নিউজ ডেস্ক:
হারিকেন হার্ভে আঘাত হানার পর এবার ৬০ হাজারের অধিক বাংলাদেশিসহ ফ্লোরিডা, সাউথ ক্যারলিনা এবং জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের ৫০ লক্ষাধিক আমেরিকান ভয়ঙ্কর হারিকেন ‘ইরমা’ আতঙ্কে রয়েছেন। ইতোমধ্যে বাংলাদেশি অধ্যুষিত সাউথ ফ্লোরিডার সকল মানুষকে নিরাপদ আশ্রয় যেতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সারা অঙ্গরাজ্যে জরুরি অবস্থা জারির পর রাজ্য গভর্নর রিক স্কট নাগরিকদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘আঘাত হানার আশংকা রয়েছে এমন সিটির কেউ যেন ঘরে না থাকেন। শনিবার রাতে শুরু হবে ইরমার তাণ্ডব। ’
সাউথ ক্যারলিনার গভর্নর হেনরী ম্যাকমাস্টার স্মরণকালের ভয়ঙ্কর এ হারিকেনের আঘাত হানার সম্ভাব্য সিটিসমূহে জরইর অবস্থা ঘোষণা করেছেন। একইভাবে জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের গভর্নর নাথান ডিলও তার রাজ্যের ৬টি উপকূলীয় কাউন্টিতে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন।
এর আগেই পর্তোরিকোর গভর্নর তার রাজ্যে জরুরি অবস্থা জারি করেন। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও ফ্লোরিডা, ইউএস ভার্জিন আইল্যান্ড এবং পর্তোরিকো রাজ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে জরুরি অবস্থা জারির পর সম্ভাব্য সব ধরনের সহযোগিতার নির্দেশ দিয়েছেন। দু’সপ্তাহ আগে ভয়ঙ্কর হারিকেন হার্ভি আঘাত হানে টেক্সাসের বাংলাদেশি অধ্যুষিত হিউস্টন সিটিসহ আশপাশের এলাকায়। ক্ষত-বিক্ষত জনপদে চলছে পুনর্বাসন কার্যক্রম। এমনি অবস্থায় হারিকেন ইরমা ধেয়ে আসছে আটলান্টিক মহাসাগর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যসমূহে। ঘণ্টায় ১৮৫ মাইল বেগে ক্যাটাগরি-৫ হিসেবে প্রবাহিত হচ্ছে এই হারিকেন।
মার্কিন জাতীয় হারিকেন সেন্টার সর্বসাধারণের উদ্দেশ্যে আরও জানায়, ইরমা’র প্রভাবে উপকূলীয় অঞ্চলে ১৫ থেকে ২০ ফুট পর্যন্ত জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। এমন ভয়ংকর দুর্যোগ সাউথ ফ্লোরিডায় আঘাত হানবে শনিবার রাতে। ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিস আরো উল্লেখ করেছে, আটলান্টিক মহাসাগরে ‘হোযে’ এবং ‘ক্যাটিয়া’ নামক আরো দু’টি হারিকেনের উৎপত্তি ঘটেছে। ২০১০ সালের পর এবারই প্রথম উপর্যুপরি হারিকেনের আবির্ভাব ঘটছে আটলান্টিক মহাসাগর থেকে।
ফ্লোরিডাস্থ ৫২ দেশের ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের প্রতিনিধিত্বকারি ‘বাই-ন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স এসোসিয়েশন’র নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট আতিকুর রহমান ৭ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার রাতে এই প্রতিবেদককে জানান, ‘হারিকেনের আতঙ্কে সমস্ত মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ে রওনা দিয়েছেন। গ্যাস স্টেশনে গ্যাস নেই। গ্রোসারি স্টোর ফাঁকা। বড় বড় স্টোর থেকে কাঠ ক্রয় করা হচ্ছে বাড়ি-ঘরের দরজা-জানালা শক্ত করে আটকিয়ে নিরাপদ স্থানে পাড়ি দেয়ার জন্য। ’
আতিকুর রহমান উল্লেখ করেন, ‘অনেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিজ বাসায় অবস্থানের কথা ভাবছেন। যদিও মায়ামী পুলিশের উপ-প্রধান লুইস ক্যাবরেরা সকলের প্রতি উদাত্ত আহবান জানিয়েছেন নিরাপদ আশ্রয়ে স্বেচ্ছায় চলে যাবার জন্য। অন্যথায় পুুলিশ এসে সকলকে জোর করে নিয়ে যাবে আশ্রয় কেন্দ্রে।
৮ সেপ্টেম্বর শুক্রবার ভোর থেকেই ১৪০০ পুলিশ অফিসার মায়ামী সিটিতে নামবে সর্বসাধারণকে সর্বাত্মক সহায়তার জন্য। বাংলাদেশি-আমেরিকান ব্যবসায়ী আতিকুর রহমান আরও জানান, ‘হারিকেনের ভয়াবহতা সকলেই আঁচ করতে পারলেও অনেকে সারাজীবনের স্মৃতি আঁকড়ে থাকতে চাচ্ছেন জীবনের ঝুঁকি নিয়েই।
মায়ামী পুলিশের কমিশনার ফ্রাঙ্ক সুয়ারেজ বলেন, ‘সিটির যেসব এলাকাকে জনমানবশূন্য করার জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে, সে সব এলাকায় কাউকেই থাকতে দেয়া হবে না। সর্বসাধারণের নিরাপত্তা বিধানের স্বার্থেই এই নির্দেশ বাস্তবায়িত করা হবে।
মায়ামী-ডেড কাউন্টি মেয়র কার্লোজ জিমিনেজ বৃহস্পতিবার রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে সর্বসাধারণের উদ্দেশ্যে বলেন, সরকারী আশ্রয়কেন্দ্রে অথবা দূরবর্তী স্বজনের বাসায় চলে যান। হারিকেন ইরমাকে অবহেলার অবকাশ নেই। এটি ভয়ঙ্কর রূপ নিয়ে সাউথ ফ্লোরিডাসহ আশপাশে আঘাত হানবে রবিবার ভোর রাতে।