নিউজ ডেস্ক:জীবননগরের হাসাদাহে জনতা ক্লিনিকে ভুল অপারেশনে এক প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার পর ওই ক্লিনিকের মালিক ও চিকিৎসক গা ঢাকা দিয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার হাসাদহ মাঝেরপাড়ার রেজাউল ইসলামের স্ত্রী রশিদা খাতুনের (২৮) প্রসববেদনা উঠলে তাঁকে রাতে হাসাদাহ হাইস্কুলের সামনে জনতা ক্লিনিক অ্যান্ড নার্সিং হোম সেন্টারে সিজারের জন্য ভর্তি করা হয়। জনতা ক্লিনিকের মালিক রানা রোগীর সিজারের জন্য মহেশপুরের একটি প্রাইভেট হাসপাতাল থেকে ডা. আনিসুজ্জামানকে নিয়ে আসেন। এ সময় ডাক্তারের ভুল অপারেশনে রোগীর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়। ডাক্তার রোগীর অবস্থা বেগতিক দেখে ক্লিনিক থেকে পালিয়ে যান। ক্লিনিকের মালিক ঘটনাটি অন্যদিকে প্রবাহিত করে রোগীর পরিবারের সদস্যদের বলেন, রোগীর পেটে একটি টিউমার আছে। এটি অপারেশন করতে হলে বাইরে নিয়ে যেতে হবে। এ কথা বলে তিনি রোগীকে জনতা ক্লিনিক থেকে রেফার্ড করে দেন। রোগীর পরিবারের সদস্যরা ওই প্রসূতিকে জীবননগর শহরের আখসেন্টারের সামনে মা ক্লিনিকে নিলে সেখানে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে যশোরে নেওয়ার পরামর্শ প্রদান করেন। তাঁদের পরামর্শে যশোরে নেওয়ার পথে ওই প্রসূতির মৃত্যু হয়।
রশিদার স্বামী রেজাউল ইসলাম বলেন, ‘আমার স্ত্রী সুস্থ ছিল, পেটে ব্যাথা উঠলে আমি জনতা ক্লিনিকে নিয়ে যাই। সেখানে রাতে ডা. আনিস অপারেশন থেকে বের হতে না হতেই ক্লিনিক মালিক আমাকে বলে তোমার স্ত্রীর পেটে বড় টিউমার হয়েছে, এখানে অপারেশন করা যাবে না, বাইরে নিয়ে অপারেশন করতে হবে। তার জন্য আরও দুই হাজার টাকা বেশি দিতে হবে। আমি তাতেও রাজি হয়ে যায়, পরবর্তীতে ক্লিনিক মালিক আমার স্ত্রীকে অন্য ক্লিনিকে ভর্তি করার পরামর্শ দেন। তাঁর কথা মতো মা ক্লিনিকে নিলে সেখানে তারা বলে রোগীর অবস্থা ভালো না, যত দ্রুত সম্ভব যশোরে নিয়ে যান। এ সময় যশোরে নেওয়ার পথে আমার স্ত্রীর মৃত্যু হয়।’
এ বিষয়ে জনতা ক্লিনিক অ্যান্ড নার্সিং হোমের মালিক রানার সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, ‘অতিরিক্ত রক্ষক্ষরণ হওয়ার কারণে তাঁর মৃত্যু হয়। এতে আমাদের বা ডাক্তারের কোনো দোষ নেই।’
ডা. আনিসুজ্জামান বলেন, ‘রোগীর অবস্থা তেমন ভালো ছিল না। তা ছাড়া আমি তো আর ইচ্ছে করে মারি নাই, মৃত্যু হলে আমার কিছু তো আর করার নাই।’
এ বিষয়ে মহেশপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নাসির উদ্দিনের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, ডা. আনিসুজ্জামান বলে মহেশপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কেউ চাকরি করেন না।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ডা. আনিসুজ্জামান মাদকের সঙ্গে জড়িত। তিনি নেশাগ্রস্ত অবস্থায় বিভিন্ন ক্লিনিকে অপারেশন করেন। তা ছাড়া জলিলপুরে নিজে গড়ে তুলেছেন মহেশপুর প্রাইভেট হাসপাতাল নামের একটি ক্লিনিক। সেখানে প্রতি বিকেলে মাদক আর মহিলা নিয়ে আড্ডা হয়।
স্থানীয় লোকজনের দাবি ডা. আনিসুজ্জামান ক্লিনিকের নামে একটি রঙ্গলীলা ঘর গড়ে তুলেছেন। তা ছাড়া এ ক্লিনিকে ভুল অপারেশনে কয়েকজন রোগী মারা গেলেও প্রশাসন তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় তিনি এলাকায় দাপটের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের অপকর্ম করে চলেছেন।
এ ব্যাপারে জীবননগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ গনি মিয়া জানান, হাসাদাহ ক্লিনিকে যে ঘটনা ঘটেছে, এ বিষয়ে থানায় এখনো কোনো অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।