মানুষের গোটা জীবনই পরীক্ষাস্বরূপ

  • নীলকন্ঠ অনলাইন নীলকন্ঠ অনলাইন
  • আপডেট সময় : ০৮:২৪:২৪ অপরাহ্ণ, শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০২৫
  • ৭১০ বার পড়া হয়েছে

সম্প্রতি দেশে শুরু হয়েছে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষা। পরীক্ষা ঘিরে পরীক্ষার্থী ও পরীক্ষার্থীর অভিভাবকদের দুশ্চিন্তার অন্ত থাকে না। পরীক্ষার বহু আগ থেকেই শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা দিন-রাত পরিশ্রম করে ভালো ফলাফলের জন্য। উজ্বল ভবিষ্যতের জন্য। মহান আল্লাহ সব পরীক্ষার্থীদের কৃতকার্য হয়ে দেশ-জাতি ও ইসলামের পক্ষে কাজ করার জন্য কবুল করুন। এই পরীক্ষাগুলো মুমিনদের জীবনপরীক্ষার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। কারণ পৃথিবীতে প্রতিটি মানুষই পরীক্ষার্থী। গোটা পৃথিবীটাই একটি পরীক্ষাগার। মহান আল্লাহ এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে বানিয়েছেন তাঁর বান্দাদের পরীক্ষা করার জন্য। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তিনি (আল্লাহ) সেই সত্তা, যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। আর তাঁর আরশ ছিল পানির ওপর, যেন তিনি যাচাই করতে পারেন, তোমাদের মধ্যে কে কর্মে শ্রেষ্ঠ…।’ (সুরা : হুদ, আয়াত : ৭)

অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ আরো বলেন, ‘পৃথিবীতে যা কিছু আছে, আমি তা তার জন্য শোভা বানিয়েছি, যেন আমি পরীক্ষা করতে পারি মানুষের মধ্যে আমলে কে শ্রেষ্ঠ।’ (সুরা : কাহফ, আয়াত : ৭)

পৃথিবীতে মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্য বহু নিয়ামত সৃষ্টি করেছেন। এই নিয়ামতগুলো ভোগ করার নিয়ম-কানুন দিয়ে দিয়েছেন। এর মাধ্যমে তিনি পরীক্ষা করছেন, কারা এগুলোর ভেতর থেকেও দুনিয়াপ্রীতি সংবরণ করে মহান আল্লাহর নির্দেশনা মোতাবেক জীবন পরিচালনা করে। আর কারা এগুলোর লোভে পড়ে আল্লাহর হুকুম থেকে দূরে সরে যায়।

পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ এই পরীক্ষার ব্যাপারে তাঁর উম্মতদের সাবধান করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘হে মুমিনগণ, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান- সন্ততি যেন তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ থেকে উদাসীন না করে। আর যারা এরূপ করে তারাই তো ক্ষতিগ্রস্ত। আর আমি তোমাদের যে রিজিক দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করো, তোমাদের কারো মৃত্যু আসার আগে। কেননা তখন সে বলবে, হে আমার রব, যদি আপনি আমাকে আরো কিছুকাল পর্যন্ত অবকাশ দিতেন, তাহলে আমি দান-সদকা করতাম। আর সত্ লোকদের অন্তর্ভুক্ত হতাম। আর আল্লাহ কখনো কোনো প্রাণকেই অবকাশ দেবেন না, যখন তার নির্ধারিত সময় এসে যাবে। আর তোমরা যা করো সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবহিত।’ (সুরা : মুনাফিকুন, আয়াত : ৯-১১)

আমাদের নবীজি (সা.)-ও তাঁর উম্মতদের দুনিয়ার এই পরীক্ষা সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। একদিন তিনি তাঁর এক ভাষণে বলেছেন, নিশ্চয়ই দুনিয়া সবুজ-শ্যামল ও লোভনীয়। আল্লাহ তাআলা দুনিয়ায় তোমাদের খলিফা (প্রতিনিধি) বানিয়েছেন। তিনি দেখবেন যে তোমরা কেমন কাজ করো। সাবধান! দুনিয়া সম্পর্কে সতর্ক হও এবং নারীদের সম্পর্কেও সতর্ক হও। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪০০০)

