২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস—বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গৌরবোজ্জ্বল দিন। এদিনটি কেবল একটি দিবস নয়, বরং একটি জাতির আত্মত্যাগ, সাহস ও বিজয়ের অনন্য প্রতীক।
১৯৭১ সালের এই দিনে বাঙালি জাতি প্রথমবারের মতো স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে এক রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১—বিশ্ব মানচিত্রে জন্ম নেয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।
স্বাধীনতা দিবস শুধু অতীতের গৌরব গাথা মনে করিয়ে দেয় না, এটি নতুন প্রজন্মের জন্য এগিয়ে চলার এক অবিরাম অনুপ্রেরণা। এই দিন আমাদের মনে করিয়ে দেয়, স্বাধীনতা কোনো উপহার নয়, এটি আত্মত্যাগ ও সংগ্রামের ফসল।
তাই এই দিনটি আমাদের মননে জাগিয়ে তোলে নতুন শপথ, প্রেরণা দেয় দায়িত্বশীল, সাহসী ও দেশপ্রেমিক নাগরিক হয়ে ওঠার। আজকের তরুণ প্রজন্মের কাছে স্বাধীনতা দিবস কেবল ইতিহাস নয়—এটি একটি চলমান অনুপ্রেরণা। জাতির বীর সন্তানদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীনতার মর্যাদা রক্ষা করাই আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।
মহান এই স্বাধীনতা দিবসে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত তরুণ শিক্ষার্থীদের ভাবনা ও প্রত্যাশা তুলে ধরেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি সুবংকর রায় শুভ।
সামাজিক সুবিচার, বিদেশি আধিপত্যহীন রাষ্ট্র ও ন্যায়ের সমাজ প্রতিষ্ঠিত হোক
পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকশ্রেণীর দীর্ঘ ২৩ বছরের বৈষম্য ও বঞ্চনার ফলে বাংলার স্বাধীনতা অনিবার্য হয়েছিল। ৭১ সালের ২৬ এ মার্চে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার সেই সাহসী ঘোষণা যেন পাকিস্তানের অন্যায় ও অবিচারের প্রাচীরকে ভেঙে চুর্ণ করেছিল।
কিন্তু বাংলার স্বাধীনতাকমাী বিপ্লবী জনতা আসলে কি চেয়েছিল? এই প্রশ্ন আবারও উত্থাপিত হওয়া দরকার। বাংলার মানুষ মূলত স্বাধীন জাতিরাষ্ট্র, সামাজিক সুবিচার ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ বিনির্মানের স্বপ্ন দেখেছিল যে কারণে তারা দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিল।
অবশেষে বুকভরা স্বপ্ন নিয়ে তারা পাকহানদার বাহিনী থেকে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনলেও তাদের কাঙ্খিত লক্ষ্য বাস্তবায়ন হয়নি, সেজন্য ৫৪ বছর পরেও অতীতের দিকে তাকিয়ে তারা সেই স্বপ্ন আবার বুকে ধারণ করতে চাই । সামাজিক সুবিচার, বিদেশি আধিপত্যহীন রাষ্ট্র ও ন্যায়ের সমাজ গঠনের স্বপ্ন বাংলার মানুষ স্বাধীনতা দিবসে আবারো দেখতে চাই।
তানভীর শেখ, ইংরেজি বিভাগ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।
তরুণ প্রজন্মের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস ছড়িয়ে পড়ুক
স্বাধীনতা শব্দটি বহুল কাঙ্ক্ষিত। ২৬ মার্চ বাঙালি জাতির জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় শুরু হয়েছিলো। সেই কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা অর্জনের মহান প্রয়াস শুরু হয়েছিলো এই দিনে। বাঙালি জাতি তার অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে নেমেছিলো এই দিনে। দিনটি এজন্যেই আজ স্বাধীনতা দিবসের স্বীকৃতি পেয়েছে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস শুধু একটি তারিখ নয়, এটি বাঙালির আত্মত্যাগ, সাহস এবং বিজয়ের প্রতীক। ২৬ মার্চ আমাদের জাতীয় গৌরবের দিন, যে দিনে আমরা পাকিস্তানি শাসন থেকে মুক্তির পথে প্রথম পদক্ষেপ নিয়েছিলাম। লাখো শহীদের রক্ত, নির্যাতিত মা-বোনের আত্মত্যাগ, মুক্তিযোদ্ধাদের অদম্য সাহস—এই সবকিছুর বিনিময়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীন বাংলাদেশ।
আমার প্রত্যাশা, স্বাধীনতার প্রকৃত মূল্য যেন আমরা উপলব্ধি করি। শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিকতা নয়, আমাদের মন থেকে দেশপ্রেম জাগ্রত করতে হবে। স্বাধীনতা যেন কেবল স্মৃতির পাতায় সীমাবদ্ধ না থাকে, বরং আমাদের প্রতিদিনের কাজে, ন্যায়বিচারে, দুর্নীতি ও বৈষম্যহীন সমাজ গঠনে প্রতিফলিত হয়।
এছাড়াও, তরুণ প্রজন্ম যেন মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে পারে এবং স্বাধীনতার আদর্শকে বুকে ধারণ করে এগিয়ে যায়। দেশপ্রেম মানে শুধু পতাকা বহন করা নয়, বরং নিজের জায়গা থেকে দেশের জন্য ভালো কিছু করা। উন্নত, শান্তিপূর্ণ এবং প্রগতিশীল বাংলাদেশ গড়ার দায়িত্ব আমাদের সবার।
সিনথিয়া সরকার, কমিউনিকেশন অ্যান্ড মাল্টিমিডিয়া জার্নালিজম বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।।
