সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলায় ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুনন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালের কিছু ডাক্তার নিয়ম বহির্ভূতভাবে বেসরকারি ক্লিনিকগুলোতে নিয়মিত সেবা দিয়ে আসছে। এতে যথাসময়ে ডাক্তার না আসায় সেবা নিতে আসা রোগীরা প্রতিদিনই ফেরত যেতে হচ্ছে।
এদিকে ডাক্তারদের সুবিধায় হাসপাতালের নিজস্ব নিয়োগকৃত ২১জন মেডিকেল এ্যাসিসটেন্টদের (স্যাকমো) দিয়ে রোগীদের চিকিৎসা পরিচালনা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। হাসপাতালে চিকিৎসকের অনুপস্থিতে এমন স্যাকমোদের দিয়ে প্রেসক্রিপশন করায় বিভ্রান্ত হয়ে পড়ছেন চিকিৎসা নিতে আসা অনেক রোগী। রোগীর তথ্য, পরীক্ষা চিহ্নিতকরণ, রোগ নির্নয়, পরামর্শসহ নানান ডিজিটাল কায়দায় হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে কিছু অসাধু কর্মকর্তা।
হাসপাতাল কর্মকর্তাদের যোগসাজসে সরকারি বেসরকারী মেডিকেল এ্যাসিসটেন্টদের (স্যাকমো) ৯ মাস ইন্টার্নীর ব্যবস্থা থাকলেও তারা কয়েক বছর ধরে কর্মরত আছেন এবং রোগীদের কাছ থেকে তারা প্রতিদিন চিকিৎসা দেবার নাম করে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে একাধিকসূত্রে জানা গেছে। এতে জেলার লাখ লাখ মানুষ ডাক্তারদের উন্নত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
সম্প্রতি, সিরাজগঞ্জ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুনন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার রতন কুমার রায় দুর্নীতি ও অশ্লীল আচরণে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়ে বরিশালে বদলী হয়েছেন। এই সুযোগে হাসপাতালের সকল অনিয়ম সাবেক তত্ত্বাবধায়ককে দায়ী করছেন কর্তৃপক্ষ।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুনন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালের ডাক্তার অফিস টাইমে সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে সেবা প্রদান করে অর্থ উপার্জন করার জন্য ডাক্তারদের নিজস্ব কলাকৌশল ব্যবহার করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে ফাঁকি দিয়ে ২১জন স্যাকমোর বায়োডাটা জমা নিয়ে ৬টি বিভাগে চিকিৎসা সেবা প্রদান করার দায়িত্ব প্রদান করা হয়। হাসপাতালের ৬টি বিভাগের ভর্তিকৃত সকল রোগী চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন বহিরাগত ২১জন স্যাকমো। আর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পদায়নকৃত বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা সিরাজগঞ্জ শহরের বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিক, নিজস্ব চেম্বারে রোগীদের চিকিৎসা সেবা অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে।। এতে সিরাজগঞ্জে স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হত সাধারণ জনসাধারণ।