এজন্য প্রতিটি মুমিনের উচিত, দুনিয়ার চাকচিক্যেরে মোহে পড়ে তাদের আসল কাজ ভুলে না যাওয়া। পরকালের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া, যে কালের শুরু আছে শেষ নেই। ক্ষুদ্র এই জীবনকে সাজাতে গিয়ে অসীম জীবনের সফলতা থেকে বঞ্চিত না হওয়া। প্রতিটি মানুষের জীবনই পরীক্ষাস্বরূপ। জন্ম থেকে মৃত্যুর এই মধ্যবর্তী সময়টা মানুষ কিভাবে কাটায় মহান আল্লাহ তা যাচাই করেন। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন, তোমাদের পরীক্ষা করার জন্য। কে তোমাদের মধ্যে কর্মে উত্তম? তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল।’ (সুরা : মুলক, আয়াত : ২)

দুনিয়ার পরীক্ষায় এক বার অকৃতকার্য হলে দ্বিতীয় বার পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ আছে, কিন্তু এই পরীক্ষা একবারই হয়। দ্বিতীয় বার পরীক্ষায় অংশগ্রহণের কোনো সুযোগ নেই। তাই প্রতিটি মুমিনের উচিত, সময় থাকতে নিজেদের সব পাপ থেকে বিরত হয়ে আল্লাহর পথে ধাবিত হওয়া। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘প্রত্যেকের জন্যই একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্য আছে, সেদিকেই সে মুখ করে। কাজেই তোমরা সত্ কাজের দিকে ধাবমান হও। যেখানেই তোমরা অবস্থান কর, আল্লাহ তোমাদের সকলকে একত্রিত করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সকল বস্তুর উপর ক্ষমতাবান। (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৪৮)

মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে জীবন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমাদের সব পাপ ও উদাসীনতা ক্ষমা করুন। আমিন।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

মানুষের গোটা জীবনই পরীক্ষাস্বরূপ

আপডেট সময় : ০৮:২৪:২৪ অপরাহ্ণ, শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০২৫

সম্প্রতি দেশে শুরু হয়েছে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষা। পরীক্ষা ঘিরে পরীক্ষার্থী ও পরীক্ষার্থীর অভিভাবকদের দুশ্চিন্তার অন্ত থাকে না। পরীক্ষার বহু আগ থেকেই শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা দিন-রাত পরিশ্রম করে ভালো ফলাফলের জন্য। উজ্বল ভবিষ্যতের জন্য। মহান আল্লাহ সব পরীক্ষার্থীদের কৃতকার্য হয়ে দেশ-জাতি ও ইসলামের পক্ষে কাজ করার জন্য কবুল করুন। এই পরীক্ষাগুলো মুমিনদের জীবনপরীক্ষার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। কারণ পৃথিবীতে প্রতিটি মানুষই পরীক্ষার্থী। গোটা পৃথিবীটাই একটি পরীক্ষাগার। মহান আল্লাহ এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে বানিয়েছেন তাঁর বান্দাদের পরীক্ষা করার জন্য। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তিনি (আল্লাহ) সেই সত্তা, যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। আর তাঁর আরশ ছিল পানির ওপর, যেন তিনি যাচাই করতে পারেন, তোমাদের মধ্যে কে কর্মে শ্রেষ্ঠ…।’ (সুরা : হুদ, আয়াত : ৭)

অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ আরো বলেন, ‘পৃথিবীতে যা কিছু আছে, আমি তা তার জন্য শোভা বানিয়েছি, যেন আমি পরীক্ষা করতে পারি মানুষের মধ্যে আমলে কে শ্রেষ্ঠ।’ (সুরা : কাহফ, আয়াত : ৭)

