শিরোনাম :
Logo তারেক রহমানের নির্দেশে সেই ড্রোন নির্মাতার বাসায় ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ Logo ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বৈঠকে মির্জা ফখরুল Logo তারেক রহমানের বক্তব্যের সঙ্গে একমত জানিয়ে যা বললেন সারজিস Logo নিম্নমানের কাগজে পাঠ্যবই ছেপে শতকোটি টাকা লোপাট Logo সরকারি চাকরি সংশোধন অধ্যাদেশ-২০২৫ নিয়ে নতুন বার্তা আইন উপদেষ্টার Logo জুন শেষ না হতেই করোনায় চার মৃত্যু Logo ‘ইসরায়েল গোটা অঞ্চলে আগ্রাসনে নেমেছে, ইসলামী দেশগুলোর সম্মিলিত অবস্থান অত্যন্ত জরুরি’ Logo আরও দুই মোসাদের গুপ্তচর গ্রেপ্তার Logo সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ইবি শিক্ষার্থী Logo ইসরায়েলের পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার নিয়ে বিশ্ব সম্প্রদায়কে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান পাকিস্তানের

ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসায় সরকারের নতুন সিদ্ধান্ত

  • নীলকন্ঠ অনলাইন নীলকন্ঠ অনলাইন
  • আপডেট সময় : ০৩:২৬:৪৬ অপরাহ্ণ, শনিবার, ৫ এপ্রিল ২০২৫
  • ৭৪৭ বার পড়া হয়েছে
বাংলাদেশের ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসার জন্য বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে চলেছে। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় প্রথমবারের মতো একটি নতুন পরিপত্র তৈরি করতে যাচ্ছে, যা দেশের এয়ার টিকিট বিক্রির প্রক্রিয়ায় বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে।

মন্ত্রণালয়ের খসড়া পরিপত্রের এক ধারা অনুযায়ী, এক ট্রাভেল এজেন্সি আরেক ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে এয়ার টিকিট বিক্রি করতে পারবে না। পদক্ষেপটি গ্রাহকদের হয়রানি প্রতিরোধ ও ব্যবসায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছে। যদিও এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানিয়েছেন দেশের অনেক ট্রাভেল এজেন্সির মালিকরা।

কী এমন সমস্যা?

বিশ্বব্যাপী ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসায় “এজেন্ট টু এজেন্ট” (B2B) মডেল দীর্ঘদিন ধরেই প্রচলিত। এর মাধ্যমে এক ট্রাভেল এজেন্সি অন্য এজেন্সির মাধ্যমে টিকিট বিক্রি ও ক্রয় করে। কিন্তু বাংলাদেশে যদি এই নিয়ম বন্ধ করা হয়, তবে দেশে বহু ছোট এবং মাঝারি আকারের ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসা পরিচালনা করা বন্ধ করে দিতে পারে। এসব এজেন্সি যদি অন্য এজেন্সির মাধ্যমে টিকিট সংগ্রহ করতে না পারে, তবে তাদের অস্তিত্ব সংকটে পড়বে।

আইএটিএ সদস্যপদ: বাধ্যতামূলক নয়?

নতুন পরিপত্রে বলা হয়েছে, ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য অবশ্যই আন্তর্জাতিক এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইএটিএ) থেকে সদস্যপদ নিতে হবে। বর্তমানে, দেশে ৫,৭৪৬টি লাইসেন্সধারী ট্রাভেল এজেন্সি রয়েছে, এর মধ্যে মাত্র ৯৭০টি এজেন্সি আইএটিএ অনুমোদিত। আইএটিএ সদস্যপদ গ্রহণের জন্য ৩০ লাখ টাকার ব্যাংক গ্যারান্টি প্রয়োজন, যা অধিকাংশ ছোট এজেন্সির পক্ষে সম্ভব নয়। এর ফলে, তারা বড় এয়ারলাইন্সের টিকিট বিক্রি করতে পারবে না এবং ব্যবসা পরিচালনা করা তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে।

ব্যবসায়ীরা কী বলছেন?

