হেফাজতের ৮৪ হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ঝুলছে মামলা

  • নীলকন্ঠ অনলাইন নীলকন্ঠ অনলাইন
  • আপডেট সময় : ০৮:৪৭:৪৬ পূর্বাহ্ণ, সোমবার, ৫ মে ২০২৫
  • ৭০৮ বার পড়া হয়েছে

শাপলা চত্বর ট্র্যাজেডির সেই ঘটনায় রাষ্ট্রীয় বাহিনীর নির্যাতনে জখম ও খুনের শিকার হন নিরস্ত্র হেফাজত নেতাকর্মীরা। অথচ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার তখন উলটো হেফাজতের ৩ হাজার ৪১৬ জনের নামসহ ৮৪ হাজার ৯৭৬ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সারা দেশে কমপক্ষে ৮৩টি মামলা দায়ের করে। সেই মামলায় বছরের পর বছর ধরে নিরীহ হেফাজতকর্মী ও আলেমদের জেলজুলুমের শিকার হতে হয়। এসব মামলার বেশির ভাগই এখনো ঝুলে আছে।

সূত্র বলছে, ৮৩ মামলার মধ্যে ঢাকার ৪ থানায় দায়ের করা হয় ৪৮ মামলা। এসব মামলায় হেফাজতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয় তার বেশির ভাগেরই সত্যতা মেলেনি। তদন্তকারী সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, মোট ২৫টি মামলায় অপরাধ সংঘটনের সুনির্দিষ্ট প্রমাণ না পাওয়ায় আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে।

আদালত সূত্রে জানা যায়, হেফাজতের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া ৪৮ মামলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৩৬টি মামলা হয় পল্টন মডেল থানায়। এই ৩৬ মামলার মধ্যে ২২টি মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে এবং ১৪টি মামলার তদন্ত এখনো চলমান। মতিঝিল থানার অধীনে দায়ের হওয়া ৬টি মামলার মধ্যে ২টির চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়েছে, ২টি তদন্তাধীন এবং বাকি ২টি মামলা উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত রয়েছে।

রমনা থানায় দায়ের হওয়া ২টি মামলার একটিতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে এবং অন্যটি এখনো তদন্তাধীন। শাহবাগ থানার অধীনে দায়ের হওয়া ৪টি মামলার সবগুলো এখনো তদন্তাধীন পর্যায়ে রয়েছে।

হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেসবাহ বলেন, ন্যায্য দাবি আদায়ে আলেমরা সেখানে অবস্থান নিয়েছিল। তবে সরকার রাতের আঁধারে নিরীহ-নিরস্ত্র আলেমদের সরিয়ে দিতে তাদের গ্রেপ্তার করে মামলা দেয়। জুলাই বিপ্লবের পর এসব মামলা শেষ হওয়া উচিত ছিল। এসব মামলা থেকে আলমদের দ্রুত মুক্তির ব্যবস্থা করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে অন্তর্বর্তী সরকার-এমনটাই আশা করছি।

এ দিকে ২০২১ সালের মার্চ মাসে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফরে আসেন। এ সময় তার সফরের বিরোধিতা করে মাঠে নামে হেফাজতে ইসলাম। ২৬ মার্চ বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ এলাকায় বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়।

একপর্যায়ে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রামের হাটহাজারী, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, কিশোরগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। সংঘর্ষে হেফাজতের অসংখ্য নেতাকর্মী হতাহত হন। এসব ঘটনায় সারা দেশে ১৫৪টি মামলা দায়ের করা হয়।

মামলার তদন্ত অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিএমপির মতিঝিল থানা সূত্র বলছে, হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হওয়া মামলাগুলো তদন্ত চলমান আছে। যাত্রাবাড়ী থানায় হওয়া মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলেন, এই মামলার বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে কোনো ধরনের নির্দেশনা এখনো আসেনি। স্বাভাবিকভাবেই তদন্ত চলছে।

পুলিশের একাধিক সূত্র জানায়, সরকারের উচ্চমহল থেকে মামলা প্রত্যাহারের ইঙ্গিত মিলেছে। সেজন্য পুলিশও কাজ শুরু করে দিয়েছে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সহিংসতার পর থানাগুলোর কার্যক্রম কিছুদিন বন্ধ ছিল। বর্তমানে পুরোদমে কার্যক্রম শুরু হওয়ায় মামলাগুলোর তদন্ত শুরু হয়েছে। এসব মামলার ফাইনাল প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য কাজ চলছে। আর যেসব মামলার ইতোমধ্যে চার্জশিট হয়েছে সেগুলোও আদালতের মাধ্যমে সুরাহা করা হবে।

পুলিশ সদর দপ্তরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, হেফাজতের মামলাগুলো নিয়ে অতীতে আমাদেরই কিছু কর্মকর্তা নানা ধরনের নাটক করেছেন। তারা তৎকালীন সরকারকে খুশি করতে এসব মামলা করে হেফাজতের নেতাকর্মীদের নানাভাবে হয়রানি করেছেন। এখন যে কোনো হয়রানি করা থেকে পুলিশ বিরত থাকবে। হেফাজতের মামলাগুলো প্রত্যাহার করতে সিগন্যাল এসেছে। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে সবকটি মামলা প্রত্যাহার হয়ে যাবে। সূত্র: যুগান্তর

