নিউজ ডেস্ক:
ভারতের কলকাতায় মাদার হাউস, দিল্লির অভিজাত এলাকা ও শ্রীনগরে হামলার পরিকল্পনা করেছিলেন জঙ্গি মুসা।
হামলার পরিকল্পনা করতে টার্গেট স্থানগুলো পরিদর্শন করেন তিনি। ভারতে আসা বিদেশি বিশেষ করে রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নাগরিকদের হত্যার পরিকল্পনা করছিলেন মুসা।
ভারতের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনআইএ) শুক্রবার মুসার বিরুদ্ধে দাখিল করা চার্জশিটে এ দাবি করেছে।
চার্জশিটে বলা হয়েছে, আবু সুলাইমানের মাধ্যমে জঙ্গি মতাদর্শে দীক্ষিত হন মুসা। আবু সুলাইমানকে ঢাকায় হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলার মূল হোতা মনে করা হয়।
কলকাতায় মিশনারিজ অব চ্যারিটির সদর দপ্তর মাদার ভবনে মুসার হামলার পরিকল্পনা নিয়ে রোববার প্রথম খবর প্রকাশ করে হিন্দুস্তান টাইমস। বড়দিনে মাদার ভবনে হামলার পরিকল্পনা ছিল তার। এরপর মাদার ভবনের নিরাপত্তা বাড়ায় কলকাতা পুলিশ ও গোয়েন্দারা। জঙ্গি মুসাকে নিয়ে সোমবার পর্যন্ত পত্রিকাটির অনলাইন সংস্করণে তিনটি খবর প্রকাশ করা হয়েছে।
৬ জুলাই পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে বিশ্বভারতী ফাস্ট প্যাসেঞ্জার ট্রেন থেকে গ্রেপ্তার করা হয় ২৫ বছর বয়সি মুসাকে। আলিপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়েছে তাকে। মসিউদ্দিন ওরফে মুসার জন্ম বীরভূমে হলেও তিনি বেড়ে ওঠেন তামিলনাড়ুর তিরুপুরে। উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে একটি মুদির দোকান দেন।
এনআইএ চার্জশিটে দাবি করেছে, জিজ্ঞাসাবাদে মুসার কাছ থেকে পাওয়া ফোন চ্যাটের তালিকায় দেখা যায়, বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের আইএসের জঙ্গিদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন তিনি। আবু সুলাইমানের নির্দেশনায় কাজ করে যাচ্ছিলেন এবং তারই নির্দেশনায় তিনি দিল্লি ও শ্রীনগর যান।
এনআইএর দেওয়া তথ্যানুযায়ী, আবু সুলাইমানের নির্দেশে ২০১৫ সালের মে-জুনসহ পাঁচ মাস শ্রীনগরে অবস্থান করেন মুসা। সেখানে আইএসের পতাকা উড়ান তিনি। ডাল লেকের পাশে একটি হোটেলে থাকতেন মুসা।
শ্রীনগরে অবস্থানের সময় মুসা মুখোশ পরে আইএসের পতাকা উড়ান। স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো এ দৃশ্য ধারণ করে। ইউটিউবে এ ঘটনার ভিডিও পোস্ট করে মুসা লেখেন, ‘বিক্ষোভকারীরা শ্রীনগরে আইএসের পতাকা তুলেছে।’
জঙ্গিদের সঙ্গে কথোপকথনের রেকর্ড থেকে এনআইএ জানতে পেরেছে, শ্রীনগরের পুরোনো শহরের মধ্যে নওহাটায় জামে মসজিদে প্রতি শুক্রবার জুমার নামাজ আদায় করতেন তিনি। নামাজের পর আইএসের পতাকা উড়াতেন এই জঙ্গি সংগঠনের গুপ্তচর হিসেবে নিজেকে দাবি করা মুসা।
চার্জশিটে এনআইএ উল্লেখ করেছে, এ-১ (মুসা) সব আনসার সদস্য (আনসার-উত তাওহিদের সদস্য) ও যারা আইএসে যোগ দিয়েছে, তাদের সবার নাম বলেছেন তিনি। ভারতে আইএসের ১০ হাজার সদস্য আছে বলে মুসা জানিয়েছেন।
আইএস জঙ্গিদের সঙ্গে মুসার কথোপকথন থেকে জানা গেছে, ভারতে কী কৌশলে হামলা চালাতেন তিনি। বিস্ফোরকের চেয়ে লম্বা ছুরি দিয়ে হামলা করতে পছন্দ করতেন, যাতে সহজে পালিয়ে যাওয়া যায়। নিজের জেলা বীরভূমে মলয় চ্যাটার্জি নামে এক ব্যবসায়ীকে ছুরি দিয়ে খুন করার কথা স্বীকার করেছেন তিনি। তাকে গ্রেপ্তারের সময়ও তার কাছে একটি ছুরি ছিল।
মুসার দাবি, ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তার সঙ্গে আলোচনা করতে লাভপুর ও মালদাহে এসেছিলেন জঙ্গি আবু সুলাইমান।
হলি আর্টিজানে হামলার তদন্তের অংশ হিসেবে আগস্ট মাসে বাংলাদেশ পুলিশের তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল কলকাতায় গিয়ে মুসাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। একই ইস্যুতে এফবিআইয়ের কর্মকর্তারাও তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে।
বাংলাদেশে নিষিদ্ধ জামাত-ই মুজাহিদীন, ভারতীয় মুজাহিদীন ও আইএসের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল মুসার। টেলিগ্রাম নামে একটি মোবাইল ফোন অ্যাপের মাধ্যমে আবু সুলাইমানের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন তিনি।