গণ অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বলেছেন আমরা নতুন একটি বাংলাদেশ গড়তে চাই, যেখানে রাজনৈতিক কারণে কাউকে হয়রানি করা হবে না। হামলার শিকার হতে হবে না, মামলার শিকার হতে হবে না। রাজনীতিবিদেরা জনগণকে জিম্মি করে লুটপাট করবেন না, লুটপাট করে দেশের টাকা বাইরে পাঠাবেন না।’
রোববার (২৩ মার্চ) চাঁদপুর হাসান আলী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ‘চাঁদপুর জেলা গঅণধিকার পরিষদ’ এর উদ্যোগে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহতদের স্মরণে ও আহতদের সুস্থতা কামনায় আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিলে
প্রধান অতিথির বক্তব্যে নুরুল হক এ কথা বলেন।
তিনি বলেন ‘চব্বিশের গণ অভ্যুত্থানে সামরিক বাহিনী যদি জনগণের পাশে এসে না দাঁড়াত, তাহলে দেশে একটি গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হতো। গণ–অভ্যুত্থানের পরে সেনাবাহিনীকে কেন জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করানো হচ্ছে।
কিছু বুদ্ধিজীবী কৌশলে গণ–অভ্যুত্থানে সেনা কর্মকর্তাদের অবদান অস্বীকার করে বিভাজন তৈরি করতে চান। এতে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। সে কারণে সবাইকে এ বিষয়ে সজাগ থাকার আহ্বান জানান তিনি।
তিনি বলেন, কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের ধারাবাহিক কর্মকাণ্ডে আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদের প্রতিধ্বনি শুনতে পাচ্ছি। আমরা চাই না, আওয়ামী লীগের মতো আগামীর বাংলাদেশে আবার কেউ ফ্যাসিবাদ কায়েম করুক।’ আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে বিদেশি শক্তির ওপরে ভর করে এ দেশে গণহত্যা চালিয়ে মায়ের বুক খালি করেছে।’
গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণ করে, ভিন্নমতের মানুষের নামে মামলা-হামলা দিয়ে, ভারতের নীলনকশায় এই দেশে ফ্যাসিবাদী ও একদলীয় শাসন কায়েম করেছিল। তাদের বিরুদ্ধে যাঁরাই কথা বলেছেন, লড়াই করেছেন, তাঁদের কারাগারে যেতে হয়েছে। আমরা আওয়ামী লীগের মতো আগামীর বাংলাদেশে আবার কেউ ফ্যাসিবাদ কায়েম করুক, সেটা চাই না। কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের ধারাবাহিক কর্মকাণ্ডে আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদের প্রতিধ্বনি আমরা শুনতে পাচ্ছি।’কোনো রাজনৈতিক দল যদি ভেবে থাকে, আমরা ক্ষমতায় চলে আসছি। ক্ষমতা অনেক দূরে, এটা অন্তর্বর্তী সরকার, অন্তর্বর্তী রাজনৈতিক দলের সরকার নয়। ‘আপনারা যাঁরা ভিন্নমতের ব্যানার-পোস্টার ছিঁড়ে ফেলছেন, নেতা-কর্মীদের হুমকি দিচ্ছেন, মামলা দিচ্ছেন, আপনারা আওয়ামী লীগ থেকে শিক্ষা নিন।
নুরুল হক বলেন, স্বৈরাচারী ব্যবস্থা যেন আগামীতে গড়ে উঠতে না পারে, সে জন্য তাঁরা প্রকৃত অর্থে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র চান, যা জনগণের মতামতের ভিত্তিতে পরিচালিত হবে। জনগণ ভোট দিয়ে জনপ্রতিনিধি, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র, সংসদ সদস্য বানান। তাঁরা জনগণের দাবি পূরণে কাজ করবেন। পটপরিবর্তনের ফলে মানুষ নতুন স্বপ্ন দেখছে। আগামীর বাংলাদেশকে তাঁরা নিজের মতো করে বিনির্মাণ করতে চাচ্ছেন। মানুষ চায়, বিগত সরকারের আমলে যেমন দেশ চলছে, আগামীর বাংলাদেশ যেন তেমন না চলে।
ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন হয়ে নতুন সরকার গঠিত হয়েছে মন্তব্য করে নুরুল হক বলেন, দেশের জনগণের দাবির প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগ হয়তো নিষিদ্ধ হবে। সরকার বিচারব্যবস্থার মাধ্যমে সেই পদক্ষেপ নেবে। নতুন সরকার গঠিত হলেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও অন্যান্য বিষয় এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি। যখন নানা ধরনের সংকট তৈরি হয়, তখন রাজনৈতিক দলের নেতা ও দায়িত্বশীল ব্যক্তি হিসেবে তাঁদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে হয়।
আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন গনঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোঃ রাশেদ খাঁন।
তিনি বলেন ‘যদি লুটপাটকারীরা ক্ষমতায় আসেন, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হন, তাহলে এ পরিস্থিতির আর বদল হবে না। লড়াই সংগ্রাম আমরা করেছি সহনশীল, সমৃদ্ধ ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার জন্য। আপনাদের সেই সুযোগ এসেছে। সঠিক প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন।’
তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্র সংস্কারের পাশাপাশি নিজেদের চিন্তা, সমাজ ও রাজনীতির সংস্কারও জরুরি। ‘ক্ষমতাকেন্দ্রিক যে দানবীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তা পরিবর্তন করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলো যেন ক্ষমতায় গিয়ে দানব হয়ে উঠতে না পারে, তার জন্য আমরা সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ ও চার বছরমেয়াদি সংসদের কথা বলছি। দুর্বৃত্তায়িত রাজনৈতিক ব্যবস্থার পরিবর্তনে তরুণদের নতুন রাজনীতিতে এগিয়ে আসতে হবে।’
জেলা গণঅধিকার পরিষদের আহবায়ক কাজী রাসেলের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব মোঃ মাহমুদুল হাসান এবং যুগ্ম আহ্বায়ক অনুষ্ঠানে বাস্তবায়ন কমিটির আহবায়ক সাংবাদিক জাকির হোসেন এর যৌথ সঞ্চালনা আলোচনা সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সলিম উল্যাহ সেলিম, কেন্দ্রীয় ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি নাজমুল হোসেন, চাঁদপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট জহির উদ্দিন বাবর, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সংগঠক জি এম রাশেদ।
ছবির ক্যাপশন: চাঁদপুর জেলা গঅণধিকার পরিষদের উদ্যোগে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহতদের স্মরণে ও আহতদের সুস্থতা কামনায় আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাখেন গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর।