চুয়াডাঙ্গা শহরের কানাপুকুরপাড়ায় সন্ধ্যারাতে একদল দুর্বৃত্তদের ধারালো অস্ত্র নিয়ে অতর্কিত হামলা
দোষীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানালো বিএনপি’র প্রার্থী শরীফ : পরিদর্শনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কলিমুল্লাহ
নিউজ ডেস্ক: চুয়াডাঙ্গা জেলা যুবদলের সভাপতি শরিফ উর জামান সিজারকে ধারালো অস্ত্রের কোপে ক্ষতবিক্ষত করেছে দুর্বৃত্তরা। আহত সিজারকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে এ ভর্তি করা হয়। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য কর্তব্যরত চিকিৎসক ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে রেফার্ড করেছেন। গতকাল শনিবার রাত পৌনে ৮টার দিকে চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার কানাপুকুরপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে আহত সিজারকে দেখতে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে এ ছুটে আসেন চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী শরীফুজ্জামান শরীফ, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অহিদুল ইসলাম বিশ্বাস, যুগ্ম আহ্বায়ক ওয়াহেদুজ্জামান বুলা। এছাড়া বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মিরা হাসপাতালে ছুটে আসেন। এ ঘটনায় সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সঙ্গীয় ফোর্সসহ হাসপাতালে যান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. কলিমুল্লাহ। এসময় তিনি কর্মরত পুলিশ সদস্যদের যেকোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন। এ ঘটনায় এখনো পর্যন্ত পুলিশ কাউকে আটক করতে পারেনি। তবে লিখিত অভিযোগ পেলেই শীঘ্রই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছেন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক গোপাল চন্দ্র দাস। আহত শরিফ উর জামান সিজার কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সহ-আপ্যায়ন বিষয়ক সম্পাদক, জেলা ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক, সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার বাগানপাড়া শাহজাহান আলী কিন্নার ছেলে।
আহত সিজার এ প্রতিবেদককে বলেন, শনিবার রাত পৌনে ৮টার দিকে এলাকার ইউসুফের চা’য়ের দোকানে বসেছিলাম। তার বিপরীত সাইডে কয়েকজন যুবক ধানের শীষ প্রার্থীর পোস্টার ছিড়ছিলো বলে কয়েকজন বলাবলি করছিলো। বিষয়টি শুনার পরেও আমি পোষ্টার ছেড়ার জায়গায় না যেয়ে বাড়ী যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। হঠাৎ করে একদল যুবক চা’য়ের দোকানে এসে ধারালো অস্ত্র নিয়ে আমাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে পালিয়ে যায়।
তিনি আরো বলেন, যারা আমার ওপর হামলা করেছেন তারা সবাই ছাত্রলীগ করে। তাদের পরিচয় জানি না, তবে মুখ দেখলে চিনতে পারব বলে জানান তিনি।
এসময় চুয়াডাঙ্গাা সদর হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রশিদ ঝন্টু, সাংগঠনিক সম্পাদক জাহেদ মোহাম্মদ রাজিব খান, দপ্তর সম্পাদক মামুন-উর-রশিদ টনিক, সহ-সাধারণ সম্পাদক আমির হোসেন, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি শাহজাহান খানসহ বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মিরা।
এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রশিদ ঝন্টু ও সাংগঠনিক সম্পাদক জাহেদ মেহাম্মদ রাজিব খান বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ যা খুশি তাই করছে। শনিবার রাতে শরিফ উর জামান সিজার একটি চায়ের দোকানে বসে ছিল। পরে একদল যুবক সিজারে উপর হামলা চালায়। পরে তাকে ধারালো অস্ত্রের কোপে ক্ষতবিক্ষত করে। আমরা এ হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়। সাথে অবিলম্বে প্রকৃত আসামিদের গ্রেফতার পূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। নয়তোবা সাধারণ জনগণকে নিয়ে তারা অশান্ত রাজনীতিকে শান্ত করবেন বলে জানান তিনি।
এ হামলার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী শরীফুজ্জামান শরীফ বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের গণজোয়ার দেখে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ ঈর্ষান্বিত হয়ে বিএনপির নেতাকর্মিদের উপর হামলা ও নির্বাচনী অফিসে আগুন দেওয়াসহ ভাঙচুর চালাচ্ছে। এতে প্রমাণ হয় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরী হয়নি। সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। আমি এ ঘটনার সাথে যারা জড়িত ও দোষী তাদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে শাস্তির ব্যবস্থা করার জোর দাবি জানাচ্ছি।
এবিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের সার্জারি কনসালটেন্ট ডা. ওয়ালিউর রহমান নয়ন ও ডা. মশিউর রহমান এ প্রতিবেদককে বলেন, সিজারের অবস্থা আশঙ্কাজনক, তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে কোপের জখম রয়েছে। তার ডান হাতের শিরা কেটে গেছে। তার ডান হাতের অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক। আমরা তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছি। তবে উন্নত চিকিৎসার জন্য আমরা ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে রেফার্ড করেছি। এদিকে, শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত গতকাল রাতেই শরিফুর উর জামান সিজারকে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালের উদ্দেশ্যে চুয়াডাঙ্গা ত্যাগ করেছেন তার পরিবারের সদস্যরা।এবিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দেলোয়ার হোসেন বলেন, চুয়াডাঙ্গা জেলা যুবদলের সভাপতি সিজারের উপর হামলা করেছে একদল দুর্বৃত্তরা। তাদের পরিচয় পাওয়া যায়নি। তবে তাদেরকে আটক করতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তিনি আরো বলেন, এ বিষয়ে এখনো পর্যন্ত কেউ কোন অভিযোগ করেনি। তবে অভিযোগ পেলেই দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানান এই কর্মকর্তা।এবিষয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক গোপাল চন্দ্র দাস বলেন, আমি মৌখিকভাবে একটি অভিযোগ পেয়েছি। আগামীকাল (আজ) লিখিত অভিযোগ দেওয়ার জন্য বলেছি। আজ তারা লিখিত অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব বলে জানান তিনি।