নিউজ ডেস্ক:
নানা রকমের সবজি চাষ করে ভাগ্যের চাকা ঘুরে গেছে সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার নিজপাট ইউনিয়নের অন্তত ছয়টি গ্রামের শতাধিক পরিবারের।
সিলেটের সীমান্তবর্তী উপজেলা জৈন্তাপুর। এ উপজেলার নিজপাট ইউনিয়নের পূর্ব রুপচেং, হরনি, পাখিবিল, কামরাঙ্গী, কালিঞ্জি ও বাইরাখেল গ্রামের শতাধিক পরিবার সবজি চাষে পরিবারে স্বচ্ছলতা এনেছে। এক সময় ধানচাষ করা এসব পরিবার বর্তমানে বরবটি, লাউ, শিম, করলা, টমেটো, মিষ্টি কুমড়া প্রভৃতি সবজি চাষেই পেয়েছে সাফল্য, ঘুচে গেছে তাদের অর্থনৈতিক দৈন্যতা।
ধানচাষ করে তেমন ভালো ফল না পাওয়ায় বছর পাঁচেক আগে থেকে এক-দুজন করে সবজি চাষে মনোযোগী হন এসব গ্রামের কৃষকরা। তাদের সাফল্য দেখে ধীরে ধীরে গ্রামের অন্যান্য কৃষক পরিবারও সবজি চাষের পথে হাঁটে। বর্তমানে বছরের ১০ মাসই বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করেন তারা। ছয় গ্রামের প্রায় দেড়শ’ একর জমিতে চলে সবজি চাষ।
পূর্ব রুপচেং গ্রামের জামাল উদ্দিনের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, গত তিন বছর ধরে প্রায় এক একর জমিতে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করে আসছেন তিনি। সবচেয়ে বেশি চাষ করছেন দেশি জাতের বরবটির। বর্তমানে সপ্তাহে তিন দিন ৫০০ থেকে এক হাজার কেজি বরবটি বিক্রি করছেন তিনি।
চলতি মৌসুমে সবজি চাষ করতে বীজ, সার, কীটনাশক, মাচা তৈরি প্রভৃতি কাজে জামাল উদ্দিনের ব্যয় হয়েছে প্রায় ৪৫ হাজার টাকা। তবে ইতিমধ্যেই তিনি প্রায় ৩ লাখ টাকার সবজি বিক্রি করেছেন তিনি। আগামী দুই মাসে আরো ৪ লাখ টাকার সবজি বিক্রির আশা প্রকাশ করেন সফল এই সবজি চাষি।
কামরাঙ্গী গ্রামের আবদুস সাত্তার, হরনি গ্রামের খলিল আহমদ, পাখিবিল গ্রামের ফারুক আহমদ- সবার গল্পটা প্রায় একই রকম। প্রথমে অল্প জমিতে সবজি চাষ করে সফলতা পেয়ে বর্তমানে বিপুল পরিমাণ জমিতে চাষ করে চলেছেন।
কামরাঙ্গী গ্রামের আবদুস সাত্তার জানান, প্রায় ৪ বছর আগে দুই বিঘা জমিতে সবজি চাষ শুরু করেন। বর্তমানে তিন বিঘা জমিতে বরবটি, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, করলা, শিম, টমেটো প্রভৃতি সবজি চাষ করছেন তিনি। চলতি মৌসুমে সবজি চাষের পেছনে প্রায় ৫৫ হাজার টাকা ব্যয় করে সবজি বিক্রি থেকে পেয়েছেন ৪ লাখ টাকা। আরো দুই-তিন লাখ টাকার সবজি বিক্রির আশায় আছেন তিনি।
সবজি চাষ করে বিপ্লব ঘটালেও এসব গ্রামের কৃষকরা এখনো কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কিংবা উপজেলা কৃষি অফিসের তেমন সাহায্য-সহযোগিতা পান না বলে জানালেন। এদিকে রয়েছে পানি সঙ্কটও। এ সঙ্কট দূর করতে স্থানীয় পুটিখালে একটি সুইচগেট নির্মাণের দাবি সবজি চাষিদের।
সামগ্রিক বিষয়ে জৈন্তাপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বলেন, উপজেলার ওইসব গ্রামের শতাধিক পরিবার সবজি চাষে রীতিমতো বিপ্লব ঘটিয়েছেন। তারা স্বাবলম্বী হয়েছেন, পরিবারে স্বচ্ছলতা এনেছেন। মাঝে মধ্যে আমি ওইসব এলাকায় গিয়ে কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দেই।তিনি বলেন, পুটিখালে একটি সুইচগেট করা হলে পানির জন্য অনাবাদি পড়ে থাকা জমিতেও সবজি চাষ করা সম্ভব হবে। এ বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের কাছে তুলে ধরা হবে।