শনিবার, ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২৫
শনিবার, ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২৫

গণরুমের অভিশাপ কি ছাড়বে না কুবি শিক্ষার্থীদের 

কুবি প্রতিনিধি:
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল সমূহে প্রতিটি কক্ষ চারজন করে থাকার রীতি থাকলেও এবার প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ১২ জন করে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কাজী নজরুল ইসলাম হল প্রশাসন। হলের তিনটি রুমে ৩৬ জন উঠানোর জন্য ইতোমধ্যে তিনটি রুমে তালা দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে হলের শিক্ষার্থীদের একটি অংশ একমত পোষণ করলেও ভিন্নমত দেখা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট অন্যান্যদের। বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি বাস্তবায়িত হলে গণরুম প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি পাবে এবং র‍্যাগিংয়ের নতুন সংস্কৃতি তৈরি হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১২ সেপ্টেম্বর গণরুম প্রথা বিলুপ্ত ও র‍্যাগিং সংস্কৃতি বন্ধের ঘোষণা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে গত ১ ফেব্রুয়ারি নজরুল হলে প্রাধ্যক্ষ মো. হারুনের উপস্থিতিতে সমন্বয়ক এমরান হোসেন, নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী হাসিব, ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের মোহাম্মদ নাজিমসহ আরও ২০ থেকে ২৫ জন আবাসিক শিক্ষার্থী নতুন ব্যাচের শিক্ষার্থীদের হলে ওঠানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন।
এভাবে শিক্ষার্থী তোলার বিষয়টিকে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে গণরুমের প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি হিসেবে দেখছেন বুদ্ধিবৃত্তিক সংগঠন ‘পাটাতন’-এর সভাপতি মাসুম বিল্লাহ।
তিনি বলেন, “বিষয়টা আমি জানি না। তবে চারজনের জায়গায় হল প্রশাসন যদি বারো জনকে তুলে, তখন তাদের গাদাগাদি করেই থাকতে হবে। এখানে শুধু শুয়ে থাকা ছাড়া আর কোনো কাজই করা সম্ভব হবে না। তাছাড়া, একসঙ্গে এত জুনিয়র শিক্ষার্থী থাকলে সিনিয়ররা এসে তাদের ‘ম্যানার শেখানো’র নাম করে চাপ সৃষ্টি করবে। এভাবেই গণরুম হলে প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি পেতে পারে এবং আমরা পুরোনো লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতির ধাঁচে ফিরে যাব।”
তিনি আরও বলেন, “প্রাথমিকভাবে এটি আবাসনের সুযোগ তৈরি করা বলে মনে হলেও, দীর্ঘমেয়াদে এর বহুমুখী নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।”
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সাথে। তাদের মতে হলে এভাবে শিক্ষার্থী উঠানো গণরুমেরই নামান্তর।
১৫ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আব্দুর রহমান আস সাদী বলেন, “একটি রুমে ১০-১২ জন শিক্ষার্থী থাকা মানে গণরুম ফিরে আসা। আর গণরুম ফিরে আসা মানে পূর্বের ছাত্রলীগের মত লেজুড়বৃত্তিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাথে শিক্ষার্থীদের যুক্ত করা। এছাড়াও গণরুমে ছাত্রলীগের তৈরি করে দেয়া র‍্যাগিং কালচার পুনরায় ফিরে আসবে। প্রশাসনের প্রতি আহ্বান থাকবে আর যাই করুন, গণরুমের প্রথা পুনরায় চালু করবেন না”।
