ফরিদ উদ্দিন,লামা (বান্দরবান) প্রতিনিধি: বান্দরবানের লামায় ধুংছাচিং নামের এক ব্যক্তিকে দু’বার মৃত্যু দেখিয়ে অন্যজনের সম্পত্তি আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।এ ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার গজালিয়া ইউনিয়নের ছোটবমু এলাকায়।
ঘটনার বিবরণে প্রকাশ, ছোটবমু মৌজার বাসিন্দা ক্যাহ্লাখই মার্মা ৫৯ নং হোল্ডিং-এর ৪ একর জমির মালিক হন। তার ২ মেয়ে- মায়ই মার্মা, মিছাইচিং মার্মা ও ১ ছেলে ধংমং।
জানাযায়, ক্যাহ্লাখই মার্মা অভাব অনটনে পতিত হয়ে ২০০০ সালে স্থানীয় দিপু বড়–য়ার নিকট ৪০ শতক, ২০০১ সালে জাকের আহাম্মদ কুতুবীর নিকট-৮০ শতক, ২০০৩ সালে ফিরোজ আহাম্মদ এর নিকট ২ একর, ২০০৬ সালে মংছাচিং মার্মার নিকট- ৪০ শতক মোট তিন একর ষাট শতক জমি বিক্রি করেন।পৈতৃক সম্পত্তিহীন ও স্থানীয়ভাবে কর্মোৎস হারিয়ে ২০০১ সালে ধুংমং ও তার স্ত্রী ২ সন্তানসহ এলাকা থেকে চলে যায়। কতিথ আছে সে পাশ্ববর্তী বার্মায় চলে গেছে। ১৫ মার্চ ২০১০ সালে ক্যাহ্লাখই মারা যায়।
এদিকে ক্যাহ্লাখই’র দু’ মেয়ে মায়ই মার্মা ও মিছাইচিং মার্মা অবশিষ্ট পৈতৃক সম্পত্তি ৪০ শতক জমি স্থানীয় অংসাথোয়াই মার্মার নিকট যৌথ বায়নানামা দলিল নং-৪৪৯/২০১১ মূলে বিক্রি করে দেয়। এর কয়েক বছর পর অংসাথোয়াই নাম রেজিষ্ট্রি করতে না পেরে ক্রেতার অনুকুলে ওই জমি ফেরত দেয়ার প্রস্তাব দিলে, মিছাচিং মার্মার অপারগতায় দু’বোনের সিদ্ধান্তমতে এককভাবে টাকা ফেরত দিয়ে নাদাবী কবলা দলিল নং ১৪৩৬/২০১৪ মূলে মায়ই মার্মা ওই জমি তার নামে ফেরৎ নিয়ে ভোগ দখল করতে থাকে। এর পর থেকে মিছাচিং মার্মাও এলাকা থেকে চলে যায়।
অপরদিকে স্থানীয় বাসিন্দা উসুইহ্লা মার্মা ও তার বোন য়ইচিংনু মার্মা তাদের বাবা মৃত ধুংছাচিং মার্মাকে মৃত ক্যাহ্লাখই’র ছেলে হিসেবে হেডম্যান ও চেয়ারম্যান থেকে একটি মিথ্যা ওয়ারিশনামা নেয়। ওই ওয়ারিশ নামা অনুবলে মায়ই মার্মার বিরুদ্ধে জালিয়াতির মাধ্যমে একক ওয়ারিশনামা নিয়ে বাবার সম্পত্তি একা ভোগ করার অভিযোগ করলে তারা স্বামী স্ত্রী কিছুদিন হাজতবাসও করেন।
মায়ই মার্মা জানায়, প্রায় ১৬ বছর পূর্বে তাদের ভাই ধুংমং মার্মা কর্মহীন হয়ে ২ ছেলে নিয়ে এলাকা থেকে চলে যায়। এর পর এখন পর্যন্ত তার আর কোন হদিস পাওয়া যায়নি, তবে শুনাগেছে সে বার্মায় চলে গেছে। এদিকে বাবার সম্পত্তির লোভে মৃত ধুংছাচিং মার্মা নামের অন্য একজনকে আমাদের বাবার মিথ্যা ওয়ারিশ (সন্তান) বানিয়ে উসুইহ্লা মার্মাগং তাদেরকে কষ্ট দিচ্ছে। সে জানাই আমার বোন মিছাইচিং মার্মা ও ভাই ধুংমং মার্মার হদিস পাওয়া গেলে আমি তাদেরকে বাবার ওয়ারিশ হিসেবে মেনে নিব। কিন্তু মৃত ধুংছাচিং মার্মা আমার বাবার সন্তান নয় এবং উসুইহ্লা মার্মাগং প্রতারণা করে ওয়ারিশ সেজে আমার বাবার সম্পত্তি আত্মসাতের চেষ্টা করছে। বিভিন্ন রেকর্ডপত্রে তাদের প্রতারণার বিষয়টি প্রমাণিত হয়।
