শিরোনাম :
Logo রাবির ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা শুরু, আসন প্রতি লড়ছেন ৫১ ভর্তিচ্ছু Logo রাশিয়ার হয়ে ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ নেওয়া বাংলাদেশি যুবক নিহত Logo চুয়াডাঙ্গার মুন্সীপুর সীমান্তে ১২ কেজি রূপার গয়না জব্দ Logo ইন্টারন্যাশনাল ভেটেরিনারি স্টুডেন্ট’স এসোসিয়েশন হাবিপ্রবির নতুন কমিটি গঠন Logo জবিতে সাইকেল চোর সন্দেহে যুবক আটক ৮ শিক্ষার্থীকে ৫০হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ Logo ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলীখেলার ১১৬তম আসর ২৫ এপ্রিল Logo গত ৯ মাসে এক আকাশ ভালোবাসা অর্জন করেছি: প্রেস সচিব Logo মির্জা ফখরুলের সাথে এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশনস’র প্রতিনিধি দলের বৈঠক Logo ‘বিএনপিকে পাশ কাটাতেই নির্বাচন বিলম্ব করছে সরকার’ Logo সংস্কার ও হাসিনার বিচারের আগে কোনো নির্বাচন নয় : গোলাম পরওয়ার

ওলি হওয়ার পথ ও পাথেয়

  • নীলকন্ঠ অনলাইন নীলকন্ঠ অনলাইন
  • আপডেট সময় : ০৭:৫৪:১৬ অপরাহ্ণ, বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫
  • ৭১১ বার পড়া হয়েছে
আরবি ওলি শব্দের অর্থ বন্ধু, সাহায্যকারী ও অভিভাবক। তাসাউফের পরিভাষায় ‘আল্লাহর ওলি’ দ্বারা আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত বান্দারা উদ্দেশ্য। তবে ওলি শব্দ ব্যবহার ভেদে ভিন্ন ভিন্ন অর্থও দেয়। আল্লাহর ওলিদের সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে,  ‘জেনে রাখো! নিশ্চয়ই আল্লাহর ওলিদের কোনো ভয় নেই এবং তাঁরা চিন্তিতও হবে না, যারা ঈমান এনেছেন এবং যারা আল্লাহর অসন্তুষ্টি থেকে আত্মরক্ষা করে চলে।’ (সুরা ইউনুস, আয়াত : ৬২-৬৩)

উল্লিখিত আয়াতে আল্লাহর ওলিদের দুটি বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হয়েছে। তা হলো, তারা বিশুদ্ধ ঈমানের অধিকারী হবে এবং তারা আল্লাহর অসন্তুষ্টি থেকে বেঁচে চলবে তথা তাকওয়ার পথ অনুসরণ করবে। সুতরাং আল্লাহর ওলি হওয়ার জন্য ঈমান ও তাকওয়ার গুণ অর্জন করতে হবে। ঈমান হলো তাওহিদ ও রিসালাতের প্রতি বিশুদ্ধ বিশ্বাস অন্তরে ধারণ করা এবং শিরক ও কুফর থেকে বিরত থাকা। আর তাকওয়ার মূলকথা হলো আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন এমন কাজ থেকে বিরত থাকা। যেহেতু ঈমানের শর্ত সব মুসলমানের মধ্যে পাওয়া যায় তাই মুমিন মাত্রই আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত। সাধারণ মুমিন অবিশ্বাসীদের তুলনায় আল্লাহর নিকটবর্তী এবং মুত্তাকিদের তুলনায় কম নৈকট্যপ্রাপ্ত। এজন্য ইমাম তহাবি (রহ.) বলেছেন, ‘সকল মুমিন করুণাময় আল্লাহর ওলি। তাঁদের মধ্য থেকে যে যত বেশি আল্লাহর অনুগত ও কোরআনের অনুসরণকারী সে ততবেশি আল্লাহর নিকট সম্মানিত (তথা নৈকট্যপ্রাপ্ত)।’ (আকিদাতুত তহাবি, পৃষ্ঠা ৫৭)

হাদিসে কুদসিতে আল্লাহর ওলির মর্যাদা এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভ সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি আমার কোনো ওলির সঙ্গে শত্রুতা করে আমি তার সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করি। আমার নৈকট্য অর্জন বা ওলি হওয়ার জন্য বান্দা যত কাজ করে তন্মধ্যে সবচেয়ে আমি বেশি ভালোবাসি যে কাজ আমি ফরজ করেছি। এরপর বান্দা যখন সর্বদা নফল ইবাদত পালনের মাধ্যমে আমার অগ্রসর হতে থাকে তখন আমি তাকে ভালোবাসি। আর যখন আমি তাকে ভালোবাসি তখন আমি তার শ্রবণযন্ত্রে পরিণত হই, যা দিয়ে সে শুনতে পায়; আমি তার দর্শনেন্দ্রীয় হয়ে যাই, যা দিয়ে সে দেখতে পায়; আমি তার হাত হয়ে যাই, যা দ্বারা সে ধরে বা আঘাত করে এবং আমি তার পা হয়ে যাই, যা দিয়ে সে হাঁটে। সে যদি আমার কাছে কিছু প্রার্থনা করে তাহলে আমি অবশ্যই তাকে তা প্রদান করি। সে যদি আমার কাছে আশ্রয় চায় তাহলে আমি অবশ্যই তাকে আশ্রয় প্রদান করি।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৫০২)

উল্লিখিত হাদিস থেকে জানা যায়, আল্লাহর ওলি হওয়ার উপায় হলো ফরজ ইবাদতের প্রতি যত্নবান হওয়া এবং বেশি বেশি নফল আদায়ে আগ্রহী হওয়া। এ পথে যিনি যতুটুকু অগ্রসর হবেন তিনি ততটুকু আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করবেন।

মুজাদ্দিদে আলফে সানি (রহ.) বলেন, ‘আল্লাহ তাআলার নৈকট্য প্রদানকারী আমলগুলো দুই প্রকার : ফরজ আমল ও নফল আমল। নফল আমল যতই মর্যাদাপূর্ণ হোক না কেন তা কখনো ফরজের সমকক্ষ নয়। এমন নফল আমল যদি নামাজ, রোজা, সদকা যদি নফল হয় তবে তা ফরজ নামাজ, রোজা ও সদকার সমকক্ষ নয়। ফরজ ইবাদতের মধ্যে যে সুন্নাত ও নফল আছে, তা অন্য নফলাদির তুলনায় শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার।’ (মাকতুবাত শরীফ : ১/৫৭)

কোরআন ও হাদিসের আলোকে পূর্বসূরী আলেমরা যেসব আমলকে ওলি হওয়ার মাধ্যম ঘোষণা করেছেন তার কয়েকটি হলো,
১. বিশুদ্ধ ঈমান অর্জন করা।
২. উপার্জন বৈধ হওয়া।
৩. হারাম ও মাকরুহ পরিহার করা।
৪. বান্দার হক নষ্ট না করা।
৫. ফরজ ইবাদতে যত্নবান হওয়া।
৬. বেশি বেশি নফল ইবাদত করা।
৭. আল্লাহর সৃষ্টির সেবা করা।

আল্লাহ সবাইকে তাঁর নৈকট্য দান করুন। আমিন।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

রাবির ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা শুরু, আসন প্রতি লড়ছেন ৫১ ভর্তিচ্ছু

ওলি হওয়ার পথ ও পাথেয়

আপডেট সময় : ০৭:৫৪:১৬ অপরাহ্ণ, বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫
আরবি ওলি শব্দের অর্থ বন্ধু, সাহায্যকারী ও অভিভাবক। তাসাউফের পরিভাষায় ‘আল্লাহর ওলি’ দ্বারা আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত বান্দারা উদ্দেশ্য। তবে ওলি শব্দ ব্যবহার ভেদে ভিন্ন ভিন্ন অর্থও দেয়। আল্লাহর ওলিদের সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে,  ‘জেনে রাখো! নিশ্চয়ই আল্লাহর ওলিদের কোনো ভয় নেই এবং তাঁরা চিন্তিতও হবে না, যারা ঈমান এনেছেন এবং যারা আল্লাহর অসন্তুষ্টি থেকে আত্মরক্ষা করে চলে।’ (সুরা ইউনুস, আয়াত : ৬২-৬৩)

