গত কয়েক দশকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের নিশানা করে সহিংসতা বন্ধ ছিল। কিন্তু মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে দুইবার প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর উপর হামলা রাজনৈতিক সহিংসতা আরও উস্কে দিয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বলছে, হত্যার উদ্দেশ্যেই ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হামলা করা হয়েছে। খবর বিবিসির।
গত জুলাইয়ে পেনসিলভানিয়ার বাটলারে নির্বাচনি প্রচারে বক্তব্য রাখার সময় তাকে লক্ষ্য করে চালানো গুলি ডান কান ছুঁয়ে যায়। পরে স্নাইপারের গুলিতে ২০ বছর বয়সী হামলাকারী নিহত হন।
দুই মাস বাদে রোববার বিকালে ফ্লোরিডায় এক গলফ রাউন্ড চলাকালে ফের ট্রাম্পকে হত্যার চেষ্টা করা হয় জানিয়ে এফবিআই বলছে, সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে তারা নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে।
তদন্তকারীরা বলছেন, ওয়েস্ট পাম বিচ গলফ কোর্সে ট্রাম্প যখন খেলছিলেন, তখন একে-৪৭ এর মত অ্যাসল্ট রাইফেল নিয়ে ঝোঁপের ভেতর অপেক্ষায় ছিলেন এক ব্যক্তি।
সিক্রেট সার্ভিস এজেন্টরা দেখতে পাওয়ার আগেই ওই ব্যক্তি গুলি ছোড়েন। সন্দেহভাজন একটি গাড়িতে করে পালিয়ে গেলেও পরে তাকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়।
বিবিসি লিখেছে, গত কয়েক বছর রাজনৈতিক সহিংসতার ছোট-বড় নানা ঘটনার ‘নতুন বাস্তবতার’ সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয়েছে আমেরিকানদের। জাতীয়ভাবে ঐকমত্য কমেছে, রাজনৈতিক বিভাজন আরো স্পষ্ট হয়েছে, কমেছে প্রার্থীদের আচরণগত মান।
যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক সহিংসতার মহামারী চলছে। ফলে এই ধরনের রাজনৈতিক সহিংসতা সম্ভবত ‘নতুন বাস্তবতায়’ পরিণত হয়েছে, যদিও সেই ধাক্কা হজম করতে মার্কিনিদের বেগ পেতে হচ্ছে।
আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ডেমোক্রেটিক পার্টির কমলা হ্যারিস।
ফ্লোরিডার ঘটনার পর তিনি এক বিবৃতিতে বলেছেন, “আমেরিকায় সংঘাতের কোনো স্থান নেই। ”
হত্যাচেষ্টার ঘটনাটি আমেরিকার রাজনীতিতে কতটা প্রভাব পড়বে তা নির্ভর করছে আক্রমণকারীর পরিচয় ও উদ্দেশ্যের ওপর। ভাইস প্রেসিডেন্ট হ্যারিস সহিংসতার বিরুদ্ধে কথা বললেও আজকের যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরনের সহিংসতা বাড়ছে।
সবশেষ হত্যাচেষ্টার ঘটনার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প তার প্রথম বিবৃতিতে বলেছেন, কোনো কিছুই তাকে দমাতে পারবে না।
সমর্থকরা দাবি করেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে আক্রমণ করা হচ্ছে, কারণ তিনি সেই সব আমেরিকানদের (কৃষক, শ্রমিক ও মধ্যবিত্ত) পক্ষে কথা বলছেন, যাদের আমেরিকা ‘ভুলে গেছে’। আর আক্রান্ত হাওয়ার পর ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়াও ওই প্রচারের সঙ্গে বেশ মানিয়ে যায়।
গেল জুলাইয়ে প্রথম হত্যাচেষ্টার সময় ট্রাম্প ‘লড়াই, লড়াই, লড়াই’ বলে যে আওয়াজ তুলেছিলেন, তা অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে সমর্থকদের।
ট্রাম্প বিষয়টা এভাবে বলেন– “তারা আমাকে আক্রমণ করছে না, তারা আসলে আক্রমণ করছে আপনাকে, আমি কেবল তার পথে দাঁড়িয়ে আছি। ”
তবে পেনসিলভানিয়ার ঘটনা আমিরকানদের যতটা নাড়া দিয়েছিল, এবারের ঘটনা ততটা নাও দিতে পারে। কারণ আগের ঘটনাটি জনসম্মুখে ঘটেছিল, সেখানে টিভি ক্যামেরাও ছিল। ওই ঘটনায় এক সমর্থক নিহত ও দুইজন আহত হন।
বিবিসি লিখেছে, এবার ঘটনাটি ঘটেছে ট্রাম্পের মালিকানাধীন একটি গলফ কোর্সে। গুলির পর সাবেক প্রেসিডেন্টকে তাৎক্ষণিকভাবে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ঘটনাটি যেহেতু ক্যামেরায় ধরা পড়েনি, যেহেতু সেই ভিডিও দিনের পর দিন মানুষকে দেখানোর সুযোগ মিলছে না, সেহেতু এ ঘটনার প্রভাব মানুষের মনে কতটা স্থায়ী হবে, তা নিয়ে সংশয় থেকে যাচ্ছে।
তবে সর্বশেষ ঘটনাটিও খবরের শিরোনাম হয়েছে, তাতে সম্প্রতি ট্রাম্পের প্রচার ক্যাম্প যে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে, তা সামলে ওঠা সহজ হবে।