA অ্যাস্ট্রোনট সুনিতা উইলিয়ামস। স্পেসওয়াকে রেকর্ডধারী সুনিতা দীর্ঘতম সময় মহাকাশে কাটানো একমাত্র নারী। রুথবা বলেন, ‘মাহাকাশ অভিযানে নারীদের অংশগ্রহণ এখনো সীমিত। মহাকাশ শিল্পে মাত্র ২০ শতাংশ নারী, আর অ্যাস্ট্রোনট মাত্র ১১ শতাংশ। এটা বদলাতে হবে।’

মহাকাশ ছোয়ার স্বপ্ন দেখা হাজারও বাঙালি তরুণের পথপ্রদর্শক হতে পারেন রুথবা। তিনি বলেন, ‘যারা মহাকাশ নিয়ে স্বপ্ন দেখে, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিতে ভালো ভিত্তি তৈরি করুক। তবে কেবল শিক্ষাগত ডিগ্রিই যথেষ্ট নয়। দরকার কৌতূহল, সাহস, সমস্যা সমাধানে দক্ষতা এবং নিজের স্বকীয়তা। মহাকাশ এখন শুধুই পশ্চিমাদের মাঠ নয় বরং বাংলাদেশ থেকেও সেখানে পৌঁছানো সম্ভব।’

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

চাঁদের মাটিতে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে পা রাখবেন রুথবা ইয়াসমিন!

আপডেট সময় : ১১:৫৬:১২ পূর্বাহ্ণ, বুধবার, ১১ জুন ২০২৫
বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম মহাকাশ অভিযানে অংশ নিচ্ছেন এক নারী। তাও সরাসরি চাঁদের পথে, নারী ক্রু নিয়ে। তিনি ঢাকার রুথবা ইয়াসমিন। বয়সে তরুণ, স্বপ্নে বিশাল। মহাকাশ অভিযানে তার এই যাত্রা শুধু ব্যক্তিগত অর্জন নয়, বাংলাদেশের পতাকা চাঁদের মাটিতে পৌঁছে দেয়ারও প্রথম পদক্ষেপ।

২০২৫ সালের ১৬ এপ্রিল, আন্তর্জাতিক মহাকাশ গবেষণা সংস্থা Space Nation ঘোষণা দেয় তাদের Moon Pioneer মিশনের। এই অভিযানে অংশ নেয়া সবাই নারী। তাদের সঙ্গে কেবল একজন পুরুষ। সে দলেই জায়গা করে নিয়েছেন বাংলাদেশের রুথবা ইয়াসমিন।

স্পেস নেশনের মিশন ঘোষণার দুই দিন আগে ১৪ এপ্রিল, ব্লু অরিজিনের সব নারী ক্রু নিয়ে মহাকাশে পাড়ি জমান পপ তারকা কেটি পেরি। খুব কাছাকাছি সময়ে নারী নিয়ন্ত্রিত একাধিক মহাকাশ মিশন বার্তা দিচ্ছে, নারীরা এখন শুধু মহাকাশে প্রবেশ করছে না, বরং সেখানে জায়গা করে নিচ্ছে।

রুথবার মহাকাশ যাত্রার স্বপ্ন বুনন শুরু হয় শৈশবে। ঢাকার স্কলাস্টিকা স্কুল থেকে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। ২০১৪ সালে Mount Holyoke College থেকে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক শেষ করে ডিগ্রি নেন গণিতে। তবে কোভিড মহামারি তার মহাকাশ ছোঁয়ার স্বপ্নে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। ২০২১ সালেই দেশে ফিরে আসেন রুথবা। তবে থেমে না থেকে রুথবা চালিয়ে যান গবেষণা। United International University থেকে ডেটা সায়েন্সে মাস্টার্স করেন।

২০২৪ সালে রুথবা ফের পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। University of South Alabama থেকে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং–এ স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। আর এখানেই হাতছানি দেয় তার স্বপ্ন পূরণের ঝলক। বৈজ্ঞানিক গবেষণা থেকে মহাকাশ প্রশিক্ষণের সুযোগ পান রুথবা।

তার গবেষণা থিসিসের বিষয় ছিল স্পেস ওয়েদার বা মহাকাশের আবহাওয়া। বিশেষ করে জিওম্যাগনেটিক ঝড় যা পৃথিবীর ম্যাগনেটোস্ফিয়ারকে প্রভাবিত করে। এই থিসিসই হয়ে ওঠে তার মহাকাশ অভিযাত্রার টার্নিং পয়েন্ট। রুথবা বলেন, ‘আমার ভিতরে এক গভীর আকাঙ্ক্ষা ছিল আমার ফিজিক্স ডিগ্রিকে সম্পূর্ণভাবে কাজে লাগানোর। সেখান থেকেই শুরু হয় মহাকাশে পা রাখার স্বপ্ন।’

Space Nation-এর Moon Pioneer প্রশিক্ষণে রূথবা দুটি গুরুত্বপূর্ণ পর্বে অংশ নেন। প্রথম রাউন্ডে তিনি ছিলেন Moon Base EVA Specialist। যিনি মক স্পেসস্যুট পরে চাঁদের পৃষ্ঠে অভিযানে অংশ নেন। দ্বিতীয় রাউন্ডে Mission Control Engineer হিসেবে, Moon Base দলের প্রত্যেক সদস্যকে দূর থেকে নির্দেশনা দিয়ে সফলভাবে নিরাপদে ফেরত আনা ছিল রুথবার কাজ।

দুটি পর্বেই দারুণ নৈপুণ্য ও দক্ষতা দেখিয়ে সফল হন রুথবা। তার মহাকাশ অনুপ্রেরণা, NASA অ্যাস্ট্রোনট সুনিতা উইলিয়ামস। স্পেসওয়াকে রেকর্ডধারী সুনিতা দীর্ঘতম সময় মহাকাশে কাটানো একমাত্র নারী। রুথবা বলেন, ‘মাহাকাশ অভিযানে নারীদের অংশগ্রহণ এখনো সীমিত। মহাকাশ শিল্পে মাত্র ২০ শতাংশ নারী, আর অ্যাস্ট্রোনট মাত্র ১১ শতাংশ। এটা বদলাতে হবে।’

মহাকাশ ছোয়ার স্বপ্ন দেখা হাজারও বাঙালি তরুণের পথপ্রদর্শক হতে পারেন রুথবা। তিনি বলেন, ‘যারা মহাকাশ নিয়ে স্বপ্ন দেখে, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিতে ভালো ভিত্তি তৈরি করুক। তবে কেবল শিক্ষাগত ডিগ্রিই যথেষ্ট নয়। দরকার কৌতূহল, সাহস, সমস্যা সমাধানে দক্ষতা এবং নিজের স্বকীয়তা। মহাকাশ এখন শুধুই পশ্চিমাদের মাঠ নয় বরং বাংলাদেশ থেকেও সেখানে পৌঁছানো সম্ভব।’