অপরদিকে ২১জনের প্রত্যেককে ১২ হাজার টাকা থেকে ১৫ হাজার করে প্রতিমাসে প্রায় ৩ লাখ টাকা বেতন প্রদান করত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। প্রত্যেক ডাক্তারের বেতন থেকে ৫ হাজার, প্রতিনিধি ওষুধ কোম্পানী থেকে ৫ হাজার ও পরীক্ষার নামে বিভিন্ন ফি বাবদ ৫০-৮০ টাকাসহ জখমি চিকিৎসা সনদের সহকারী হিসেবে নানা কাজে জড়িত থাকেন।
আরো জানা যায়, মেডিসিন বিভাগে ডাঃ মিতুল ভৌমিক, ডাঃ মোঃ শামসুল আরেফিন সুজন, কনসালটেন্ট ডাঃ মোঃ আলতাফ হোসেন এর পরিবর্তে বহিরাগত স্যাকমো মোঃ মাসুদ রানা, মোঃ রাজু সিকদার, আরজু খাতুন চিকিৎসা সেবা প্রদান করছে। সার্জারী বিভাগের কর্তব্যরত সহকারি রেজিস্ট্রার ডাঃ মোঃ মুকুল হোসেন, ডাঃ আব্দুল মোমিন ও কনসালটেন্ট ডাঃ মোঃ আবু রায়হান ভূইয়া এর পরিবর্তে বহিরাগত স্যাকমো মোঃ রাজিব হাসান, মোঃ সোলায়মান কবীর, মোঃ কাওসার আহমেদ , মোঃ পলাশ, মোঃ আব্দুল্লাহ ও কৃষ্ণ কুমার চিকিৎসা সেবা প্রদান করছে। কার্ডিওলজি বিভাগের কর্তব্যরত সহকারী রেজিস্ট্রার ডাঃ সুভাষ চন্দ্র, কনসালটেন্ট ডাঃ সাজ্জাদ মাসুম এর পরিবর্তে মোছাঃ মিতু খাতুন, মোঃ মনিরুল ইসলাম জনি, মোঃ সাজ্জাদ হোসেন, মোঃ সাব্বির হোসেন ও সৌরভ সাহা চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। গাইনি বিভাগে ডাঃ ফারহানা খাতুন, ডাঃ আফরোজা খাতুন, ডাঃ বনানী রানী এর পরিবর্তে বহিরাগত স্যাকমো মোছাঃ লাকি খাতুন, সঞ্জয় কুমার চিকিৎসা সেবা প্রদান করছে। শিশু বিভাগের কর্তব্যরত সহকারী রেজিস্ট্রার ডাঃ মাহবুবুল আলম, ডাঃ জাকির হোসেন ও কনসালটেন্ট ডাঃ আবু সাঈদ এর পরিবর্তে বহিরাগত স্যাকমো নয়ন কুমারম, মোঃ লিটন চিকিৎসা সেবা প্রদান করছেন। গাইনী বহিঃবিভাগে কর্তব্যরত ডাঃ তাহমিনা আক্তার এর পরিবর্তে বহিরাগত স্যাকমো শ্যামলী খাতুন চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছেন।
এছাড়া বিনা রশিদে রোগী সেবা, ভুয়া রশিদে চিকিৎসায় পরীক্ষা- নিরীক্ষা, স্বাক্ষর জাল, ইসিজি ও ডায়াবেটিকসসহ নানা পরীক্ষায় ডিজিটাল কায়দায় অর্থ আত্মসাত করে আসছে কিছু অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারী। আর এদিকে উদ্বর্তন কর্তৃপক্ষের বহাল সুপারিশে এ ধরনের কাজ করে আসছেন বলে একাধিকসূত্রে জানা গেছে।
সরজমিনে এসব বিষয়ে সহকারি তত্ত্বাবধায়ক ডা. সাইফুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হাসপাতাল থেকে অনুমোদনের সাপেক্ষে কিছু অবৈতনিক স্যাকমোগণ রয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক নিজেই এগুলো পরিচালনা করতেন। বেতন পদ্ধতি, প্রতিষ্ঠানকর্তৃক অনুমোদনপত্র, কার্য পরিচালনা পদ্ধতি বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যান এবং বড় বাবু সব জানে বলে তাঁকে দেখিয়ে দেন।
এ বিষয়ে প্রধান সহকারি (বড় বাবু) আব্দুুল মান্নান বলেন, আমার কাছে কোন অনুমোদনপত্র বা এদের কোন নথিপত্র নেই। এগুলো কাগজপত্র তাদের কাছেই থাকার কথা। পরে চেয়ার থেকে উঠে সহকারি তত্ত্বাবধায়কের কাছে ঘুরে এসে বলেন, আমাদের কাছে এদের বিষয়ে কোন নথি নেই। সব কিছু সাবেক তত্ত্বাবধায়ক ডা. রতন কুমার রায় স্যার জানে।