নিউজ ডেস্ক:
প্রায় ২ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ’প্রকল্পসহ ছয়টি উন্নয়ন প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। গতকাল রোববার বিকেলে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় কমিটির বৈঠকে এসব ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়।
বৈঠকে কমিটির সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিবসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোস্তাফিজুর রহমান।
বৈঠক শেষে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বেসমারিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণের একটি উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। প্রকল্পটির জন্য পরামর্শক সংস্থা নিয়োগ দেওয়া সংক্রান্ত প্রস্তাব ক্রয় কমিটির বৈঠকে উপস্থাপন করা হয়েছিল। প্রস্তাবটি অনুমোদন দিয়েছে কমিটি।
তিনি বলেন, জাপানের নিপ্পন কোই কোম্পানি লিমিটেড, অরিয়েন্টাল কনসালট্যান্ট গ্লোবাল লিমিটেড, সিঙ্গাপুরভিত্তিক সিপিজি কনসালট্যান্টস প্রাইভেট লিমিটেড এবং বাংলাদেশের ডেভেলপমেন্ট ডিজাইন কনসালট্যান্ট লিমিটেড যৌথভাবে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করবে। এজন্য মোট ব্যয় হবে ৫৭০ কোটি ৭৯ লাখ টাকা।
বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের আওতায় বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ‘বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের জন্য বিভিন্ন প্রকার জলযান নির্মাণ’শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় দুটি প্যাট্রল ভেসেল (আইভিপি) ক্রয়ের একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এজন্য মোট ব্যয় হবে ১৫৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা। খুলনার ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেড জলযান দুটি নির্মাণ করবে।
অতিরিক্ত সচিব বলেন, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক পটুয়াখালী জেলায় বাস্তবায়নাধীন ‘এমার্জেন্সি সাইক্লোন রিকভারি অ্যান্ড রেস্টোরেশন প্রজেক্ট (ইসিআরআরপি)’ প্রকল্পটির পাউবো অংশ সাব-কম্পোন্যান্ট সি এর আওতায় অ্যাডিশনাল রিহ্যাবিলাইটেশন ওয়ার্কসের অধীনে চারটি পোল্ডার নির্মাণে অতিরিক্ত কাজের জন্য মোট ৩৩ কোটি ৬৮ লাখ টাকার অতিরিক্ত ব্যয়ের অনুমোদন দিয়েছে ক্রয় কমিটি। ম্যাক্স-ওয়ানজাও নামের চীন ও বাংলাদেশর যৌথ প্রতিষ্ঠান প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।
বৈঠকে বাংলাদেশ সরকার এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) আর্থিক সহায়তায় ‘প্রজেক্ট ডিজাইন অ্যাডভান্স (পিএডি) ফর সিটি রিজিওন ইকোনোমিক ডেভেলপমেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম’এর আওতায় প্রিপারেশন, ডিজাইন এবং সুপারভিশন (পিডিএস) কনসালটেন্সি সার্ভিসেসের ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। বাংলাদেশ ও সুইডেনের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রকল্পটিতে কাজ করবে। এজন্য ব্যয় হবে ৪৬ কোটি ৪ লাখ টাকা।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সেকশনে বিদ্যমান মিটারগেজ রেল লাইনের সমান্তরাল একটি ডুয়েলগেজ রেললাইন নির্মাণ’শীর্ষক প্রকল্পের আওতায একটি প্যাকেজে ডুয়েলগেজ রেললাইন, এমব্যাংকমেন্ট, ব্রিজ, রেল স্টেশন, প্লাটফরম ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক নির্মাণ কাজের ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে চীনের পাওয়ার কন্সট্রাকশন করপোরেশন অব চায়না লিমিটেড। এজন্য ব্যয় হবে ২৬৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।
এ ছাড়াও বৈঠকে বাংলাদেশ রেলওয়ের ‘কালুখালী-ভাটিপাড়া সেকশন পুনর্বাসন এবং কাশীয়ানী-গোপালগঞ্জ-টুঙ্গীপাড়া পর্যন্ত নতুন রেলপথ নির্মাণ (১ম সংশোধিত) শীর্ষক প্রকল্পের একটি প্যাকেজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামের ভুল সংশোধনের একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক
এর আগে অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক হয়। বৈঠকে আকিজ জুট মিলস লিমিটেড কর্তৃক মালয়েশিয়ায় দুটি কোম্পানি অধিগ্রহণের নিমিত্তে ২০ মিলিয়ন ডলার, হা-মীম গ্রুপ কর্তৃক হাইতিতে একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি স্থাপনের নিমিত্তে ১০ দশমিক ৪৪ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ এবং নিটল-নিলয় গ্রুপ কর্তৃক গাম্বিয়ায় গাম্বিয়া কমার্স অ্যান্ড এগ্রিকালচার ব্যাংক লিমিটেড স্থাপনের নিমিত্তে ৭ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব ফেরত পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাব নিয়ে ব্যাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আরো আলোচনা করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া কুমার নদী পুনঃখনন সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে কমিটি।