ইসলামে নারী-পুরুষের ইতিকাফ

  • নীলকন্ঠ অনলাইন নীলকন্ঠ অনলাইন
  • আপডেট সময় : ০৪:০২:১২ অপরাহ্ণ, সোমবার, ২৪ মার্চ ২০২৫
  • ৭০৮ বার পড়া হয়েছে
ইতিকাফ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। আত্মশুদ্ধি, ইবাদতের প্রতি একাগ্রতা ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মাধ্যম। ইতিকাফ সুপ্রাচীন ইবাদত হওয়ায় যুগে যুগে এর আমল হয়েছে। ইতেকাফ করার জন্য মসজিদকে পবিত্র রাখা নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘আর আমি (আল্লাহ) ইবরাহিম ও ইসমাঈলকে আদেশ দিলাম যে তোমরা আমার গৃহকে তাওয়াফকারী, ইতিকাফকারী, রুকু ও সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র রাখো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১২৫)
ইতিকাফ সংক্রান্ত জরুরি কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করা হলো—

ইতিকাফের শর্ত
ইতেকাফের প্রধান শর্ত তিনটি—
এক. ইতিকাফের নিয়ত করতে হবে।
দুই. এমন মসজিদে ইতেকাফ হতে হবে যেখানে নামাজের জামাত হয়। জুমার জামাত হোক বা না হোক। তিন. মহিলাদের ক্ষেত্রে হায়েজ-নেফাস থেকে পবিত্র হতে হবে। (আহকামে জিন্দেগী, পৃষ্ঠা : ২৫৭)

ইতিকাফের প্রকার
ইতিকাফ তিন প্রকার—এক. ওয়াজিব। এটা হলো মান্নতের ইতিকাফ। মান্নতের ইতিকাফের জন্য রোজা রাখা শর্ত। সুন্নত ইতিকাফ ফাসেদ হয়ে গেলেও তার কাজা আদায় করা ওয়াজিব। (বুখারি, হাদিস : ১৯১৪)

দুই. সুন্নাতে মুআক্কাদা কিফায়া। এটা হলো রমজানের শেষ দশকের ইতিকাফ। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানের শেষ দশক ইতিকাফ করতেন। তার ওফাত পর্যন্ত এই নিয়মই ছিল। এরপর তার সহধর্মিণীরাও (সে দিনগুলোতে) ইতিকাফ করতেন। (বুখারি, হাদিস : ১৮৯৯)

রমজানের ২০ তারিখ সূর্যাস্তের আগ থেকে ঈদুল ফিতরের চাঁদ দেখা পর্যন্ত ইতিকাফের সময়। বড় গ্রাম বা শহরের প্রত্যেকটা মহল্লা এবং ছোট গ্রামের পূর্ণ বসতিতে কেউ কেউ ইতিকাফ করলে সকলেই দায়িত্বমুক্ত হয়ে যাবে। আর কেউই না করলে সকলেই সুন্নাত তরকের জন্য দায়ী হবে।

তিন. মুস্তাহাব বা নফল ইতিকাফ। এই ইতিকাফের জন্য কোন দিন বা সময়ের পরিমাপ নেই এবং রোজাও শর্ত নয়। অল্প সল্প সময়ের জন্যও তা হতে পারে।

মহিলাদের ইতিকাফের স্থান
পুরুষদের মতো মহিলাদের জন্যও রমজানের শেষ দশকের ইতিকাফ সুন্নত। এজন্য বাড়িতে মহিলাদের নিজের ঘরে পূর্ব থেকে নামাজের জন্য নির্ধারিত জায়গা থাকলে সেখানে অথবা জায়গা নির্ধারিত করে সেখানে ইতিকাফ করা সর্বোত্তম। এটাই নিরাপদ এবং সওয়াব অর্জনের মাধ্যমে। তবে কোনো মহিলা যদি মসজিদে পূর্ণ পর্দার সাথে ইতিকাফ করে তাহলে তা মাকরুহের সঙ্গে আদায় হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর একাধিক স্ত্রী মসজিদে ইতিকাফ করতে চাওয়ায় তিনি তখন ইতিকাফ করেননি। পরে কাজা আদায় করেছেন। এখান থেকে বোঝা যায়, ইতিকাফের বিধানটি মূলত পুরুষদের জন্য মসজিদের সাথে সম্পৃক্ত—নারীদের জন্য নয়। (দেখুন—বুখারি, হাদিস : ১৯০৫)