বিষয়টি নিয়ে ট্রাভেল এজেন্সির মালিকরা বলছেন- নতুন পরিপত্র কার্যকর হলে, ছোট এজেন্সিগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। “বড় এজেন্সিগুলো বাজার নিয়ন্ত্রণ করবে এবং ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিযোগিতায় টিকিট সংগ্রহের সুযোগ হারাবে,” বলছেন মঈন ট্রাভেলসের স্বত্বাধিকারী মো. গোফরান চৌধুরী।

তিনি আরও বলেন, যদি এই পরিপত্র কার্যকর হয়, তবে একচেটিয়া ব্যবসার সুযোগ তৈরি হবে, যা বিদেশি এজেন্টরা গ্রহণ করবে।

এছাড়া দেশের বিভিন্ন শহরে অধিকাংশ ট্রাভেল এজেন্সি আইএটিএ সদস্যপদ পায়নি। এই পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হলে, দেশের ছোট শহরের যাত্রীরা টিকিট সংগ্রহ করতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়বে এবং তাদের খরচও বাড়বে।

মন্ত্রণালয়ের অবস্থান

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এই খসড়া পরিপত্র নিয়ে একাধিক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে, তবে এটি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পর্যটন) ফাতেমা রহিম ভীনা প্রথম আলোকে জানান, এ বিষয়ে তিনি এখনো কোনো মন্তব্য করবেন না।

ভিন্ন দৃষ্টিকোণ

অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশের (আটাব) মহাসচিব আফসিয়া জান্নাত সালেহ জানিয়েছেন, “এজেন্ট টু এজেন্ট টিকিট ক্রয়-বিক্রয় বন্ধ করার প্রস্তাবের সঙ্গে আমরা একমত নই।

পাঁচ হাজারেরও বেশি ট্রাভেল এজেন্টের মধ্যে কয়েকটি মাত্র আইএটিএ সদস্য, তাহলে বাকিরা কীভাবে ব্যবসা করবে?” তার মতে, এটি পুরো ট্রাভেল খাতের জন্য ক্ষতিকর হবে এবং স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সুবিধা হ্রাস পাবে।

সামগ্রিক প্রভাব

এটি স্পষ্ট যে, বাংলাদেশের ট্রাভেল এজেন্সি খাতে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আসছে। যদি নতুন পরিপত্র কার্যকর হয়, তবে সারা দেশে হাজারো ট্রাভেল এজেন্সি বন্ধ হয়ে যেতে পারে এবং একচেটিয়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। তবে, ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা যে, এই পরিবর্তন স্থানীয় প্রতিযোগিতা ও বৈচিত্র্যকে সংকুচিত করবে, সেগুলো মন্ত্রণালয়ের নজরে আনতে হবে।

এখন দেখার বিষয় হলো, মন্ত্রণালয় এই খসড়া পরিপত্রের উপর কী সিদ্ধান্ত নেয় এবং এটি কিভাবে বাংলাদেশের ট্রাভেল ব্যবসাকে প্রভাবিত করে।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

তারেক রহমানের নির্দেশে সেই ড্রোন নির্মাতার বাসায় ‘আমরা বিএনপি পরিবার’

ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসায় সরকারের নতুন সিদ্ধান্ত

আপডেট সময় : ০৩:২৬:৪৬ অপরাহ্ণ, শনিবার, ৫ এপ্রিল ২০২৫
বাংলাদেশের ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসার জন্য বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে চলেছে। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় প্রথমবারের মতো একটি নতুন পরিপত্র তৈরি করতে যাচ্ছে, যা দেশের এয়ার টিকিট বিক্রির প্রক্রিয়ায় বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে।

মন্ত্রণালয়ের খসড়া পরিপত্রের এক ধারা অনুযায়ী, এক ট্রাভেল এজেন্সি আরেক ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে এয়ার টিকিট বিক্রি করতে পারবে না। পদক্ষেপটি গ্রাহকদের হয়রানি প্রতিরোধ ও ব্যবসায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছে। যদিও এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানিয়েছেন দেশের অনেক ট্রাভেল এজেন্সির মালিকরা।

কী এমন সমস্যা?

বিশ্বব্যাপী ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসায় “এজেন্ট টু এজেন্ট” (B2B) মডেল দীর্ঘদিন ধরেই প্রচলিত। এর মাধ্যমে এক ট্রাভেল এজেন্সি অন্য এজেন্সির মাধ্যমে টিকিট বিক্রি ও ক্রয় করে। কিন্তু বাংলাদেশে যদি এই নিয়ম বন্ধ করা হয়, তবে দেশে বহু ছোট এবং মাঝারি আকারের ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসা পরিচালনা করা বন্ধ করে দিতে পারে। এসব এজেন্সি যদি অন্য এজেন্সির মাধ্যমে টিকিট সংগ্রহ করতে না পারে, তবে তাদের অস্তিত্ব সংকটে পড়বে।

আইএটিএ সদস্যপদ: বাধ্যতামূলক নয়?

