নিউজ ডেস্ক:
শহরের স্বাস্থ্য সেবা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে গৃহীত আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস ডেলিভারি প্রকল্পসহ মোট ১৮টি প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এসব প্রকল্পে বাস্তবায়নে মোট খরচ ধরা হয়েছে ১৭ হাজার ৭৮৬ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ১৩ হাজার ৮১৩ কোটি ৪৪ লাখ টাকা, বাস্তবায়নকারী সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ৪২ কোটি ৬২ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে পাওয়া যাবে ৩ হাজার ৯৩০ কোটি ৮৯ লাখ টাকা।
মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলানগর এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেক বৈঠকে এই অনুমোদন দেওয়া হয়।
বৈঠক শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল প্রকল্প সম্পর্কে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। তিনি বলেন, আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস ডেলিভারি প্রকল্পের আওতাভুক্ত এলাকায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে আর্থিক ও ভৌত অভিগম্যতার উন্নয়ন করা হবে। যাতে নগরবাসীদের জন্য মানসম্মত প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা এবং মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য সম্পর্কিত অপরিহার্য সেবা প্যাকেজের মাধ্যমে গরীবদের সেবা নিশ্চিত করা যায়।
তিনি জানান, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা গ্রহীতার সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য দরিদ্র মহিলা, নবজাতক ও শিশুদের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান এবং প্রকল্প এলাকায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাদানকারি প্রতিষ্ঠানের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা শক্তিশালী করা হবে।
আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস ডেলিভারি প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ১ হাজার ১৩৬ কোটি টাকা।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, চীনের হোয়াংহো নদীর মতো বিপদজনক নদী যদি শাসন করা যায়। তাহলে আমরা কেন আমাদের নদীগুলোকে শাসন করতে পারবো না। আমাদের দেশের প্রত্যেকটা নদী পর্যায়ক্রমে শাসন করা হবে। এ জন্য অনেক প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে।
তিনি মনে করেন বন্যা না হলে দেশে যে খাদ্যশস্য আছে, তা দিয়েই জনগণের খাদ্য চাহিদা পুরোটা মিটবে।
মন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়ে বলেছেন, নতুনভাবে নির্মাণ হতে যাওয়া বধ্যভূমিগুলোর গায়ে লেখা থাকবে চিরঞ্জিব মুক্তিযোদ্ধারা, যারা এখানে শুয়ে আছেন।
তিনি আরো জানান, প্রত্যেক সংসদীয় আসনে ৬টি করে মাদ্রাসার উন্নয়ন করা হবে। এ ছাড়া বিশেষ বিবেচনায় আরো ২০০টি মাদ্রাসার উন্নয়ন করা হবে। এক প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, দেশের পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। ফলে পণ্য সরবরাহে কোন সমস্যা নেই। তাই আগামী মাসগুলোতেও মূল্যস্ফীতি বাড়বে না।
একনেকে অনুমোদন পাওয়া অন্য প্রকল্পগুলো হচ্ছে-রুরাল ট্রান্সপোর্ট ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট-২, এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন খরচ ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৮১৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা। পটুয়াখালী জেলার লোহালিয়া নদীর ওপর নির্মানাধীন পিসি গার্ডার ব্রিজের অমাপ্ত নির্র্মাণ কাজ সমাপ্তকরণ প্রকল্পে ব্যয় হবে ১০২ কোটি টাকা। ফরিদপুর জেলার আড়িয়াল খাঁ নদী তীর সংরক্ষণ ও ড্রেজিং প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ২৯১ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষèীপুর, চট্টগ্রাম ও চাঁদপুর কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পে হবে ৬৯ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্প, চট্টগ্রাম জোনের খরচ ধরা হয়েছে ১ হাজার ৪২১ কোটি ৪৮ লাখ টাকা।
বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) সম্প্রসারণ ও শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৫১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় হবে ৪৮০ কোটি ৬০ লাখ টাকা। সাভারস্থ পরমাণু শক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ৩ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন গবেষণা রিঅ্যাক্টর ফ্যাসিলিটির সেফটি সিস্টেমের সমন্বয় সাধন, আধুনিকীকরণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও বর্ধিতকরণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৭৪ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। জামালপুর জেলার ৮টি পৌরসভার ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৬১২ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। রাজশাহী ওয়াসার ভূ-উপরিস্থত পানি শোধনাগারের জন্য জমি অধিগ্রহণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৭৮ কোটি ৬৯ লাখ টাকা।
এ ছাড়া পুরাতন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ইতিহাস, ঐতিহাসিক ভবন সংরক্ষণ ও পারিপাশির্^ক উন্নয়ন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৬০৭ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। ১৯৭১এ মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক গণহত্যার জন্য ব্যবহৃত বধ্যভুমিসমূহ সংরক্ষণ ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় হবে ৪৪২ কোটি ৪০ লাখ টাকা।পাঁচুরিয়া-ফরিদপুর-ভাঙ্গা রেলপথ পুনর্বাসন ও নির্মাণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৩৪৭ কোটি ৩১ লাখ টাকা। জামালপুর-ধানুয়া-কামালপুর-রৌমারী-দাঁতভাঙ্গা জেলা মহাসড়ক প্রশস্তকরণ ও মজবুতিকরণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৩৩২ কোটি ১০ লাখ টাকা। বাংলাদেশের ১৩টি নদী বন্দরের প্রথম শ্রেনীর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৮০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের নির্বাচিত মাদ্রাসাগুলোর উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় হবে ৫ হাজার ৯১৮ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। বরিশাল বিভাগ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৯২০ কোটি টাকা।