মাদক সেবন, বড় ভাইদের নির্দেশনা অনুযায়ী মিটিং মিছিল, এলোমেলো ভাবে দ্রুত গতিতে দামি মোটরসাইকেল হাকানো, বিভিন্ন ডিজাইনের চুল কাটা এবং চুলে কালার করা কিশোররাই মূলত কিশোর গ্যাং-এর সদস্য।
পাড়া মহল্লায় মারপিট, কারণে-অকারণে যাকে তাকে মারধার, দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে মহড়া, দলবদ্ধভাবে আড্ডা দেয়া, বড়দের সম্মান না দেয়া এদের অভ্যাসে পরি ণত হয়েছে। কিশোর গ্যাং ও ডাকাত রীতিমত এদের নিয়ে আতঙ্কে ছিলেন চাঁদপুরবাসী।
তবে এদেরকে ভালোভাবে চেনা যায় চুলের কাটিং আর হাতে ব্রেসলেট। এরা জানেনা তাদের ভবিষৎ কি? অল্প বুদ্ধির এই ছোট মানুষগুলিকে এক শ্রেণীর নেতা, পাতি নেতা, পাড়া মহল্লার বড় ভাই এবং রাজনৈতিক নেতারা ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। এতে আবেগপ্রবণ এই কিশোররা বেপরোয়া হয়ে উঠছে।
সাম্প্রতিক সময়ে কিশোর গ্যাং ও ডাকাত আটক করতে সক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছে চাঁদপুর জেলা পুলিশ।
চাঁদপুর জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে ২০ মার্চ পর্যন্ত চাঁদপুর জেলায় ৭১ জন কিশোর গ্যাং এবং ৩২ জন ডাকাত গ্রেফতার করেছে চাঁদপুর জেলা পুলিশ।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, চাঁদপুরের অধিকাংশ এলাকায় কিশোর গ্যাং গড়ে ওঠার নেপথ্যে স্থানীয় বড় ভাইয়েরা মদদ দিচ্ছেন। পাড়া-মহল্লায় কিশোর গ্যাং গড়ে উঠছে। আধিপত্য বিস্তার, সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্ধ দ্বন্ধ, প্রেমে বিরোধ, মাদকসহ নানা অপরাধে কিশোররা খুনের মতো জঘন্য অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। এছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ করে স্থানীয় ‘বড় ভাই’রা। এলাকার পরিত্যাক্ত ভবন অথবা যে কোনো জায়গায় তাদের রয়েছে নিজস্ব চেম্বার।
চাঁদপুরে কিশোর গ্যাং ও ডাকাত সম্পর্কে পুলিশের কার্যক্রম জানতে চাইলে, পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব পিপিএম জানান, চাঁদপুরে আমরা কিশোর গ্যাং-এর তালিকা করেছি। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে বেশকিছু তালিকাভুক্ত কিশোর গ্যাং-এর সদস্যকে আটক করা হয়েছে। এদের মধ্যে যাদের বয়স একেবারেই কম তাদের মা-বাবাকে ডেকে সতর্কতামূলক পরামর্শ দিয়ে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে। আর যারা বিভিন্ন অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়াও কিশোর গ্যাং- ও ডাকাত নিয়ে বিটপুলিশিং কমিটির সদস্যরা বিভিন্ন থানা এলাকায় সচেতনতা মূলক বৈঠক এবং প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, কিশোর গ্যাং ও ডাকাত নিয়ন্ত্রনে নানা ধরণের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
গ্রেফতারকৃতরা পেশাদার ডাকাত ও ছিনতাইকারী। তাদের বিরুদ্ধে প্রত্যেকের নামে একাধিক ছিনতাই-চুরির মামলা রয়েছে।
তাছাড়া কিশোর গ্যাং-এর অপরাধ দমনে প্রতিটি থানা এলাকায় অভিযান অব্যাহত আছে। পুলিশের পাশাপাশি মা-বাবাদের ও সচেতন হতে হবে। কিশোর ছেলের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
পুলিশ সুপার বলেন, একটি পরিবারের প্রবীণদের উচিত অপ্রাপ্তবয়স্ক সদস্যদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলা, নৈতিকতা শেখানো এবং তাদের কর্মকাণ্ডের ওপর নজর রাখা। স্কুল কারিকুলামের বাইরে শিশু-কিশোরদের খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে আকৃষ্ট করা এবং যুক্ত করার সুযোগ বাড়াতে হবে। কিশোর অপরাধ রুখতে ছিন্নমূল শিশু-কিশোরদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিতে হবে। যারা ইতোমধ্যে অপরাধ চক্রে জড়িয়ে গেছে, তাদের সুপথে নিয়ে আসতে উপযুক্ত কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
তিনি বলেন, মা-বাবা যদি তার সন্তান সারাদিন কোথায় ছিল, কার কার সঙ্গে ছিল, কার সঙ্গে মেলামেশা করে এগুলো যদি মা-বাবারা সবসময় খেয়াল রাখেন তাহলে পরিবারের সন্তান বিপদে যেতে পারে না, কোনো সন্তান অপরাধ করতে পারে না। পরিবারের সন্তান ভালো ভূমিকায় অবতীর্ণ হলে শুধু পরিবারে শান্তি বিরাজ করে না, এলাকায়ও শান্তি-শৃঙ্খলা বিরাজ করে। তখন তারা দেশের সম্পদে পরিণত হয়। তাই এলাকায় কিশোর অপরাধ মুক্ত করতে পরিবার ও সমাজের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। যেখানে অপরাধ হওয়ার আশংকা থাকে, সে বিষয়গুলো সাথে সাথে প্রশাসনকে জানালে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চাঁদপুর পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব জেলাকে যেকোনো অপরাধমুক্ত করতে সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতা কামনা করেন।