পৃথিবীতে মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্য বহু নিয়ামত সৃষ্টি করেছেন। এই নিয়ামতগুলো ভোগ করার নিয়ম-কানুন দিয়ে দিয়েছেন। এর মাধ্যমে তিনি পরীক্ষা করছেন, কারা এগুলোর ভেতর থেকেও দুনিয়াপ্রীতি সংবরণ করে মহান আল্লাহর নির্দেশনা মোতাবেক জীবন পরিচালনা করে। আর কারা এগুলোর লোভে পড়ে আল্লাহর হুকুম থেকে দূরে সরে যায়।

পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ এই পরীক্ষার ব্যাপারে তাঁর উম্মতদের সাবধান করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘হে মুমিনগণ, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান- সন্ততি যেন তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ থেকে উদাসীন না করে। আর যারা এরূপ করে তারাই তো ক্ষতিগ্রস্ত। আর আমি তোমাদের যে রিজিক দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করো, তোমাদের কারো মৃত্যু আসার আগে। কেননা তখন সে বলবে, হে আমার রব, যদি আপনি আমাকে আরো কিছুকাল পর্যন্ত অবকাশ দিতেন, তাহলে আমি দান-সদকা করতাম। আর সত্ লোকদের অন্তর্ভুক্ত হতাম। আর আল্লাহ কখনো কোনো প্রাণকেই অবকাশ দেবেন না, যখন তার নির্ধারিত সময় এসে যাবে। আর তোমরা যা করো সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবহিত।’ (সুরা : মুনাফিকুন, আয়াত : ৯-১১)

আমাদের নবীজি (সা.)-ও তাঁর উম্মতদের দুনিয়ার এই পরীক্ষা সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। একদিন তিনি তাঁর এক ভাষণে বলেছেন, নিশ্চয়ই দুনিয়া সবুজ-শ্যামল ও লোভনীয়। আল্লাহ তাআলা দুনিয়ায় তোমাদের খলিফা (প্রতিনিধি) বানিয়েছেন। তিনি দেখবেন যে তোমরা কেমন কাজ করো। সাবধান! দুনিয়া সম্পর্কে সতর্ক হও এবং নারীদের সম্পর্কেও সতর্ক হও। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪০০০)

এজন্য প্রতিটি মুমিনের উচিত, দুনিয়ার চাকচিক্যেরে মোহে পড়ে তাদের আসল কাজ ভুলে না যাওয়া। পরকালের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া, যে কালের শুরু আছে শেষ নেই। ক্ষুদ্র এই জীবনকে সাজাতে গিয়ে অসীম জীবনের সফলতা থেকে বঞ্চিত না হওয়া। প্রতিটি মানুষের জীবনই পরীক্ষাস্বরূপ। জন্ম থেকে মৃত্যুর এই মধ্যবর্তী সময়টা মানুষ কিভাবে কাটায় মহান আল্লাহ তা যাচাই করেন। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন, তোমাদের পরীক্ষা করার জন্য। কে তোমাদের মধ্যে কর্মে উত্তম? তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল।’ (সুরা : মুলক, আয়াত : ২)

দুনিয়ার পরীক্ষায় এক বার অকৃতকার্য হলে দ্বিতীয় বার পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ আছে, কিন্তু এই পরীক্ষা একবারই হয়। দ্বিতীয় বার পরীক্ষায় অংশগ্রহণের কোনো সুযোগ নেই। তাই প্রতিটি মুমিনের উচিত, সময় থাকতে নিজেদের সব পাপ থেকে বিরত হয়ে আল্লাহর পথে ধাবিত হওয়া। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘প্রত্যেকের জন্যই একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্য আছে, সেদিকেই সে মুখ করে। কাজেই তোমরা সত্ কাজের দিকে ধাবমান হও। যেখানেই তোমরা অবস্থান কর, আল্লাহ তোমাদের সকলকে একত্রিত করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সকল বস্তুর উপর ক্ষমতাবান। (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৪৮)

মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে জীবন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমাদের সব পাপ ও উদাসীনতা ক্ষমা করুন। আমিন।