শিরোনাম :
Logo ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি ‘ইসরায়েলের স্কলারশিপ ফিরিয়ে দিলেন রাবি শিক্ষার্থী কামরুল’ Logo গাজায় চলমান গণহত্যার প্রতিবাদে খুবিতে সমাবেশ Logo গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর গণহত্যার প্রতিবাদে চাঁদপুরে হেফাজতে ইসলামের বিক্ষোভ মিছিল Logo ইবিতে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে প্রতিবাদ Logo কোরআন ও হাদিসে চিকিৎসা বিজ্ঞান বিষয়ে মৌলিক নির্দেশনা Logo শিশুর মানসিক গঠনে করণীয় Logo বিশ্বনবী (সা.)-এর বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য Logo সিরাজদিখানে ইসরাইল কর্তৃক ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিল। Logo গাজায় হামলা; রাবি প্রশাসন শিক্ষার্থী কর্মচারী কর্মকর্তাদের সংহতি সমাবেশ Logo ফিলিস্তিন গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে কয়রায় বিক্ষোভ মিছিল

পরিবারকে আনন্দ দেওয়া সুন্নত

  • নীলকন্ঠ অনলাইন নীলকন্ঠ অনলাইন
  • আপডেট সময় : ১১:৫২:০৭ পূর্বাহ্ণ, রবিবার, ৬ এপ্রিল ২০২৫
  • ৭১১ বার পড়া হয়েছে
পৃথিবীতে সুখে থাকার পারিবারিক বন্ধন অটুট রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যার অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সুসম্পর্ক করা। হালাল পন্থায় তাদের আনন্দ দেওয়া। রাসুল (সা.) পরিবারের সদস্যদের যেমন নতুন নতুন বিষয় শিক্ষা দিতেন, তেমনি তাদের সঙ্গে বন্ধুসুলভ আচরণও করতেন। তাঁদের বিভিন্ন ভাবে আনন্দ দিতেন। আমাদের সমাজের ধারণা যে পরিবারকে সব সময় শাসনে রাখলেই তারা নিয়ন্ত্রণে থাকবে, সুপথে থাকবে। এটি ভুল ধারণা, পরিবারের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে হবে, তাদের মাঝে মাঝে আনন্দ দিতে হবে, তাহলে তারা যেকোনো বিষয়ে তাদের পরিবার প্রধানের সঙ্গে আলোচনা করতে সাহস পাবে। এতে করে আমাদের পরিবারের অনেক সমস্যাই সমাধান হয়ে যাবে। অনেক সময় পরিবার প্রধানের ভয়ে স্ত্রী-সন্তানরা অনেক কথাই তার সঙ্গে শেয়ার করতে পারে না, ফলে পরিবার প্রধানের সঙ্গে তাদের অনেক বিষয়েই মিথ্যার আশ্রয় নিতে হয়, যা একটি সংসারে কখনই শান্তি ডেকে আনে না। নিম্নে রাসুল (সা.)-এর এমন কিছু ঘটনা তুলে ধরা হলো, যেখানে রাসুল (সা.) তাঁর পরিবারকে আনন্দ দিয়েছেন।

কন্যা ও জামাতাকে আনন্দ দেওয়া : রাসুল (সা.) মাঝে মাঝে কথার ছলে তাঁর কন্যা ও জামাতাকেও আনন্দ দিয়েছেন। সাহল ইবনে সাদ (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) ফাতিমা (রা.)-এর গৃহে এলেন, কিন্তু আলি (রা.)-কে ঘরে পেলেন না। তিনি ফাতিমা (রা.)-কে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার চাচাত ভাই কোথায়? তিনি বলেন, আমার ও তাঁর মধ্যে বাদানুবাদ হওয়ায় তিনি আমার সঙ্গে অভিমান করে বাইরে চলে গেছেন। আমার নিকট দুপুরের বিশ্রামও করেননি। অতঃপর আল্লাহর রাসুল (সা.) এক ব্যক্তিকে বলেন, দেখ তো সে কোথায়? সে ব্যক্তি খুঁজে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল, তিনি মসজিদে শুয়ে আছেন। আল্লাহর রাসুল (সা.) এলেন, তখন আলি (রা.) কাত হয়ে শুয়ে ছিলেন। তাঁর শরীরের এক পাশে চাদর পড়ে গেছে এবং তার শরীরে মাটি লেগেছে। আল্লাহর রাসুল মাটি ঝেড়ে দিতে দিতে বলেন, ওঠ, হে আবু তুরাব ! উঠ, হে আবু তুরাব ! (বুখারি, হাদিস : ৪৪১)