নতুন পরিপত্রে বলা হয়েছে, ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য অবশ্যই আন্তর্জাতিক এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইএটিএ) থেকে সদস্যপদ নিতে হবে। বর্তমানে, দেশে ৫,৭৪৬টি লাইসেন্সধারী ট্রাভেল এজেন্সি রয়েছে, এর মধ্যে মাত্র ৯৭০টি এজেন্সি আইএটিএ অনুমোদিত। আইএটিএ সদস্যপদ গ্রহণের জন্য ৩০ লাখ টাকার ব্যাংক গ্যারান্টি প্রয়োজন, যা অধিকাংশ ছোট এজেন্সির পক্ষে সম্ভব নয়। এর ফলে, তারা বড় এয়ারলাইন্সের টিকিট বিক্রি করতে পারবে না এবং ব্যবসা পরিচালনা করা তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে।

ব্যবসায়ীরা কী বলছেন?

বিষয়টি নিয়ে ট্রাভেল এজেন্সির মালিকরা বলছেন- নতুন পরিপত্র কার্যকর হলে, ছোট এজেন্সিগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। “বড় এজেন্সিগুলো বাজার নিয়ন্ত্রণ করবে এবং ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিযোগিতায় টিকিট সংগ্রহের সুযোগ হারাবে,” বলছেন মঈন ট্রাভেলসের স্বত্বাধিকারী মো. গোফরান চৌধুরী।

তিনি আরও বলেন, যদি এই পরিপত্র কার্যকর হয়, তবে একচেটিয়া ব্যবসার সুযোগ তৈরি হবে, যা বিদেশি এজেন্টরা গ্রহণ করবে।

এছাড়া দেশের বিভিন্ন শহরে অধিকাংশ ট্রাভেল এজেন্সি আইএটিএ সদস্যপদ পায়নি। এই পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হলে, দেশের ছোট শহরের যাত্রীরা টিকিট সংগ্রহ করতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়বে এবং তাদের খরচও বাড়বে।

মন্ত্রণালয়ের অবস্থান

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এই খসড়া পরিপত্র নিয়ে একাধিক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে, তবে এটি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পর্যটন) ফাতেমা রহিম ভীনা প্রথম আলোকে জানান, এ বিষয়ে তিনি এখনো কোনো মন্তব্য করবেন না।

ভিন্ন দৃষ্টিকোণ

অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশের (আটাব) মহাসচিব আফসিয়া জান্নাত সালেহ জানিয়েছেন, “এজেন্ট টু এজেন্ট টিকিট ক্রয়-বিক্রয় বন্ধ করার প্রস্তাবের সঙ্গে আমরা একমত নই।

পাঁচ হাজারেরও বেশি ট্রাভেল এজেন্টের মধ্যে কয়েকটি মাত্র আইএটিএ সদস্য, তাহলে বাকিরা কীভাবে ব্যবসা করবে?” তার মতে, এটি পুরো ট্রাভেল খাতের জন্য ক্ষতিকর হবে এবং স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সুবিধা হ্রাস পাবে।

সামগ্রিক প্রভাব

এটি স্পষ্ট যে, বাংলাদেশের ট্রাভেল এজেন্সি খাতে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আসছে। যদি নতুন পরিপত্র কার্যকর হয়, তবে সারা দেশে হাজারো ট্রাভেল এজেন্সি বন্ধ হয়ে যেতে পারে এবং একচেটিয়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। তবে, ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা যে, এই পরিবর্তন স্থানীয় প্রতিযোগিতা ও বৈচিত্র্যকে সংকুচিত করবে, সেগুলো মন্ত্রণালয়ের নজরে আনতে হবে।

এখন দেখার বিষয় হলো, মন্ত্রণালয় এই খসড়া পরিপত্রের উপর কী সিদ্ধান্ত নেয় এবং এটি কিভাবে বাংলাদেশের ট্রাভেল ব্যবসাকে প্রভাবিত করে।