নিউজ ডেস্ক:
রেলওয়ের সাড়ে তিন হাজার একর জমিই অবৈধ দখলে রয়েছে জানিয়ে রেলপথমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক বলেছেন, বর্তমানে বাংলাদেশ রেলওয়ের অবৈধ দখলভূক্ত রেলভূমির পরিমাণ ৩ হাজার ৭৫২ একর। অবৈধ দখলভুক্ত রেলের জমি দখলমুক্ত করা একটি চলমান প্রক্রিয়া। চলতি অর্থ বছরের মে পর্যন্ত উচ্ছেদের মাধ্যমে ১৬৫ একর রেলভূমি অবৈধ দখলমুক্ত করা হয়েছে।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বাজেট অধিবেশনে গতকাল বুধবারের বৈঠকে টেবিলে উত্থাপিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকার দলীয় সংসদ সদস্য সুকুমার রঞ্জন ঘোষের প্রশ্নের লিখিত উত্তরে তিনি এ তথ্য জানান।
নুরুল ইসলাম সুজনের (পঞ্চগড়-২) অপর এক প্রশ্নের জবাবে রেলমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে রেলওয়ের অব্যহৃত ভূমির পরিমাণ ১০ হাজার ৮৪৩ দশমিক ১৫ একর। এ জমিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী পিপিপির আওতায় আধুনিক হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ, আন্তর্জাতিক মানের পাঁচ তারকা হোটেল কাম বাণিজ্যিক ভবন, বহুতল বিশিষ্ট শপিংমল, গেস্ট হাউস ইত্যাদি নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
রাজধানীর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে পায়রা বন্দর :
আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইনের (পটুয়াখালী-৩) প্রশ্নের জবাবে রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক বলেন, রাজধানী ঢাকার সঙ্গে পায়রা বন্দরকে রেলসংযোগ দিতে ইতিমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। ঢাকা থেকে ফরিদপুর জেলার ভাঙা-বরিশাল-পায়রা বন্দরে রেল লাইন স্থাপনের অংশ হিসেবে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের আওতায় ঢাকা-ভাঙ্গা পর্যন্ত রেল লাইনের কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। এ লক্ষ্যে ভাঙ্গা হতে বরিশাল হয়ে পায়রা সমুদ্র বন্দর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ও বিশদ ডিজাইনের জন্য একটি প্রস্তাব গত ৯ অক্টোবর অনুমোদিত হয়েছে। এর পরে গত বছরের ২০ ডিসেম্বর পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ডিপি রেল লিমিটেড নামক একটি কোম্পানির সাথে রেলওয়ের সমঝোতা স্বাক্ষরিত হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, দেশের জনগণের স্বল্প খরচে নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ সেবা প্রদানের জন্য নানাবিধ উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হাতে নেয়া হয়েছে। গত ২০১৩ সালের ৩০ জুন একটি মাস্টার প্লান সরকারের মাধ্যমে অনুমোদিত হয়েছে। মহাপরিকল্পনাটি ৪টি পর্যায়ে বাস্তবায়নের জন্য ২ লাখ ৩৩ হাজার ৯৪৪ কোটি ২১ লাখ টাকা ব্যয়ে ২৩৫টি প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত আছে।
পদ্মাসেতুতে রেল সংযোগের জন্য চীনের সঙ্গে ঋণ চুক্তির আলোচনা চলছে :
হাবিবুর রহমান মোল্লার (ঢাকা-৫ ) প্রশ্নের জবাবে মুজিবুল হক বলেন, পদ্মাসেতুতে রেল সংযোগ করার লক্ষ্যে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ চলছে। চীন সরকারের অর্থায়নে জি টু জি ভিত্তিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য গত ২০১৫ সালের ১৭ ডিসেম্বর চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেডের (সিআরইসি) কোম্পানির সাথে কমারশিয়াল কনট্রাক নেগোসিয়েশন সম্পন্ন হয়েছে। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট ২টি জেলার ভূমি অধিগ্রহণ শেষ হয়েছে এবং ৪টি জেলার ভূমি অধিগ্রহণের কাজ চলমান। চীনের সঙ্গে ঋণ চুক্তি বিষয়ে আলোচনা চলছে। এটি সম্পাদিত হলে মূল কাজ শুরু করা সম্ভব হবে।
রেলের ডাবল লাইন করার কাজ ভারতীয় ঋণে :
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য সালমা ইসলামের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, রেলওয়েকে আধুনিক, নিরাপদ, সাশ্রয়ী, পরিবেশ বান্ধব, নির্ভরযোগ্য ও যাত্রীসেবা মূলক গণপরিবহন হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করছে সরকার। দেশের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে খ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম রেল করিডর ডাবল লাইনের কাজ চলমান রয়েছে। যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সমান্তরাল একটি স্বতন্ত্র ডুয়েল গেজ রেল ব্রিজের (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মান প্রকল্প) প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।
খুলনা থেকে দর্শনা পর্যন্ত ডাবল লাইন করার কাজ ভারতীয় ঋণে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ঈশ্বরদী থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত রেল লাইনকে ডাবল লাইনের কাজ চীন সরকারের সঙ্গে জি টু জি ভিত্তিতে বাস্তবায়নের জন্য চূড়ান্ত করা হয়েছে। একই পদ্ধতিতে জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ-জামালপুর লাইনেও বর্তমান লাইনের সমান্তরাল একটি ডুয়েল গেজ লাইন নির্মাণ করা হবে।