নিউজ ডেস্ক:
আপন জুয়েলার্সের ৮৫ জন গ্রাহককে ২ কেজি ৩৩ গ্রাম স্বর্ণালঙ্কার ফেরত দিয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। বাকি ৯৭ জন গ্রাহক উপস্থিত না হওয়ায় তাদের স্বর্ণালঙ্কার ফেরত দেওয়া যায়নি। গতকাল সোমবার শুল্ক গোয়েন্দার পাঁচটি দল দিনব্যাপী আপন জুয়েলার্সের গুলশানের দুটি শাখা, উত্তরা, মৌচাক ও সীমান্ত স্কয়ারের শাখায় উপস্থিত হয়ে গ্রাহকের কাছে ওই অলঙ্কার হস্তান্তর করেন।
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘আজ সকাল থেকে আমাদের পৃথক পাঁচটি টিম আপন জুয়েলার্সের শাখাগুলোতে অবস্থান নেয়। সারা দিনে মোট ৮৫ জন গ্রাহক তাদের অলঙ্কার ফেরত নেন। এর মধ্যে আপন জুয়েলার্সের উত্তরা শাখায় ১৫ জন, সুবাস্তু ইমাম শাখায় ১৩ জন, গুলশান ডিসিসি মার্কেট শাখায় ১৫ জন, মৌচাক শাখায় ১৯ জন ও সীমান্ত স্কয়ার শাখায় ২৩ জনসহ মোট ৮৫ জন গ্রাহক প্রামাণ্য দলিল প্রদর্শন করে গচ্ছিত স্বর্ণালংকার ফেরত নেন। অবশিষ্ট গ্রাহক উপস্থিত না হওয়ায় তাদের অলঙ্কার ফেরত দেওয়া সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে পরবর্তী সময়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তিনি আরো জানান, নির্ধারিত তারিখ ও সময়ে তাদের বক্তব্য গ্রহণের পর আটককৃত অবশিষ্ট স্বর্ণের বিষয়ে আইনানুগভাবে নিষ্পত্তি করা হবে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ২৫ সদস্যের দল আজকের এই কার্যক্রমে সর্বাত্মক সহায়তা প্রদান করেছে। আগামী ৩০ মে বাকি স্বর্ণের বিষয়ে দিলদার আহমেদসহ মালিকপক্ষকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
এর আগে ১৮২ জন গ্রাহকের প্রায় ৩.৫ কেজি ফেরতযোগ্য অক্ষত স্বর্ণালংকারের স্বপক্ষে আপন জুযেলার্স কর্তৃপক্ষ কাগজপত্র দেখাতে সক্ষম হওয়ায় আজ ফেরতের সময় পুনর্নির্ধারণ করে শুল্ক গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষ। এজন্য গত বৃহস্পতিবার গ্রাহককে দোকানের রশিদ ও ব্যক্তিগত আইডিসহ (এনআইডি/পাসপোর্ট) গ্রাহকদের উপস্থিত থাকতে অনুরোধ করা হয়।
গত ২২ মে গ্রাহকের গচ্ছিত স্বর্ণ বা অন্যান্য অলঙ্কার ফেরত দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শুল্ক গোয়েন্দার কাছে কাগজপত্র সরবরাহ করতে না পারায় গ্রাহকদের অলঙ্কার ফেরত দেওয়া সম্ভব হয়নি।
১৭ মে আপন জুয়েলার্সের মালিক তিন ভাই গোলজার আহমেদ, দিলদার আহমেদ ও আজাদ আহমেদকে জিজ্ঞাসাবাদ করে শুল্ক গোয়েন্দা। জিজ্ঞাসাবাদে জব্দকৃত সোনার স্বপক্ষে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও দলিল দেখাতে পারেনি আপন জুয়েলার্স কর্তৃপক্ষ। এরপর তারা নথিপত্র উপস্থাপনে সময় চাইলে তাদের ২৫ মে পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়।
গত ১৪ ও ১৫ মে শুল্ক গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষ আপন জুয়েলার্সের গুলশানের দুটি শাখা, উত্তরা, মৌচাক ও সীমান্ত স্কয়ার শাখায় অভিযান চালিয়ে সাড়ে ১৩ মণ স্বর্ণালংকার ও ৪২৭ গ্রাম ডায়মন্ড আটক করে। বৈধ দলিল দেখাতে না পারায় এবং আমদানি ও ক্রয়ের উৎস সন্দেহজনক হওয়ায় সেগুলো সাময়িকভাবে জব্দ করা হয়। জব্দকৃত স্বর্ণের মধ্যে ১০ কিলোগ্রামের বেশি স্বর্ণ গ্রাহকের রয়েছে বলে দাবি করে আপন জুয়েলার্স কর্তৃপক্ষ।
গত ২৮ মার্চ দ্য রেইনট্রি হোটেলে জন্মদিনের পার্টিতে আমন্ত্রণ করে দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে ধর্ষণ করে আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদ ও তার বন্ধু নাঈম আশরাফ। ৬ মে রাতে ভুক্তভোগীদের একজন বনানী থানায় আসামিদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। এরপরই শুল্ক গোয়েন্দা আপন জুয়েলার্সে অবৈধ অলঙ্কারের বিরুদ্ধে অভিযানে নামে।