ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা, যেখানে শুধুমাত্র মানুষের মধ্যে ইনসাফ ও দয়াকে উত্সাহিত করা হয়নি, বরং পশু-পাখিসহ সমস্ত সৃষ্টির প্রতি সদয় আচরণ করতেও সমানভাবে আহ্বান জানানো হয়েছে। মহান আল্লাহ তাআলা আমাদের কল্যাণের জন্য অনেক জীবজন্তু সৃষ্টি করে দিয়েছেন। ইসলামের দৃষ্টিতে সেসব জীবজন্তু কোনো তুচ্ছ বা অবহেলিত প্রাণী নয়; বরং তাদের প্রতিও ইসলাম ঘোষণা করেছে করুণা, দায়িত্ববোধ ও জবাবদিহিতার শিক্ষা।
জীবজন্তুর মর্যাদায় কোরআন
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘পৃথিবীর বুকে যত জীবজন্তু আছে, তাদের রিজিকের দায়িত্ব আল্লাহর ওপর।’ (সুরা হুদ, আয়াত : ৬) তিনি আরও বলেন, ‘আর তিনি গবাদিপশু সৃষ্টি করেছেন। এতে রয়েছে তোমাদের জন্য উষ্ণতা ও নানাবিধ উপকার।’ (সুরা নাহল, আয়াত : ৫)
হাদিসে জীবজন্তুর প্রতি দয়ার আহবান
১. ‘আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, …. জনৈক লোক দেখতে পেল যে, তৃষ্ণায় কাতর একটি কুকুর জিভ বের করে হাপাচ্ছে আর মাটি চাটছে। লোকটি মনে মনে বলল, কুকুরটিকে আমার মতো তীব্র তৃষ্ণায় পেয়েছে। তখন সে কুয়ায় নামল এবং তার চামড়া মোজায় পানি ভরল। তারপরে সে তার মুখে বন্ধ করে উপরে উঠল এবং কুকুরটিকে পান করাল। মহান আল্লাহ তার এ আমলের কদর করলেন এবং তাকে মাফ করে দিলেন। সাহাবিগণ প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! তাহলে কি আমাদের জন্য এসব প্রাণীর ব্যাপারে সদাচরণেও সাওয়াব রয়েছে? তিনি বললেন, যেকোনো জীবের প্রতি দয়া করা তা হোক পশু বা পাখি তাতে সওয়াব আছে।’ (মুসলিম, হাদিস : ২২৪৪)
২. আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা জমিনে যারা আছে তাদের প্রতি দয়া করো, আসমানে যিনি আছেন তিনি তোমাদের প্রতি দয়া করবেন।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৯২৪)
নবী জীবনে জীবজন্তুর প্রতি দয়ার দৃষ্টান্ত
১. উটের কান্নায় প্রতিক্রিয়া
আব্দুল্লাহ ইবনে জাফর (রা.) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, …. রাসুল (সা.) এক আনসারির খেজুর বাগানে প্রবেশ করলে হঠাৎ একটি উট তাঁর দৃষ্টিগোচর হয়। উটটি নবী (সা.)-কে দেখে কাঁদতে লাগলো এবং তার চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। তিনি উটটির কাছে গিয়ে এর মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করলেন। এতে উটটি কান্না থামাল। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এ উটের মালিক কে? এক আনসারি যুবক এসে বললো, উটটি আমার। তিনি বললেন, আল্লাহ যে তোমাকে এই নিরীহ প্রাণীটির মালিক বানালেন, এর অধিকারের ব্যাপারে তুমি কি আল্লাহকে ভয় করো না? উটটি আমার কাছে অভিযোগ করেছে, তুমি একে ক্ষুধার্ত রাখো এবং কষ্ট দাও।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ২৫৪৯)
২. একজন ব্যভিচারী নারী ও কুকুর
‘….. এক ব্যভিচারী নারী একটি কুকুরকে পিপাসার্ত দেখে তার জন্য জুতা দিয়ে পানি তুলে দিল। এ কারণে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিলেন।’ (বুখারি, হাদীস : ৩৩২১)
জীবজন্তুকে কষ্ট দেওয়ার পরিণতি
অহেতুক কোনো জীবজন্তুকে কষ্ট দেওয়া নিষেধ। কেননা অকারণে অবলা প্রাণীকে কষ্ট দিলে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হতে হয়। ‘আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) হতে বর্ণিত- একজন নারী একটি বিড়ালকে না খাইয়ে এবং বন্দী করে রাখার কারণে জাহান্নামে গিয়েছে।’ (বুখারি, হাদিস : ২৩৬৫)
ইসলাম দয়ার ধর্ম। এই দয়া শুধু মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং প্রাণীজগৎ পর্যন্ত বিস্তৃত। একটি পশুর কষ্টকেও রাসুল (সা.) গুরুত্ব দিয়েছেন এবং আমাদের দয়ালু হতে শিখিয়েছেন। তবে এর মানে এই নয় যে, নাপাক প্রাণীদের প্রতি দয়া করতে গিয়ে তাদের নিজের ঘরের ভেতর রেখে পালন করতে হবে।
আল্লাহ আমাদের সব সৃষ্টির সাথে সুন্দর ব্যবহার করার তাওফিক দান করুন। আমিন।