ইতিকাফ ভাঙার কারণ
ইতিকাফ পালনের জন্য কিছু নিয়ম ও শর্ত আছে। এগুলো মেনে চলা আবশ্যক। যদি কেউ শর্তভঙ্গকারী কোনো কাজ করে তাহলে তার ইতিকাফ ভেঙে যাবে।
এক. স্ত্রী সহবাস করলে ইতিকাফ ফাসেদ হয়ে যায়। চাই বীর্যপাত হোক বা না হোক, ইচ্ছাকৃত হোক বা ভুলে হোক। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, আর তোমরা মসজিদে ইতিকাফরত অবস্থায় তাদের সাথে মিলিত হয়ো না। এগুলো আল্লাহর সীমারেখা। কাজেই এগুলোর নিকটবর্তী হয়ো না। (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৭)

দুই. ইতিকাফের স্থান থেকে শরীআত সম্মত প্রয়োজন বা স্বাভাবিক প্রয়োজন ছাড়া বের হলে ইতিকাফ ফাসেদ হয়ে যায়। শরীআত সম্মত প্রয়োজন হলে বাইরে যাওয়া যায়। যেমন ফরজ গোসলের জন্য বের হওয়া ইত্যাদি। আর স্বাভাবিক প্রয়োজনেও বের হওয়া যায়। যেমন পেশাব-পায়খানার জন্য বের হওয়া, খাদ্য-খাবার এনে দেয়ার লোক না থাকলে খাওয়ার জন্য বের হওয়া, ইত্যাদি। যে কাজের জন্য বাইরে যাওয়া হবে সে কাজ সমাপ্ত করার পর সত্বর ফিরে আসতে হবে। বিনা প্রয়োজনে কারও সাথে কথা বলবে না। আয়েশা (রা.) থেকে বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) মসজিদে থাকাবস্থায় আমার দিকে মাথা বাড়িয়ে দিতেন আর আমি তা আঁঁচড়িয়ে দিতাম এবং তিনি যখন ইতিকাফে থাকতেন, তখন (প্রাকৃতিক) প্রয়োজন ছাড়া ঘরে প্রবেশ করতেন না। (বুখারি, হাদিস : ১৯০২)

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

ইসলামে নারী-পুরুষের ইতিকাফ

আপডেট সময় : ০৪:০২:১২ অপরাহ্ণ, সোমবার, ২৪ মার্চ ২০২৫
ইতিকাফ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। আত্মশুদ্ধি, ইবাদতের প্রতি একাগ্রতা ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মাধ্যম। ইতিকাফ সুপ্রাচীন ইবাদত হওয়ায় যুগে যুগে এর আমল হয়েছে। ইতেকাফ করার জন্য মসজিদকে পবিত্র রাখা নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘আর আমি (আল্লাহ) ইবরাহিম ও ইসমাঈলকে আদেশ দিলাম যে তোমরা আমার গৃহকে তাওয়াফকারী, ইতিকাফকারী, রুকু ও সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র রাখো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১২৫)
ইতিকাফ সংক্রান্ত জরুরি কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করা হলো—

ইতিকাফের শর্ত
ইতেকাফের প্রধান শর্ত তিনটি—
এক. ইতিকাফের নিয়ত করতে হবে।
দুই. এমন মসজিদে ইতেকাফ হতে হবে যেখানে নামাজের জামাত হয়। জুমার জামাত হোক বা না হোক। তিন. মহিলাদের ক্ষেত্রে হায়েজ-নেফাস থেকে পবিত্র হতে হবে। (আহকামে জিন্দেগী, পৃষ্ঠা : ২৫৭)

ইতিকাফের প্রকার
ইতিকাফ তিন প্রকার—এক. ওয়াজিব। এটা হলো মান্নতের ইতিকাফ। মান্নতের ইতিকাফের জন্য রোজা রাখা শর্ত। সুন্নত ইতিকাফ ফাসেদ হয়ে গেলেও তার কাজা আদায় করা ওয়াজিব। (বুখারি, হাদিস : ১৯১৪)

দুই. সুন্নাতে মুআক্কাদা কিফায়া। এটা হলো রমজানের শেষ দশকের ইতিকাফ। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানের শেষ দশক ইতিকাফ করতেন। তার ওফাত পর্যন্ত এই নিয়মই ছিল। এরপর তার সহধর্মিণীরাও (সে দিনগুলোতে) ইতিকাফ করতেন। (বুখারি, হাদিস : ১৮৯৯)