স্বাধীনতার চেতনায় শোষণমুক্ত, বৈষম্যহীন দেশ গড়ে উঠুক
২৬ মার্চ আমাদের স্বাধীনতা দিবস, একটি গৌরবোজ্জ্বল দিন যা বাঙালির অস্তিত্ব ও স্বাধিকার সংগ্রামের চূড়ান্ত বিজয়কে চিহ্নিত করে। ১৯৭১ সালের এই দিনে এক রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের সূচনা হয়েছিল, যা ৯ মাস পরে ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয়ে রূপ নেয়। এই দিনটি আমাদের জন্য শুধু ইতিহাসের পাতাই নয়, তাৎপর্যের একটি প্রেরণাদায়ক অধ্যায়। স্বাধীনতা দিবসে আমরা গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করি ত্রিশ লক্ষ শহীদ ও দুই লক্ষ মা-বোনের আত্মত্যাগকে, যাদের রক্তে রাঙানো এই মাটি।
বর্তমানে স্বাধীনতা দিবসে আমাদের ভাবনা জড়িয়ে থাকে দেশের অগ্রগতি ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন, ডিজিটালাইজেশন, এবং অবকাঠামোগত পরিবর্তন প্রশংসনীয় হলেও সামাজিক, রাজনৈতিক বিভক্তি, এবং পরিবেশগত সংকট মোকাবিলা প্রয়োজন।
আমার প্রত্যাশা, বাংলাদেশ এমন একটি সমাজ গঠন করবে, যেখানে ন্যায়বিচার, স্বচ্ছতা, এবং গণতন্ত্রের মূল্যাবোধ প্রতিষ্ঠিত হবে। এখানে আইনের শতভাগ প্রয়োগ নিশ্চিত থাকবে, প্রত্যেকে তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হবে। শিক্ষা, গবেষণা, এবং প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করে আমরা একটি জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি গড়ে তুলতে চাই, যেখানে তরুণরা প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকবে।
স্বাধীনতার চেতনা হলো শোষণমুক্ত, বৈষম্যহীন একটি দেশ গড়া। আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে বাংলাদেশকে সোনার বাংলায় পরিণত করার স্বপ্ন দেখতে হবে, যেখানে নাগরিকের মৌলিক অধিকার সুরক্ষিত হবে এবং উন্নয়নের সুফল সর্বস্তরে পৌঁছাবে।
মোঃ মিজানুর রহমান, ইংরেজি বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।
স্বাধীনতার সঠিক মূল্যায়ন করতে হবে
২৬ মার্চ বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গৌরবময় দিন।১৯৭১ সালের এই দিনে আমরা পাকিস্তানের নির্যাতন,শাসন ও শোষণের শৃঙ্খল ভেঙে স্বাধীনতার পথে যাত্রা শুরু করি। সেদিন শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে বাংলার বীর সন্তানেরা জীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন।
তাদের আত্মত্যাগের ফলেই আমরা আজ স্বাধীন,গর্বিত এক জাতি।আজকে আমরা পুরো বিশ্বে বাংলাদেশ নামে পরিচিত।আমাদের আছে নিজস্ব ভূখন্ড, পতাকা, মানচিত্র। গর্বের সাথে পরিচয় দিতে পারি আমি একজন স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক।
এই দিনটি কেবল উদযাপনের নয়, আমাদের দায়িত্ব স্মরণ করারও দিন।
স্বাধীনতার চেতনা শুধু আনুষ্ঠানিকতায় সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না, বরং তা অন্তরে ধারণ করতে হবে। দেশপ্রেম, সততা ও ন্যায়ের পথ অনুসরণ করলেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বাস্তবায়ন করা সম্ভব।আসুন, আমরা সকলে স্বাধীনতার মর্যাদা রক্ষা করব, দেশ গড়ার কাজে নিজেদের নিয়োজিত রাখব। শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা সব শহীদদের প্রতি,যাঁরা এই দিনের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন।
খোকন বর্মন, ল’ অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।
জাতীয় গৌরব ও আত্মমর্যাদার প্রতীক স্বাধীনতা দিবস
এটি শুধু একটি দিবস নয়; এটি আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগ, সংগ্রাম ও বীরত্বের স্মারক। এই দিনে আমরা স্বাধীনতার প্রকৃত অর্থ উপলব্ধি করি এবং আমাদের দেশকে আরও উন্নত, সমৃদ্ধ ও সুশৃঙ্খল করার সংকল্প করি।
স্বাধীনতা দিবসে এই প্রত্যাশা রাখি যে—স্বাধীনতার চেতনা যেন কেবল আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে, বরং এটি আমাদের প্রতিদিনের চিন্তা ও কর্মকাণ্ডে প্রতিফলিত হয়। সত্যিকারের স্বাধীনতা তখনই অর্জিত হবে, যখন আমরা বৈষম্য, দুর্নীতি ও অসহিষ্ণুতা দূর করে একটি শান্তিপূর্ণ, ন্যায়ভিত্তিক ও টেকসই সমাজ গড়তে পারব।
এছাড়াও, প্রযুক্তি ও শিক্ষার প্রসার ঘটিয়ে আমাদের তরুণদের দক্ষ করে গড়ে তোলা উচিত, যাতে তারা বিশ্ব দরবারে আমাদের দেশকে মর্যাদার সাথে উপস্থাপন করতে পারে। স্বাধীনতা শুধু অর্জনের বিষয় নয়, এটি রক্ষা করার এবং এর সুফল সবার কাছে পৌঁছে দেওয়ারও দায়িত্ব বহন করে। তাই, আসুন সবাই মিলে স্বাধীনতার আদর্শকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য কাজ করি।
অনুত্তর চাকমা, মার্কেটিং বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।