বিপ্লব নাথ (চট্টগ্রাম) : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) প্রতিষ্ঠাকালীন ৪টি বিভাগের মধ্যে অন্যতম ইংরেজী বিভাগ। পথচলার ৫ দশকে এ বিভাগ জন্ম দিয়েছে হাজারো কৃতি শিক্ষার্থীর। যারা উজ্জ্বল করেছে বিভাগের মুখ।
কিন্তু দীর্ঘ সময় পেরোলেও সেশনজট মুক্ত হতে পারেনি বিশ্ববিদ্যায়ালয়ের প্রাচীনতম এ বিভাগ। যেটির ধারাবাহিকতা এখনও বিদ্যমান। ফলে সেশন জটে বিপন্ন শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন। হতাশামগ্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা তাই সেশন জটের দুষ্ট চক্র থেকে শেষমেশ দ্বারস্থ হয়েছেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যানের কাছে। লিখেছেন খোলা চিঠি।
চিঠিটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
‘শ্রদ্ধেয় আবদুল মান্নান স্যার,
সভাপতি, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আমরা মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি, সত্যিকারের শিক্ষার আলো একটি সমাজকে, একটি দেশকে উন্নতির সর্বোচ্চ উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে। আর এ দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সেই উদ্দেশেই জম্মলগ্ন থেকেই আলোকিত মানুষ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে চলেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে প্রাণবন্ত ও তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অবিচল রাখার গুরু দায়িত্ব ‘বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন’ সততা ও নিষ্ঠার সাথে পালন করে আসছে। আমরা জানি না, ইউজিসি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের বহুকাল ধরে বিদ্যমান সমস্যাগুলো সম্পর্কে কতটুকু অবগত, শুধু এতটুকু জানি ইউজিসি যদি বিভাগের শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ দূরীকরণে অনতিবিলম্বে যথাযথ ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে অসংখ্য শিক্ষার্থীদের সামনে, দিনের পর দিন ভয়াবহ সেশন জ্যাম আর অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া অন্য কোন পথ খোলা নেই।
চার বছরের স্নাতক পাস করতে যখন একজন শিক্ষার্থীর ৬-৭ বছর লাগে তখন, তার জীবনটা কতটা অনিশ্চয়তার মধ্যে কাটে সেটা বলে বুঝানোর ভাষা আমাদের জানা নেই। আমরা বেশিরভাগ ছেলে-মেয়েই কোনো না কোনো মধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে ওঠা সন্তান। আমাদের ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আছেন, আমাদের মা-বাবা, ভাই-বোন।
লেখাপড়ার পাঠ চুকিয়ে পরিবারের খুঁটি ধরার জন্য মুখিয়ে আছে অসংখ্য ছেলে-মেয়ে। আমাদের অন্যান্য ডিপার্টমেন্টের বন্ধু-বান্ধবরা যখন অনার্স লাইফ শেষ করে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করার প্রহর গুনছে, তখন চার্জলাইটের মৃদু আলোতে আমাদের ডিপার্টমেন্টের অনেকেই নিচ্ছে দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষার প্রস্তুতি।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক প্রায় সাত হাজার কর্মকর্তা নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। অসংখ্য তরুন গ্র্যাজুয়েট যখন একটা সরকারি চাকরির স্বপ্নে বিভোর, তখন আমাদের বিভাগের ২০১০-১১ সেশনের (৬ বছর ৯ মাস) শিক্ষার্থীরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে তাদের ফাইনাল ইয়ারের (চতুর্থ বর্ষের) রেজাল্ট প্রাপ্তির, যেটা ছাড়া চাকরির জন্য তারা আবেদন করতে পারছে না।
জানি সুযোগ সামনে আবার আসবে, কিন্তু জীবন থেকে যে মূল্যবান সময়গুলো, ডিপার্টমেন্টের প্রাতিষ্ঠানিক জটিলতা, সনাতন শিক্ষা ব্যবস্থা ও সনাতন পদ্ধতিতে ৫-৬ মাসে পরীক্ষার রেজাল্ট প্রকাশ হওয়ার কারণে হারিয়ে যাচ্ছে, তার দায়ভারটা কে নিবে?
বছরের পর বছর কি এইভাবেই চলতে থাকবে? বারবার ডিপার্টমেন্ট ও বিশ্ববিদ্যালয়ের যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করার পরও ডিপার্টমেন্টের সেশন জ্যামের এই ভয়াল থাবা থেকে শিক্ষার্থীরা কেন বের হতে পারছে না! আমাদের জীবন থেকে ২-৩ বছর কেড়ে নেওয়ার কারণে কোনদিন কেউ দুঃখ প্রকাশ করলো না, যত দুঃখ-কষ্ট বয়ে বেড়াতে হচ্ছে অভাগা শিক্ষার্থীদের! একটা স্বাধীন দেশে যেখানে তরুণদেরকে জাতির ভবিষ্যত হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সর্বোচ্চটা দেওয়ার কথা, সেখানে কেন এমনটা হবে?
স্যার, মাননীয় রাষ্ট্রপ্রতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পর, আপনিই আমাদের অভিভাবক। আপনার একটু চেষ্টাই পারে আমাদের মতো অসংখ্য শিক্ষার্থীকে সেশন জ্যাম নামক অন্ধকার থেকে বের করে আনতে। আমি মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি, আপনি আমাদের হতাশ করবেন না।’
ইতি,
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, চবির ইংরেজি বিভাগের ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের প্রতিচ্ছবি।