রমজানের ২০ তারিখ সূর্যাস্তের আগ থেকে ঈদুল ফিতরের চাঁদ দেখা পর্যন্ত ইতিকাফের সময়। বড় গ্রাম বা শহরের প্রত্যেকটা মহল্লা এবং ছোট গ্রামের পূর্ণ বসতিতে কেউ কেউ ইতিকাফ করলে সকলেই দায়িত্বমুক্ত হয়ে যাবে। আর কেউই না করলে সকলেই সুন্নাত তরকের জন্য দায়ী হবে।

তিন. মুস্তাহাব বা নফল ইতিকাফ। এই ইতিকাফের জন্য কোন দিন বা সময়ের পরিমাপ নেই এবং রোজাও শর্ত নয়। অল্প সল্প সময়ের জন্যও তা হতে পারে।

মহিলাদের ইতিকাফের স্থান
পুরুষদের মতো মহিলাদের জন্যও রমজানের শেষ দশকের ইতিকাফ সুন্নত। এজন্য বাড়িতে মহিলাদের নিজের ঘরে পূর্ব থেকে নামাজের জন্য নির্ধারিত জায়গা থাকলে সেখানে অথবা জায়গা নির্ধারিত করে সেখানে ইতিকাফ করা সর্বোত্তম। এটাই নিরাপদ এবং সওয়াব অর্জনের মাধ্যমে। তবে কোনো মহিলা যদি মসজিদে পূর্ণ পর্দার সাথে ইতিকাফ করে তাহলে তা মাকরুহের সঙ্গে আদায় হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর একাধিক স্ত্রী মসজিদে ইতিকাফ করতে চাওয়ায় তিনি তখন ইতিকাফ করেননি। পরে কাজা আদায় করেছেন। এখান থেকে বোঝা যায়, ইতিকাফের বিধানটি মূলত পুরুষদের জন্য মসজিদের সাথে সম্পৃক্ত—নারীদের জন্য নয়। (দেখুন—বুখারি, হাদিস : ১৯০৫)

ইতিকাফ ভাঙার কারণ
ইতিকাফ পালনের জন্য কিছু নিয়ম ও শর্ত আছে। এগুলো মেনে চলা আবশ্যক। যদি কেউ শর্তভঙ্গকারী কোনো কাজ করে তাহলে তার ইতিকাফ ভেঙে যাবে।
এক. স্ত্রী সহবাস করলে ইতিকাফ ফাসেদ হয়ে যায়। চাই বীর্যপাত হোক বা না হোক, ইচ্ছাকৃত হোক বা ভুলে হোক। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, আর তোমরা মসজিদে ইতিকাফরত অবস্থায় তাদের সাথে মিলিত হয়ো না। এগুলো আল্লাহর সীমারেখা। কাজেই এগুলোর নিকটবর্তী হয়ো না। (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৭)

দুই. ইতিকাফের স্থান থেকে শরীআত সম্মত প্রয়োজন বা স্বাভাবিক প্রয়োজন ছাড়া বের হলে ইতিকাফ ফাসেদ হয়ে যায়। শরীআত সম্মত প্রয়োজন হলে বাইরে যাওয়া যায়। যেমন ফরজ গোসলের জন্য বের হওয়া ইত্যাদি। আর স্বাভাবিক প্রয়োজনেও বের হওয়া যায়। যেমন পেশাব-পায়খানার জন্য বের হওয়া, খাদ্য-খাবার এনে দেয়ার লোক না থাকলে খাওয়ার জন্য বের হওয়া, ইত্যাদি। যে কাজের জন্য বাইরে যাওয়া হবে সে কাজ সমাপ্ত করার পর সত্বর ফিরে আসতে হবে। বিনা প্রয়োজনে কারও সাথে কথা বলবে না। আয়েশা (রা.) থেকে বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) মসজিদে থাকাবস্থায় আমার দিকে মাথা বাড়িয়ে দিতেন আর আমি তা আঁঁচড়িয়ে দিতাম এবং তিনি যখন ইতিকাফে থাকতেন, তখন (প্রাকৃতিক) প্রয়োজন ছাড়া ঘরে প্রবেশ করতেন না। (বুখারি, হাদিস : ১৯০২)