আগামী পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার আকাঙ্ক্ষাও ব্যক্ত করছেন কেউ কেউ। নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপি সংস্কারের দোহাই দিয়ে নির্বাচন প্রলম্বিত করতে চায়। জামায়াতে ইসলামীসহ আরও দু-একটি দলের ভূমিকাও অস্পষ্ট। এ অবস্থায় নির্বাচন আদৌ হবে কি না তা নিয়েও সন্দিহান অনেকে। সবাই আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে রয়েছেন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়। আবার নির্বাচন নিয়ে দেশিবিদেশি ষড়যন্ত্রের গন্ধও পাচ্ছেন কেউ কেউ। বিএনপির নীতিনির্ধারণী মহলের সদস্য ও সমমনা দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘বিএনপির বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রোপাগান্ডা চলছে। এ বিষয়ে আট মাস আগেই আপনাদের সতর্ক করে দিয়েছিলাম। কেননা বিএনপি, দেশ, নির্বাচন ও গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে একটা অদৃশ্য প্রতিপক্ষ ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হচ্ছে, তাদের সঙ্গে আরও কিছু প্রতিপক্ষ যোগ দিচ্ছে। সেটা মোকাবিলা করার সক্ষমতা রয়েছে বিএনপির। তাই আমাদের সবকিছুই সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ ও মোকাবিলা করতে হবে।’
১৬ এপ্রিল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে নির্বাচন ইস্যুতে দ্বিতীয়বারের মতো বৈঠক করে বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের আরেকটি প্রতিনিধিদল। বৈঠকে তারা জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ও রোডম্যাপ চাইলেন। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস এ বৈঠকে পরিষ্কারভাবে কিছুই বললেন না। তিনি জানালেন, ডিসেম্বর (২০২৫) থেকে জুনের (২০২৬) মধ্যেই নির্বাচন হবে। নির্বাচনের বিষয়ে পরিষ্কার রোডম্যাপ ঘোষণার বিষয়েও তিনি কিছু বলেননি। ওই বৈঠকের পর থেকেই নির্বাচন নিয়ে সরকারের ভূমিকা রহস্যপূর্ণ মনে করছেন নেতৃবৃন্দ। এদিকে বিএনপি ও সমমনা দলের নেতারা আশঙ্কা করছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে দেশিবিদেশি নানান ধরনের ষড়যন্ত্র চলছে। বিশেষ করে যেসব রাজনৈতিক দল অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে ৫ থেকে ১০ শতাংশের বেশি ভোট পাবে না, তারাই মূলত নির্বাচন প্রলম্বিত করতে চায় বলে অভিযোগ করেন বিএনপি ও সমমনা দলের নেতারা। তাঁরা বলেন, অনির্বাচিত সরকারের আমলেই যাঁরা ক্ষমতার মজা পেয়ে গেছেন তাঁদের আর নির্বাচনের দরকার কী? নির্বাচন না হলেই তাঁদের জন্য ভালো। তাঁদের ক্ষমতার মজার মেয়াদ দীর্ঘায়িত হবে।
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য, অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মির্জা আব্বাস বলেন, ‘নির্বাচন দ্রুত দেওয়ার কোনো লক্ষণ দেখছি না। জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন নির্বাচন দেবে। ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন নির্বাচন ডিসেম্বরে না হলেও জুনের মধ্যে হবে। এ কথাটাই আমাদের বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে। একবার বললেন ডিসেম্বর, আবার বললেন জুনের কথা। ভোট আগামী ডিসেম্বরে হবে, প্রধান উপদেষ্টা এটা বলার পরপরই আরেকজন বললেন ভোট জুনে হবে। সম্ভবত নির্বাচন খুব তাড়াতাড়ি তাঁরা করবেন না। নির্বাচন দ্রুত দেওয়ার কোনো লক্ষণ আমি দেখি না।’ তিনি আরও বলেন, ‘কয়েকটা দল বলা শুরু করেছে এটা না হলে নির্বাচন হবে না, ওইটা না হলে নির্বাচন হবে না। যদি এগুলো বলতে থাকে, তাহলে নির্বাচন কেমনে হবে? আবার কেউ কেউ ধমক দেয় “আমরা নির্বাচনে যাব না”। তবে এগুলো করে কোনো লাভ নেই। আমরা আশা করি খুব দ্রুত না হলেও নির্বাচনটা যথাসময়েই হবে, জনগণের প্রত্যাশার কাছাকাছি সময়েই হবে। নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রকার ধোঁয়াশা সৃষ্টি করা যাবে না।’
দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির অন্য সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আমাদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা শঙ্কা সবই আছে। আমরা ১৬ এপ্রিল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেছি। এতে আমরা সন্তুষ্ট হতে পারিনি। তিনি আগে বলেছিলেন ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে। বিষয়টি রোডম্যাপের মাধ্যমে পরিষ্কার করা হবে। কিন্তু তার দুই মাস পরেও বিষয়টি তিনি বা সরকারের পক্ষ থেকে পরিষ্কার করা হয়নি। এখন বলা হচ্ছে ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। তাঁদের এসব কথাবার্তাই সবার মাঝে সন্দেহের সৃষ্টি করছে। তার পরও আমরা আশা করছি প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস শিগগিরই বিষয়টি পরিষ্কার করে মানুষকে স্বস্তি দেবেন। আর এদিকে আমরা সমমনা ও যুগপৎ আন্দোলনের শরিক রাজনৈতিক দলগুলো নিয়ে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। এরপর আমরা আমাদের কর্মকৌশল নির্ধারণ করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।’ এ প্রসঙ্গে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার টালবাহানা করছে।’ তিনি বলেন, ‘এ সরকার তো গণতান্ত্রিক সংগ্রামের ফসল। তার তো প্রতিটি ক্ষেত্রে জবাবদিহি থাকতে হবে। জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হবে।’