তবে নজরুল হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন গণরুমের বিষয়ে বলেন, “আমরা গণরুম করেই এসেছি। তবে এটাকে গণরুম বলে না। একরুমে ৩০-৩৫ জন থাকে তাহলে আমরা গণরুম বলতে পারি। আমরা হল প্রশাসনকে ১০ জন করে থাকার প্রস্তাব দিয়েছিলাম কিন্তু হল প্রশাসনকে ১২ জনের কথা বলেছিলো। তবে আগেও নজরুল ইসলাম হলের গণরুমে ১০ থেকে ১২ জন শিক্ষার্থী থাকতো বলে জানা যায়”।
কাজী নজরুল ইসলাম হলের প্রভোস্ট মো. হারুন বলেন, “একরুমে ১২ জন থাকা সম্ভব। এটা আমাদের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত ছিল। কতজন শিক্ষার্থী আবেদন করেছে তার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিবো এক রুমে কতজন শিক্ষার্থী থাকতে পারবে”।
এদিকে ধারণ ক্ষমতার তিনগুণ শিক্ষার্থী উঠানোর বিষয়ে কথা হয় অন্যান্য হল প্রাধ্যক্ষদের সাথেও। বিজয় ২৪ হলের প্রভোস্ট ড. মাহমুদুল হাসান খান বলেন, “১৮ তম ব্যাচের অনেক শিক্ষার্থী হলে উঠতে চাচ্ছে। সেই বিবেচনায় তাদেরকে হলে তোলা হচ্ছে। তবে আমার হলে এখনো নতুন করে শিক্ষার্থী তুলিনি। যখন তোলা হবে সে সময় তাদের সুবিধা দেখে সিটে তুলবো। নজরুল হলের বিষয়টি ঐ হলের প্রভোস্ট বলতে পারবে”।
কতজন হলে গণরুম বলা যাবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এটার ক্লারিফিকেশন আপনারা দিবেন। তবে এখন আর গণরুম চালুর কোনো স্কোপ নেই। যদি কোনো রুমে ১২ জন করে তোলা হয় সেটাও বেশি হয়ে যায়। তবে ১২ জন করে তোলা হলেও র‍্যাগিং হওয়ার সুযোগ নেই আর হওয়ার সম্ভাবনাও নেই”৷
দত্ত হলের প্রভোস্ট মো. জিয়া উদ্দিন বলেন, “১৮ তম ব্যাচকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে অন্য ব্যাচগুলোকেও সিট দেবো। আমাদের ফর্ম আমরা অলরেডি অ্যানাউন্স করেছি স্টুডেন্টরাও কালেক্ট করেছে।আমাদের যেহেতু গণরুমের প্রথা আর নেই সুতরাং একটা রুম চারজনের জন্যই থাকে তাই আমরা ওই ভাবেই প্ল্যান করেছি। এখন যদি তারা রাজি হয় তারা পাঁচজন বা ছয়জন করে থাকতে, যদি স্টুডেন্টরা এটা এগ্রি করে তাহলে আমরা পারমিশন দিব । কিন্তু ৬ জনের বেশি আমরা কোনোভাবে পারমিশন দিব না। অতিরিক্ত শিক্ষার্থী উঠলে যারা রুমে থাকবে এটা তাদের জন্য আসলে কষ্টকর”।
গণরুমের বিষয়ে তিনি বলেন, “আমরা গণরুম বলতে বুঝি যেখানে স্বাভাবিক ক্ষেত্রের চেয়ে বেশি স্টুডেন্ট থাকে। আগে একটা রুমে দেখা যেত কোথাও ২৫ জন আছে, ৩০ জন আছে। যেটা আসলে অসম্ভব তারপরেও তারা ঐ ভাবেই ছিল”।
নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরাণী হল প্রভোস্ট ড. সুমাইয়া আফরিন সানি বলেন, “গণরুম প্রথা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিলুপ্ত করা হয়েছে। তবে চাহিদা থাকার কারণে ১৮ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের হলে সিট দেওয়া হচ্ছে৷ যেখানে রুম সংকটের কারণে ১০-১২ জনকে একটি রুমে তুলতে হচ্ছে। যা গণরুমের আওতায় পড়ে না। আর একটি রুমে এটি ব্যাচের শিক্ষার্থী উঠালেও পুনরায় র‍্যগিং প্রথা কিংবা লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি করার সুযোগ নেই। কেননা বর্তমান প্রশাসন এসব নিয়ে কনসার্ন”।
এ বিষয়ে উপ-উপাচার্য ড. মাসুদা কামাল বিষয়টি না জেনে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এ বিষয়ে জানতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলির সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।

Similar Articles

Advertismentspot_img

Most Popular