উল্লিখিত আয়াতে আল্লাহর ওলিদের দুটি বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হয়েছে। তা হলো, তারা বিশুদ্ধ ঈমানের অধিকারী হবে এবং তারা আল্লাহর অসন্তুষ্টি থেকে বেঁচে চলবে তথা তাকওয়ার পথ অনুসরণ করবে। সুতরাং আল্লাহর ওলি হওয়ার জন্য ঈমান ও তাকওয়ার গুণ অর্জন করতে হবে। ঈমান হলো তাওহিদ ও রিসালাতের প্রতি বিশুদ্ধ বিশ্বাস অন্তরে ধারণ করা এবং শিরক ও কুফর থেকে বিরত থাকা। আর তাকওয়ার মূলকথা হলো আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন এমন কাজ থেকে বিরত থাকা। যেহেতু ঈমানের শর্ত সব মুসলমানের মধ্যে পাওয়া যায় তাই মুমিন মাত্রই আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত। সাধারণ মুমিন অবিশ্বাসীদের তুলনায় আল্লাহর নিকটবর্তী এবং মুত্তাকিদের তুলনায় কম নৈকট্যপ্রাপ্ত। এজন্য ইমাম তহাবি (রহ.) বলেছেন, ‘সকল মুমিন করুণাময় আল্লাহর ওলি। তাঁদের মধ্য থেকে যে যত বেশি আল্লাহর অনুগত ও কোরআনের অনুসরণকারী সে ততবেশি আল্লাহর নিকট সম্মানিত (তথা নৈকট্যপ্রাপ্ত)।’ (আকিদাতুত তহাবি, পৃষ্ঠা ৫৭)

হাদিসে কুদসিতে আল্লাহর ওলির মর্যাদা এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভ সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি আমার কোনো ওলির সঙ্গে শত্রুতা করে আমি তার সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করি। আমার নৈকট্য অর্জন বা ওলি হওয়ার জন্য বান্দা যত কাজ করে তন্মধ্যে সবচেয়ে আমি বেশি ভালোবাসি যে কাজ আমি ফরজ করেছি। এরপর বান্দা যখন সর্বদা নফল ইবাদত পালনের মাধ্যমে আমার অগ্রসর হতে থাকে তখন আমি তাকে ভালোবাসি। আর যখন আমি তাকে ভালোবাসি তখন আমি তার শ্রবণযন্ত্রে পরিণত হই, যা দিয়ে সে শুনতে পায়; আমি তার দর্শনেন্দ্রীয় হয়ে যাই, যা দিয়ে সে দেখতে পায়; আমি তার হাত হয়ে যাই, যা দ্বারা সে ধরে বা আঘাত করে এবং আমি তার পা হয়ে যাই, যা দিয়ে সে হাঁটে। সে যদি আমার কাছে কিছু প্রার্থনা করে তাহলে আমি অবশ্যই তাকে তা প্রদান করি। সে যদি আমার কাছে আশ্রয় চায় তাহলে আমি অবশ্যই তাকে আশ্রয় প্রদান করি।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৫০২)

উল্লিখিত হাদিস থেকে জানা যায়, আল্লাহর ওলি হওয়ার উপায় হলো ফরজ ইবাদতের প্রতি যত্নবান হওয়া এবং বেশি বেশি নফল আদায়ে আগ্রহী হওয়া। এ পথে যিনি যতুটুকু অগ্রসর হবেন তিনি ততটুকু আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করবেন।

মুজাদ্দিদে আলফে সানি (রহ.) বলেন, ‘আল্লাহ তাআলার নৈকট্য প্রদানকারী আমলগুলো দুই প্রকার : ফরজ আমল ও নফল আমল। নফল আমল যতই মর্যাদাপূর্ণ হোক না কেন তা কখনো ফরজের সমকক্ষ নয়। এমন নফল আমল যদি নামাজ, রোজা, সদকা যদি নফল হয় তবে তা ফরজ নামাজ, রোজা ও সদকার সমকক্ষ নয়। ফরজ ইবাদতের মধ্যে যে সুন্নাত ও নফল আছে, তা অন্য নফলাদির তুলনায় শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার।’ (মাকতুবাত শরীফ : ১/৫৭)

কোরআন ও হাদিসের আলোকে পূর্বসূরী আলেমরা যেসব আমলকে ওলি হওয়ার মাধ্যম ঘোষণা করেছেন তার কয়েকটি হলো,
১. বিশুদ্ধ ঈমান অর্জন করা।
২. উপার্জন বৈধ হওয়া।
৩. হারাম ও মাকরুহ পরিহার করা।
৪. বান্দার হক নষ্ট না করা।
৫. ফরজ ইবাদতে যত্নবান হওয়া।
৬. বেশি বেশি নফল ইবাদত করা।
৭. আল্লাহর সৃষ্টির সেবা করা।

আল্লাহ সবাইকে তাঁর নৈকট্য দান করুন। আমিন।