ট্যাগস :

হেফাজতের ৮৪ হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ঝুলছে মামলা

আপডেট সময় : ০৮:৪৭:৪৬ পূর্বাহ্ণ, সোমবার, ৫ মে ২০২৫

শাপলা চত্বর ট্র্যাজেডির সেই ঘটনায় রাষ্ট্রীয় বাহিনীর নির্যাতনে জখম ও খুনের শিকার হন নিরস্ত্র হেফাজত নেতাকর্মীরা। অথচ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার তখন উলটো হেফাজতের ৩ হাজার ৪১৬ জনের নামসহ ৮৪ হাজার ৯৭৬ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সারা দেশে কমপক্ষে ৮৩টি মামলা দায়ের করে। সেই মামলায় বছরের পর বছর ধরে নিরীহ হেফাজতকর্মী ও আলেমদের জেলজুলুমের শিকার হতে হয়। এসব মামলার বেশির ভাগই এখনো ঝুলে আছে।

সূত্র বলছে, ৮৩ মামলার মধ্যে ঢাকার ৪ থানায় দায়ের করা হয় ৪৮ মামলা। এসব মামলায় হেফাজতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয় তার বেশির ভাগেরই সত্যতা মেলেনি। তদন্তকারী সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, মোট ২৫টি মামলায় অপরাধ সংঘটনের সুনির্দিষ্ট প্রমাণ না পাওয়ায় আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে।

আদালত সূত্রে জানা যায়, হেফাজতের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া ৪৮ মামলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৩৬টি মামলা হয় পল্টন মডেল থানায়। এই ৩৬ মামলার মধ্যে ২২টি মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে এবং ১৪টি মামলার তদন্ত এখনো চলমান। মতিঝিল থানার অধীনে দায়ের হওয়া ৬টি মামলার মধ্যে ২টির চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়েছে, ২টি তদন্তাধীন এবং বাকি ২টি মামলা উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত রয়েছে।

রমনা থানায় দায়ের হওয়া ২টি মামলার একটিতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে এবং অন্যটি এখনো তদন্তাধীন। শাহবাগ থানার অধীনে দায়ের হওয়া ৪টি মামলার সবগুলো এখনো তদন্তাধীন পর্যায়ে রয়েছে।

হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেসবাহ বলেন, ন্যায্য দাবি আদায়ে আলেমরা সেখানে অবস্থান নিয়েছিল। তবে সরকার রাতের আঁধারে নিরীহ-নিরস্ত্র আলেমদের সরিয়ে দিতে তাদের গ্রেপ্তার করে মামলা দেয়। জুলাই বিপ্লবের পর এসব মামলা শেষ হওয়া উচিত ছিল। এসব মামলা থেকে আলমদের দ্রুত মুক্তির ব্যবস্থা করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে অন্তর্বর্তী সরকার-এমনটাই আশা করছি।

এ দিকে ২০২১ সালের মার্চ মাসে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফরে আসেন। এ সময় তার সফরের বিরোধিতা করে মাঠে নামে হেফাজতে ইসলাম। ২৬ মার্চ বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ এলাকায় বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়।

একপর্যায়ে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রামের হাটহাজারী, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, কিশোরগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। সংঘর্ষে হেফাজতের অসংখ্য নেতাকর্মী হতাহত হন। এসব ঘটনায় সারা দেশে ১৫৪টি মামলা দায়ের করা হয়।

মামলার তদন্ত অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিএমপির মতিঝিল থানা সূত্র বলছে, হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হওয়া মামলাগুলো তদন্ত চলমান আছে। যাত্রাবাড়ী থানায় হওয়া মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলেন, এই মামলার বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে কোনো ধরনের নির্দেশনা এখনো আসেনি। স্বাভাবিকভাবেই তদন্ত চলছে।

পুলিশের একাধিক সূত্র জানায়, সরকারের উচ্চমহল থেকে মামলা প্রত্যাহারের ইঙ্গিত মিলেছে। সেজন্য পুলিশও কাজ শুরু করে দিয়েছে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সহিংসতার পর থানাগুলোর কার্যক্রম কিছুদিন বন্ধ ছিল। বর্তমানে পুরোদমে কার্যক্রম শুরু হওয়ায় মামলাগুলোর তদন্ত শুরু হয়েছে। এসব মামলার ফাইনাল প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য কাজ চলছে। আর যেসব মামলার ইতোমধ্যে চার্জশিট হয়েছে সেগুলোও আদালতের মাধ্যমে সুরাহা করা হবে।

পুলিশ সদর দপ্তরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, হেফাজতের মামলাগুলো নিয়ে অতীতে আমাদেরই কিছু কর্মকর্তা নানা ধরনের নাটক করেছেন। তারা তৎকালীন সরকারকে খুশি করতে এসব মামলা করে হেফাজতের নেতাকর্মীদের নানাভাবে হয়রানি করেছেন। এখন যে কোনো হয়রানি করা থেকে পুলিশ বিরত থাকবে। হেফাজতের মামলাগুলো প্রত্যাহার করতে সিগন্যাল এসেছে। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে সবকটি মামলা প্রত্যাহার হয়ে যাবে। সূত্র: যুগান্তর