উপরোক্ত হাদিসে রাসুল (সা.) তাঁর মেয়েকে আনন্দ দেওয়ার জন্যই বলেছিলেন ‘তোমার চাচাতো ভাই কোথায়?’ আবার আলি (রা.)-কে ধুলিবালিতে শুয়ে থাকতে দেখে ‘আবু তুরাব’ বলার উদ্দেশ্যও ছিল আনন্দ দেওয়া।

স্ত্রীকে আনন্দ দেওয়া : রাসুল (সা.) তাঁর স্ত্রীদেরও আনন্দে রাখতে পছন্দ করতেন। তিনি তাদের আনন্দ নষ্ট হয় এমন কাজ করতে অপছন্দ করতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, আমার বান্ধবীরাও আমার সঙ্গে খেলা করত। রাসুলুল্লাহ (সা.) ঘরে প্রবেশ করলে তারা দৌড়ে পালাত। তখন তিনি তাদের ডেকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিতেন এবং তারা আমার সঙ্গে খেলত। (বুখারি, হাদিস : ৬১৩০)

এমনকি রাসুল (সা.) হজরত আয়েশা (রা.)-কে আনন্দ দেওয়ার জন্য তাঁর সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতা দিয়েছেন। আয়েশা (রা.) বলেন, তিনি এক সফরে নবী (সা.)-এর সঙ্গে ছিলেন। তিনি বলেন, আমি তাঁর সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতা করে তাঁর আগে চলে গেলাম। অতঃপর আমি মোটা হয়ে যাওয়ার পর তাঁর সঙ্গে আবারো দৌড় প্রতিযোগিতা করলাম, এবার তিনি আমাকে পিছে ফেলে দিলেন বিজয়ী হলেন। তিনি বলেন, এই বিজয় সেই বিজয়ের বদলা। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৫৭৮)

নাতি নাতনিদের আনন্দ দেওয়া : আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমরা রাসুল (সা.) এর সঙ্গে এশার নামাজ পড়ছিলাম। রাসুল (সা.) সিজদা করলে হাসান – হুসাইন লাফ দিয়ে তাঁর পিঠে উঠত। রাসুল (সা.) সিজদা থেকে ওঠার সময় তাদের হাত দিয়ে নামিয়ে দিতেন। তিনি আবার সিজদা করলে তারাও আবার পিঠে উঠত। এভাবে তিনি নামাজ শেষ করেন। (মুসনাদ আহমদ, হাদিস : ৭৮৭৬)

অন্যান্য হাদিসে রাসুল (সা.) স্বীয় নাতনি উমামা বিনতে আবুল আস-কেও আনন্দ দিয়েছেন বলে জানা যায়। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে রাসুল (সা.)-এর পদাঙ্ক অনুসরণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি ‘ইসরায়েলের স্কলারশিপ ফিরিয়ে দিলেন রাবি শিক্ষার্থী কামরুল’

পরিবারকে আনন্দ দেওয়া সুন্নত

আপডেট সময় : ১১:৫২:০৭ পূর্বাহ্ণ, রবিবার, ৬ এপ্রিল ২০২৫
পৃথিবীতে সুখে থাকার পারিবারিক বন্ধন অটুট রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যার অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সুসম্পর্ক করা। হালাল পন্থায় তাদের আনন্দ দেওয়া। রাসুল (সা.) পরিবারের সদস্যদের যেমন নতুন নতুন বিষয় শিক্ষা দিতেন, তেমনি তাদের সঙ্গে বন্ধুসুলভ আচরণও করতেন। তাঁদের বিভিন্ন ভাবে আনন্দ দিতেন। আমাদের সমাজের ধারণা যে পরিবারকে সব সময় শাসনে রাখলেই তারা নিয়ন্ত্রণে থাকবে, সুপথে থাকবে। এটি ভুল ধারণা, পরিবারের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে হবে, তাদের মাঝে মাঝে আনন্দ দিতে হবে, তাহলে তারা যেকোনো বিষয়ে তাদের পরিবার প্রধানের সঙ্গে আলোচনা করতে সাহস পাবে। এতে করে আমাদের পরিবারের অনেক সমস্যাই সমাধান হয়ে যাবে। অনেক সময় পরিবার প্রধানের ভয়ে স্ত্রী-সন্তানরা অনেক কথাই তার সঙ্গে শেয়ার করতে পারে না, ফলে পরিবার প্রধানের সঙ্গে তাদের অনেক বিষয়েই মিথ্যার আশ্রয় নিতে হয়, যা একটি সংসারে কখনই শান্তি ডেকে আনে না। নিম্নে রাসুল (সা.)-এর এমন কিছু ঘটনা তুলে ধরা হলো, যেখানে রাসুল (সা.) তাঁর পরিবারকে আনন্দ দিয়েছেন।