সে আরো জানায়, গজালিয়া ইউপি মৃত্যুনিবন্ধন নং-১০১৭০৩১৫১৫৭০০০০৩৪, রেজিষ্টারে ধুংছাচিং মার্মার মৃত্যু তারিখ লেখা রয়েছে ৫জুলাই/২০১০ ইং। সেমতে এর আগে-২০০৮ সালে ধুংছাচিং মার্মার নামে ন্যাশনাল আইডি কার্ড (ভোটার) ইসু হয়েছিল বা হওয়ার কথা। ওই কার্ড দেখাতে পারলে ধুংছাচিং মার্মাকে আমাদের ভাই বলে মনে করবো। যেহেতু ওই কার্ডে ধুংছাচিং মার্মার পিতার নাম নিশ্চয় আমার পিতা ক্যাহ্লাখই মার্মার নাম থাকবে। আসলে ধুংছাচিং মার্মা নামের কোন লোকের অস্তিত্ব নেই বলে জানান, মায়ই মার্মা।অনুসন্ধানে জানাযায়, গজালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের রেকর্ডমতে; মৃত ধুংছাচিং মার্মার ছেলে উসুইহ্লা মার্মার জম্মনিবন্ধন অনুযায়ী, তার জম্ম তারিখ-২০ মার্চ/১৯৮৫ ইং। অপরদিকে তার ন্যাশনাল আইডিতে জম্ম তারিখ উল্লেখ রয়েছে-২০ মার্চ/১৯৭৭ ইং।
এছাড়া ২০০৮ সালে প্রাপ্ত ন্যাশনাল আইডিতে তার পিতা ধুংছাচিং মার্মাকে মৃত উল্লেখ করা হয়। অপরদিকে গজালিয়া ইউপি মৃত্যুনিবন্ধন নং-১০১৭০৩১৫১৫৭০০০০৩৪, রেজিষ্টারে ধুংছাচিং মার্মার মৃত্যু তারিখ লেখা রয়েছে ৫জুলাই/২০১০ ইং।এছাড়াও ক্যাহ্লাখই মার্মার জীবদ্দশায় বিভিন্ন জনের কাছে জমি বন্দকীয় দলিলে স্বাক্ষী হিসেবে স্থানীয় নেতৃবৃন্দসহ তার ছেলের নাম উল্লেখ্য রয়েছে ‘ধুংমং’।
অনুসন্ধানে আরো জানাযায়, ধুংছাচিং মার্মা নামের কোন লোক ওই ওয়ার্ডের ভোটার তালিকায় নেই।এছাড়াও গজালিয়া ইউপি সদস্য’র কার্যালয় থেকে ইসুকৃত এক নোটিশে বাদি উসুইহ্লা মার্মাকে মৃত ধুংছাচিং মার্মার একমাত্র ওয়ারিশ হিসেবে গত ৭ জুলাই/১৭ ইং তারিখে উপস্থিত থাকার জন্য বলা হয়। ২৭ জুলাই/১৭ তারিখে চেয়ারম্যান কার্যালয় থেকে ইসুকৃত আরেকটি নোটিশে মৃত ধুংছাচিং মার্মার ওয়ারিশ হিসেবে বাদি দেখানো হয় দু’জনকে।
এরা হলো; (১) উসুইহ্লা মার্মা (২) য়ইচিনু মার্মা। ১৩ আগষ্ট/১৭ তারিখে গজালিয়া ইউপি থেকে ইসু করা সর্বশেষ আরেকটি নোটিশে মৃত ধুংছাচিং মার্মার ওয়ারিশ হিসেবে দেখানো হয় ৩ ’জনকে। এরা হলো; (১) উসুইহ্লা মার্মা (২) য়ইচিনু মার্মা (৩) সায়ইচিং মার্মা।
এক ব্যাক্তির ২বার মৃত্যু ও দেড় মাসের ব্যবধানে ১জন থেকে বেড়ে তিনজন ওয়ারিশ দাবী করার বিষয়টি হাস্যকর হলেও এর পেছনে কোন ভয়ংকর ষড়যন্ত্র কাজ করছে কিনা তা খতিয়ে দেখার দাবী উঠেছে। বিষয়টির প্রতি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নজর দেয়া দরকার বলে স্থানীয়রা মনে করেন।