নিউজ ডেস্ক:
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস এ পদক্ষেপকে ‘গেম চেঞ্জার’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। এ সম্পর্কে এক প্রতিবেদনে তারা জানিয়েছে, এই পদক্ষেপ বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্কের গতি এবং টেকসই উন্নয়নে সহায়ক হবে।
তাদের মতে, এতে উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য যেমন সহজ হবে, তেমনি সরকারেরও বিপুল পরিমাণে রাজস্ব আসবে।
২৬ জুলাই প্রথম কনটেইনার ট্রেনটি ভারতের পেট্রাপোল বন্দর হয়ে বাংলাদেশের বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করে। এ সময় কাস্টমস কমিশনার আজিজুর রহমান ফিতা কেটে সাইড ডোর কনটেইনারে আমদানি বাণিজ্যের সূচনা করেন।
প্রথম কনটেইনার ট্রেনটি ভারত থেকে ২৫টি ফ্ল্যাট ওয়াগনের মাধ্যমে ৫০ কনটেইনারে আটজন আমদানিকারকের ৬৪০ টন ইলেকট্রনিক্স, গার্মেন্ট, কসমেটিকসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি হয়েছে। কনটেইনার পণ্য আমদানিকে ব্যবসায়ীরা বাণিজ্যের নতুন একটি সহজতম পদ্ধতি বলে মত প্রকাশ করেছেন।
ঢাকা এবং নয়াদিল্লির কূটনীতিকদের মতে, কন্টেইনার ট্রেনগুলো কেবল ভারতের প্রয়োজনীয় পণ্য রফতানি করতে নয়, বরং দুর্নীতি ও চাঁদাবাজি বন্ধ, সময় সাশ্রয় ও ওভারহেড ব্যয় ছাড়াই উল্লেখযোগ্যভাবে কম ব্যয়ে বাংলাদেশে পণ্য রফতানিতে সহায়ক হবে।
করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে ভারত সরকারের নিষেধাজ্ঞায় গত ২২ মার্চ থেকে বেনাপোল বন্দরের রেল ও স্থলপথে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যায়। হঠাৎ এমন সিদ্ধান্তে বেনাপোল বন্দরে প্রবেশের অপেক্ষায় ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে প্রায় পাঁচ হাজার ট্রাক পণ্য নিয়ে আটকা পড়ে থাকে। বেনাপোল বন্দরেও ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় আটকা পড়ে রফতানি পণ্যবাহী ট্রাক।
টানা আড়াই মাস ধরে আমদানি বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ীরা লোকসানের কবলে পড়েন। অবশেষে দুই দেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আন্তরিকতায় বিকল্প মাধ্যম হিসেবে সাইড ডোর কনটেইনার পণ্য আমদানি আলোচনা হয়, যার পরিপ্রেক্ষিতে ভারত থেকে কনটেইনারে এসব পণ্য আমদানি করা হয়।
ভারতীয় কর্মকর্তারা এটাকে মাইলফলক হিসেবে বর্ণনা করে বলেছেন, রেল কনটেইনারের মাধ্যমে এই পণ্য পরিবহনের ধারণা ট্রান্স-ট্রান্সশিপমেন্টের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। জুলাইয়ের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের মধ্য দিয়ে ত্রিপুরায় পণ্য পরিবহন শুরুর যে পরিকল্পনা রয়েছে সেটাকে আরো ত্বরান্বিত করবে। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে অংশীদারিত্বের যে স্তরটি ছিল এটা সেটিকে আরো উপরে নিয়ে গেল। শুধু ভারত-বাংলাদেশ নয়, দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য যোগাযোগের ক্ষেত্রেও এটা নতুন দিগন্তের সূচনা করবে।
২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পরে এবং ২০১৪ সালে ভারতে নরেন্দ্র মোদির সরকার ক্ষমতায় আসার পরে উভয় দেশের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি হয়েছে। ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন ভারতের সঙ্গে সিট মহল বিনিময় চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন, তখন এই দুই নেতা ইতিহাস গড়েন। মোদির প্রথম ঢাকা সফরে ৪১ বছর ধরে চলা স্থলসীমা বিরোধের সমাধান হয়, যা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে বড় ধরনের অগ্রগতি ছিল।
শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদিকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমেও শান্তি বজায় রাখতে সহায়তা করেছিলেন, যারা ভারতীয় বাহিনীর উপর হামলা চালিয়েছিল।
গত বছর নয়াদিল্লিতে শেখ হাসিনার সফরকালে, এই দুই নেতা তাদের অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে একটি সোনালি অধ্যায়ের সূচনা করেন।
সোমবার (২৭ জুলাই) একটি অনুষ্ঠানে দু’দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এই অনুভূতির প্রতিধ্বনি করেন। যেখানে ভারত বন্ধুত্বের নিদর্শন স্বরূপ বাংলাদেশকে ১০টি ব্রডগেজ রেলওয়ে লোকোমোটিভ ইঞ্জিন সরবরাহ করে। ভারতের এই উদ্যোগ বাণিজ্য সম্পর্ক উন্নয়নে এবং নতুন সরবরাহ চেইন তৈরির জন্য সংযোগ এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের উভয় পক্ষের প্রতিশ্রুতিগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল।
শেখ হাসিনা টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকায় বাংলাদেশের জিডিপি ৮ দশমিক ২% হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা এশিয়ার সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধির হারের রেকর্ড করেছে। ২০১৮-১৯ সালে দেশের চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা ৯% এরও কম করে দেশকে একটি উৎপাদনকেন্দ্রে পরিণত করেছেন। শেখ হাসিনার বাণিজ্য ও উন্নয়নের দৃষ্টিভঙ্গি বাংলাদেশকে পাকিস্তানের চেয়েও এগিয়ে নিতে সহায়তা করেছে। বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় এখন পাকিস্তানের চেয়েও বেশি।
সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস