নিউজ ডেস্ক:মৌলভীবাজার থেকে উদ্ধার করা হয়েছে দামুড়হুদার বিষ্ণপুরের আলোচিত প্রেমিক যুগল পূজা রানী-রতনকে। গত বৃহস্পতিবার রাতে পূজা রানীর প্রেমিক আবু সাঈদ রতনকে আটকসহ পূজা রানীকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর থানা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। আজ তাঁদের আজ আদালতে প্রেরণ করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
দামুড়হুদা উপজেলার বিষ্ণপুর গ্রামের হিন্দু ধর্মাবলম্বী পূজা রানী (১৪) প্রেমের টানে একই গ্রামের মুসলিম ধর্মাবলম্বী আবু সাঈদ রতনকে (২৮) বিয়ে করেছেন। ধর্ম ত্যাগ করে পূজা রানী ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে এখন নব মুসলিম হিসেবে নাম ধারণ করেছেন জান্নাতুল ফেরদাউস। গত ৭ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গার মাস্টারপাড়ার বোনের বাড়ি থেকে সাজাহানের ছেলে প্রেমিক আবু সাঈদ রতনের সঙ্গে অজানার উদ্দেশে পাড়ি দেয় সে। সিলেট মৌলভীবাজারে পৌঁছানোর পর পূজা রানী ধর্ম ত্যাগ করে রতনের সঙ্গে বিয়ে করে। ৭ মাস ধরে মৌলভীবাজারেই সংসার করছেন তাঁরা। গত বৃহস্পতিবার চুয়াডাঙ্গা সদর থানা, দামুড়হুদা থানা ও ঢাকা সিআইডি মৌলভীবাজার সদর থানা পুলিশের সহায়তায় পূজা রানীকে উদ্ধারসহ প্রেমিক রতনকে গ্রেপ্তার করে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় সোপর্দ করে। আজ রোববার তাঁদের আদালতে প্রেরণ করা হবে বলে জানায় থানার পুলিশ।
পুলিশ জানায়, চুয়াডাঙ্গা মাস্টার পাড়ার এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে পূজা রানীকে অপহরণ করা হয়েছে বলে গত ২২ মে কোর্টে একটি মামলা করেন পূজা রানীর পিতা দামুড়হুদা উপজেলার বিষ্ণপুর গ্রামের প্রশান্ত কর্মকার। ওই মামলাতে বিষ্ণপুরের আবু সাঈদ রতন, তাঁর মা-বাবাসহ আরও কয়েকজনকে আসামি করা হয়। ২৭ মে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় মামলা রেকর্ড হয়। মামলা রেকর্ড হলে সদর থানার একাধিক কর্মকর্তা মামলাটি তদন্ত করেন। সর্বশেষ চুয়াডাঙ্গা সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আকরাম হোসেন মামলাটির তদন্ত করছিলেন। তদন্তকালীন সময়ে এসআই আকরাম, দামুড়হুদা পুলিশ ও ঢাকা সিআইডি মৌলভীবাজার সদর থানা পুলিশের সহায়তায় পূজা রানীকে উদ্ধারসহ প্রেমিক রতনকে গ্রেপ্তার করে চুয়াডাঙ্গা সদর থানা হেফাজতে নিয়েছে। আজ তাঁদের আদালতে প্রেরণ করা হবে।
আরও জানা যায়, তিন বছর আগে বিষ্ণপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণিতে পড়ালেখা করা অবস্থায় পূজা রানীকে নিয়ে পালিয়ে যান নিজেকে হিন্দু হিসেবে পরিচয়দানকারী এক মুসলিম ছেলে। ঘটনার দিনই মাগুরা থেকে তাঁদের আটক করে দামুড়হুদা থানার পুলিশ। জানা যায়, ওই মামলাতে হিন্দু হিসেবে পরিচয়দানকারী অপূর্বর যাবজ্জীবন সাজা হয়। পরে একই এলাকার আবু সাঈদ রতনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে পূজা রানীর। এরপর গত ৬ মার্চ রাতের আঁধারে পালিয়ে যান রতন ও পূজা রানী। এ ঘটনায়ও পূজা রানীর পিতা প্রশান্ত কুমার বাদী হয়ে দামুড়হুদা থানায় মামলা করেন।
মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, ঘটনার দিন ৬ মার্চ দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে তাঁর মেয়ে পূজা রানী প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বাইরে বের হলে তাকে অপহরণ করা হয়। ওই ঘটনায় দামুড়হুদা থানার পুলিশ পাঁচ-ছয় দিন পর রতনের বাড়ি থেকে পূজা রানীকে উদ্ধার করে আদালতের মাধ্যমে তার পিতার হেফাজতে প্রেরণ করে।
এরপর পূজা রানীকে তার বোন-জামাই চুয়াডাঙ্গার মাস্টার পাড়ার বাবুল কর্মকারের বাড়িতে রাখে তার পরিবার। গত ৭ এপ্রিল বাবুল কর্মকারের বাড়ি থেকে শ্যাম্পু কেনার জন্য বাইরে এলে পূজা রানীকে অপহরণ করা হয় বলে চুয়াডাঙ্গা আদালতে আবারও একটি অপহরণ মামলা করা হয়। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মৌলভীবাজার থেকে ওই মামলার এজাহার নামীয় আসামি বিষ্ণপুরের সাজাহানের ছেলে পূজা রানীর প্রেমিক আবু সাঈদ রতনকে আটকসহ পূজা রানীকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর থানা হেফাজতে নেওয়া হয়। তাঁদের আজ আদালতে প্রেরণ করা হবে বলে জানায় থানার পুলিশ।