দর্শনায় পূর্বশত্রুতার জেরে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত যুবলীগ কর্মী নাইমুল ইসলাম
পল্টুর দাফন সম্পন্ন, বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা
নিউজ ডেস্ক:দর্শনায় পূর্বশত্রুতার জের ধরে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত যুবলীগের কর্মী নাইমুল ইসলাম পল্টুর দাফন সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল শনিবার আসরের নামাজের পর ঈশ্বরচন্দ্রপুর গ্রামের স্কুলমাঠে নিহত পল্টুর লাশের জানাজা শেষে গ্রামের কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়। এ হত্যাকা-ের ঘটনায় গতকাল নিহত পল্টুর ভাই দর্শনা পৌর কাউন্সিলর মঈন উদ্দীন মন্টু বাদী হয়ে দর্শনা মোবারক পাড়ার আলী হোসেনের ছেলে দর্শনা পৌর যুবলীগের সহসম্পাদক আব্দুল মান্নান খান (৪৪), কবির খালাসির ছেলে পৌর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আসলাম তোতা (৪৫), মৃত জিয়াউল হকের ছেলে দিপু রেজা (৪০), মৃত আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে সাইফুল ইসলাম ওরফে বাংলা (৪১), মৃত বাদল খানের ছেলে আলম (৪৪), ডা. সামসুল হকের ছেলে সোহেল (৩৭), ইমারতের ছেলে আশিকের (৩৮) নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ১০-১২ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেছেন।
জানা যায়, ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল শনিবার বিকেলে পল্টুর লাশ ঈশ্বরচন্দ্রপুর গ্রামে পৌঁছালে দর্শনাসহ আশপাশ এলাকার হাজার হাজার মানুষ তাঁর বাড়িতে তাঁকে একবার দেখার জন্য ভিড় জমায়। পল্টুর ছোট দুই সন্তান রাতুল, আরিয়ানসহ স্ত্রী ও স্বজনদের আহাজারিতে এলাকার বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। ছোট সন্তানদের আহাজারিতে গ্রামের সব মানুষ ছিলেন মর্মাহত ও শোকাহত। আসরের নামাজের পর পল্টুর লাশ সেওয়া হয় ঈশ্বরচন্দ্রপুর গ্রামের স্কুলমাঠে। সেখানে লাশের জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে গ্রামের কবরস্থানে পল্টুর দাফনকার্য সম্পন্ন করা হয়।
পল্টুর জানাজায় অংশ নেন চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক মাহফুজুর রহমান মন্জু, দামুড়হুদা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল আলম ঝন্টু, দর্শনা পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম, দর্শনা অংকুর আদর্শ বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ হাফিজুর রহমান, দামুড়হুদা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম, দর্শনা পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম, জেলা পরিষদের সদস্য সিরাজুল ইসলাম, দর্শনা রেলবাজার দোকান মালিক সমিতির সভাপতি টিপু সুলতান, দর্শনা কেরুজ শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়নের সহসভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, দর্শনা প্রেসক্লাবের সভাপতি মনিরুজ্জামান ধীরু, সাধারণ সম্পাদক আওয়াল হোসেনসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
জানাজার নামাজের পূর্বে এ হত্যাকা-ে জড়িত ব্যক্তিদের ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা করেন এলাকাবাসী। পল্টুর হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে দর্শনা পৌর মেয়র মতিয়ার রহমান বলেন, ‘যারা প্রকাশ্যে পল্টুকে হত্যা করেছে, তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। কান্না আর আবেগ নয়, সন্ত্রাসীদের যে দিন সুষ্ঠু বিচার হবে, সে দিন আনন্দের কান্না কাঁদব। আমরা ন্যায় বিচার চাই। ন্যায় বিচার না পেলে আমরা বসে থাকব না।’
এদিকে, যাঁকে ঘিরে এ হত্যাকা-ের ঘটনা, ঈশ্বরচন্দ্রপুরের স্কুল-সংলগ্ন বাগান পাড়ার মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে সেই হেলাল গ্রুপের হেলালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ওই দিন বিকেলে তিনি পল্টুসহ আরও চার-পাঁচজন দর্শনা শ্যামপুর ক্যাম্প-সংলগ্ন লালন একাডেমিতে বসে গল্প করছিলেন। একপর্যায়ে পল্টু চা খাওয়ার উদ্দেশ্যে রেললাইন ধরে হাঁটতে হাঁটতে দর্শনা রেলইয়ার্ড-সংলগ্ন তুলতুল কফি হাউজ অ্যান্ড ফাস্ট ফুডের দোকানে যান। এ সময় তিনি পল্টুর সঙ্গে না যেয়ে বাড়িতে চলে যান। এর কিছুক্ষণ পর তিনি খবর পান, যুবলীগের নেতা মান্নান, তোতা, দিপু, বাংলা, আলমসহ কয়েকজন পল্টুকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করেছেন। তিনি আরও জানান, ‘এ ঘটনা ঘটার কিছুক্ষণ পর জানতে পারি, ঘটনার ১৫-২০ মিনিট আগে ২টি মোটরসাইকেলযোগে মান্নান, তোতা, দিপু, বাংলাসহ ৪-৫ জন লালন একাডেমির সামনে ঘুরে গিয়েছে। ধারণা করছি, আমাকে না পেয়ে পূর্বশত্রুতার জেরের প্রতিশোধ নিতে পল্টুর ওপর হামলা চালিয়ে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে।’
এদিকে, এ ঘটনার পর গতকাল সারা দিন দর্শনা বাজার ও রেলওয়ে বন্দর এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছিল। যেকোনো প্রকার সহিংসতা এড়াতে দর্শনার বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশের ছিল কড়া নজরদারি। এমনকি ঈশ্বচন্দ্রপুর গ্রামে নিহত পল্টুর লাশ আসার পর থেকে গ্রামের বিভিন্ন পয়েন্টে দামুড়হুদা থানার পুলিশ, পুলিশ লাইনসের রিজার্ভ ফোর্স, জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) একটি দল ও দর্শনা তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ টহল জোরদার করে।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে দর্শনা পৌর এলাকার ঈশ্বরচন্দ্রপুর গ্রামের মৃত আব্দুর রউফ ওরফে পুটে ম-লের ছেলে যুবলীগের কর্মী নাইমুল ইসলাম পল্টু সহকর্মীদের সঙ্গে দর্শনা পুরাতন বাজার রেলগেট নামক স্থানে একটি কফি হাউজে বসেছিলেন। এ সময় ১০-১৫ জন দুর্বৃত্ত এসে তাঁকে কফি হাউজ থেকে তুলে নিয়ে দর্শনা স্থলবন্দরে নিয়ে গিয়ে লোহার রড ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে পালিয়ে যায়। এ সময় স্থানীয় লোকজন তাঁকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিলে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।