নিউজ ডেস্ক:
সিলেটের এমসি কলেজে পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলেন সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী খাদিজা আক্তার নার্গিস। পরীক্ষা শেষে বাড়ি ফেরার তাড়া ছিল তার। কিন্তু সেদিন আর বাড়ি ফেরা হয়নি। বদরুল আলমের নৃশংসতার চাপাতির আঘাত ক্ষতবিক্ষত হয়ে খাদিজাকে যেতে হয় হাসপাতালে।
প্রথমে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। সেখান থেকে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে নিয়ে কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর গত ২৮ নভেম্বর সাভারে সিআরপিতে ভর্তি করা হয় খাদিজাকে। প্রায় তিন মাস সেখানে চিকিৎসাধীন থাকার পর অবশেষে সুস্থ হয়ে সিলেটে নিজের বাড়িতে ফিরেছেন খাদিজা। মাঝে ১ ফেব্রুয়ারি সপ্তাহখানেকের জন্য অবশ্য বাড়ি ঘুরে যান তিনি।
গতকাল শুক্রবার দুপুরে বিমানযোগে সিলেট এসে পৌঁছান খাদিজা। বাবা ও অন্য স্বজন তাকে সিলেট সদর উপজেলার আউশা গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যান তাকে।
প্রায় সাড়ে চার মাস পর সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরেছেন খাদিজা। অচেতন অবস্থায় ঢাকায় যাওয়া খাদিজা হাসি মুখে বাড়ি ফিরেছেন। খাদিজার এ সুস্থতা, এ হাসিমুখ তার পরিবার, স্বজনদের হাসি ফুটিয়েছে।
খাদিজার বাবা মাসুক মিয়া বলেন, ‘আমার প্রাণ, আমার মেয়ে সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরেছে। এর চেয়ে বড় খুশির খবর আর কি হতে পারে?’
খাদিজার ভাই শাহীন আহমদ বলেন, ‘খাদিজা সুস্থ হয়ে ফিরে আসায় আমাদের পরিবার, পরিজন সবাই আনন্দিত। আমরা চিকিৎসকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। তাদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় খাদিজা সুস্থ হয়ে উঠেছে।’
খাদিজার স্বজনরা বদরুল আলমের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। তারা বলছেন, দ্রুততার সঙ্গে যেন খাদিজার উপর হামলাকারী বদরুলের শাস্তি হয়। খাদিজা নিজেও সিলেট পৌঁছে সাংবাদিকদের কাছে এ দাবি জানিয়েছেন।
খাদিজা বলেছেন, ‘বদরুলের বিচার দ্রুত শেষ হোক। তার শাস্তি হোক।’
তার বাবা মাসুক মিয়া ও ভাই শাহীন আহমদ বলেন, ‘আমাদের এখন একটাই চাওয়া, বদরুলের যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়।’
গত বছরের ৩ অক্টোবর এমসি কলেজের পুকুরপাড়ে সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী খাদিজা আক্তার নার্গিসকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অনিয়মিত ছাত্র ও শাবি ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক বদরুল আলম। ঘটনার পরপরই শিক্ষার্থীরা বদরুলকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।
এ ঘটনায় খাদিজার চাচা আবদুল কুদ্দুস বাদী হয়ে বদরুলকে একমাত্র আসামি করে মামলা দায়ের করেন। ৫ অক্টোবর বদরুল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিরতরে বহিষ্কার করা হয়েছে বদরুলকে।
ঘটনার দিন রাতেই সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতাল থেকে খাদিজাকে মুমুর্ষূ অবস্থায় ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে দীর্ঘ দিন চিকিৎসাধীন ছিলেন। এরপর তাকে ঢাকার সাভারে সিআরপিতে স্থানান্তর করা হয়।
বদরুলের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলা বর্তমানে সিলেট মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে বিচারাধীন। ২৬ ফেব্রুয়ারি আদালতে খাদিজার সাক্ষ্য দেওয়ার কথা রয়েছে।