নিউজ ডেস্ক:
ভারতের পরীক্ষাগারে পণ্যের মান পরীক্ষা ছাড়াই রপ্তানি হবে বাংলাদেশি ৩৬ ধরনের পণ্য। ইতিমধ্যে ২১ ধরনের রপ্তানি পণ্যের ক্ষেত্রে আগেই নোটিফিকেশন জারি করে ভারত। এবার নতুন করে আরো ১৫ পণ্যের ক্ষেত্রে নোটিফিকেশন শিগগিরই জারি করবে সংস্থাটি। তবে রপ্তানি করার জন্য দেশের মান নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস্ অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) অনুমোদিত হতে হবে।
গত ২৩ ও ২৪ আগস্ট দু’দিনব্যাপী বাংলাদেশ-ভারত ১১তম জয়েন্ট গ্রুপ অব কাস্টমসের দু’দিনব্যাপী সভায় ওই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান বলেন, আমাদের দেশের ব্যবসায়ীদের ভারতে পণ্য রপ্তানি করতে ওই দেশের মান নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়। পণ্য রপ্তানি করতে বিএসটিআইএ কর্তৃক পরীক্ষার পরও ভারতে আবার পণ্য পরীক্ষার জটিলতায় অনেক সময়ের অপচয় হয়। অনেক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের পণ্য নষ্ট হয়ে যায়। ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের একটি দাবি ছিল শুধু বিএসটিআইয়ের অনুমোদন পেলে যাতে রপ্তানির সুযোগ দেওয়া হয়। দুই পক্ষের দীর্ঘদিনের আলোচনা শেষে সম্প্রতি ভারত আমাদের দেশের ২১ খাদ্য পণ্যের ক্ষেত্রে বিএসটিআই সার্টিফিকেট গ্রহণ করার অনুমতি দিয়ে সরকারি নির্দেশনা জারি করেছে।
তিনি বলেন, এবারের আলোচনায় ২১টি পণ্যের সঙ্গে আরো ১৫টি পণ্যের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে দেওয়া তালিকা অনুসারে ভারতীয় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ওই ১৫টি পণ্যের ক্ষেত্রে অনুরূপভাবে সুবিধা পাওয়া যাবে।
বর্তমানে বিএসটিআই অনুমোদিত যে ২১টি পণ্য ভারত গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেগুলো হচ্ছে— ফ্রুট জুস, জ্যাম, জেলি, মারমেলাদে (ফলের জুস), পিকলস, চাটনি, ফ্রুট ড্রিংকস, সস, টমেটো কেচাপ, ফ্রুট সিরাপ, ফ্রুট স্কোয়াশ, ফ্রুট করডিয়াল, এডিবল জেল, টমোটো পেস্ট, বিস্কিটস, চানাচুর, নুডলস, ইনস্ট্যান্ট নুডলস, ওয়াটার, সফট ড্রিংক পাউডার এবং কার্বোনেটেড বেভারেজেস।
নতুনভাবে একই সুবিধায় আসছে আরো বেশিকিছু খাদ্য ও শিল্পপণ্যসহ ১৫ ধরনের পণ্য। তবে জয়েন্ট গ্রুপ অব কাস্টমসের বৈঠকে ওই নতুন তালিকার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়নি। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে বাংলাদেশ কাস্টমস কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, বিএসটিআই সনদ সব পণ্যের ক্ষেত্রে অনুমোদন দেয় না ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। তাই ভারতের পরীক্ষাগারে পণ্যের মান পরীক্ষা করতে হয় বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের। এতে পণ্য রপ্তানিতে সময় যেমন বাড়ে, তেমনি বাড়ে খরচও। ২১টি পণ্যের সঙ্গে নতুন করে ১৫টি পণ্য যোগ হলে দেশটির সেভেন সিস্টার্সে বাংলাদেশের তৈরি খাদ্যপণ্য রপ্তানি আরো বেড়ে যাবে। অন্যান্য রাজ্যগুলোর বাজার ধরাও সহজ হবে। ২০১৬ সালে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত দ্বিপক্ষীয় জয়েন্ট ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে বাংলাদেশ বিএসটিআই অনুমোদিত ২৭টি পণ্য পরীক্ষা ছাড়াই ভারত কর্তৃক গ্রহণ করার আবেদন জানিয়েছিল। সেখান থেকে ২১টি পণ্য গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত হয়। ছাড় দেওয়া হয়নি সিমেন্ট, স্টিল, ইলেকট্রিক আইটেমের ছয়টি পণ্য। এবারের আলোচনায়ও ওই পণ্যগুলোর বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
বাংলাদেশ-ভারত ১১তম জয়েন্ট গ্রুপ অব কাস্টমস সভায় এছাড়াও বেশি কিছু বিষয়ে যৌথ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিদ্ধান্তগুলো হলো-
চোরাচালান রোধে উভয় পক্ষ তথ্যবিনিময় ও একসঙ্গে কাজ করবে। উভয় এজেন্সি চোরাচালান প্রতিরোধে কঠোর নজরদারি অব্যাহত থাকবে।
দুই দেশের শুল্ক গোয়েন্দা ও ডাইরেক্টরেট অব রেভিনিউ ইন্টেলিজেন্স (ডিআরআই) গোয়েন্দা তথ্য নিয়ে একসঙ্গে কাজ করবে। বছরে অন্তত একবার দুই দেশের মহাপরিচালক পর্যায়ে আনুষ্ঠানিক বৈঠক হবে। এজন্য চলতি বছরের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। যার খসড়া ইতিমধ্যে চূড়ান্ত হয়েছে।
উভয় দেশের পণ্য পরিমাপের ওয়েব্রিজের স্লিপ উভয় কাস্টমস কর্তৃক গ্রহণ করবে। এছাড়া বিভিন্ন বন্দরে অবকাঠামোগত সুবিধা বাড়ানোর জন্য ঐকমত্য হয়। বৈঠকে আশা করা হয় এসব সিদ্ধান্তে দুই দেশের বৈধ ব্যবসা আরো প্রসারিত হবে।