কন্যা ও জামাতাকে আনন্দ দেওয়া : রাসুল (সা.) মাঝে মাঝে কথার ছলে তাঁর কন্যা ও জামাতাকেও আনন্দ দিয়েছেন। সাহল ইবনে সাদ (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) ফাতিমা (রা.)-এর গৃহে এলেন, কিন্তু আলি (রা.)-কে ঘরে পেলেন না। তিনি ফাতিমা (রা.)-কে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার চাচাত ভাই কোথায়? তিনি বলেন, আমার ও তাঁর মধ্যে বাদানুবাদ হওয়ায় তিনি আমার সঙ্গে অভিমান করে বাইরে চলে গেছেন। আমার নিকট দুপুরের বিশ্রামও করেননি। অতঃপর আল্লাহর রাসুল (সা.) এক ব্যক্তিকে বলেন, দেখ তো সে কোথায়? সে ব্যক্তি খুঁজে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল, তিনি মসজিদে শুয়ে আছেন। আল্লাহর রাসুল (সা.) এলেন, তখন আলি (রা.) কাত হয়ে শুয়ে ছিলেন। তাঁর শরীরের এক পাশে চাদর পড়ে গেছে এবং তার শরীরে মাটি লেগেছে। আল্লাহর রাসুল মাটি ঝেড়ে দিতে দিতে বলেন, ওঠ, হে আবু তুরাব ! উঠ, হে আবু তুরাব ! (বুখারি, হাদিস : ৪৪১)

উপরোক্ত হাদিসে রাসুল (সা.) তাঁর মেয়েকে আনন্দ দেওয়ার জন্যই বলেছিলেন ‘তোমার চাচাতো ভাই কোথায়?’ আবার আলি (রা.)-কে ধুলিবালিতে শুয়ে থাকতে দেখে ‘আবু তুরাব’ বলার উদ্দেশ্যও ছিল আনন্দ দেওয়া।

স্ত্রীকে আনন্দ দেওয়া : রাসুল (সা.) তাঁর স্ত্রীদেরও আনন্দে রাখতে পছন্দ করতেন। তিনি তাদের আনন্দ নষ্ট হয় এমন কাজ করতে অপছন্দ করতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, আমার বান্ধবীরাও আমার সঙ্গে খেলা করত। রাসুলুল্লাহ (সা.) ঘরে প্রবেশ করলে তারা দৌড়ে পালাত। তখন তিনি তাদের ডেকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিতেন এবং তারা আমার সঙ্গে খেলত। (বুখারি, হাদিস : ৬১৩০)

এমনকি রাসুল (সা.) হজরত আয়েশা (রা.)-কে আনন্দ দেওয়ার জন্য তাঁর সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতা দিয়েছেন। আয়েশা (রা.) বলেন, তিনি এক সফরে নবী (সা.)-এর সঙ্গে ছিলেন। তিনি বলেন, আমি তাঁর সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতা করে তাঁর আগে চলে গেলাম। অতঃপর আমি মোটা হয়ে যাওয়ার পর তাঁর সঙ্গে আবারো দৌড় প্রতিযোগিতা করলাম, এবার তিনি আমাকে পিছে ফেলে দিলেন বিজয়ী হলেন। তিনি বলেন, এই বিজয় সেই বিজয়ের বদলা। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৫৭৮)

নাতি নাতনিদের আনন্দ দেওয়া : আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমরা রাসুল (সা.) এর সঙ্গে এশার নামাজ পড়ছিলাম। রাসুল (সা.) সিজদা করলে হাসান – হুসাইন লাফ দিয়ে তাঁর পিঠে উঠত। রাসুল (সা.) সিজদা থেকে ওঠার সময় তাদের হাত দিয়ে নামিয়ে দিতেন। তিনি আবার সিজদা করলে তারাও আবার পিঠে উঠত। এভাবে তিনি নামাজ শেষ করেন। (মুসনাদ আহমদ, হাদিস : ৭৮৭৬)

অন্যান্য হাদিসে রাসুল (সা.) স্বীয় নাতনি উমামা বিনতে আবুল আস-কেও আনন্দ দিয়েছেন বলে জানা যায়। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে রাসুল (সা.)-এর পদাঙ্ক অনুসরণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।