চুয়াডাঙ্গায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৫ জনের কোভিড-১৯ শনাক্ত, সুস্থ হলেন আরও ১৯ জন
করোনায় আলমডাঙ্গার এক মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যু!
নিউজ ডেস্ক:চুয়াডাঙ্গায় গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৪৫ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। গতকাল সোমবার রাত ৯টায় জেলা সিভিল সার্জন অফিসে ৭৭ জনের রিপোর্ট এসে পৌঁছায়। এর মধ্যে ৪৫ জনের রিপোর্ট পজিটিভ ও বাকি ৩২ জনের রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। জেলায় এ নিয়ে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫৮ জনে। গতকাল জেলায় নতুন আক্রান্ত ৪৫ জনের মধ্যে সদর উপজেলার ২৭ জন, আলমডাঙ্গা উপজেলার ১৪ জন ও দামুড়হুদা উপজেলার ৪ জন রয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ ২৮ জন ও নারী ১৭ জন। বয়স ৮ থেকে ৭৭ বছর পর্যন্ত। এদিকে, গতকাল করোনা আক্রান্তে আলমডাঙ্গা কলেজপাড়ার বীর মুক্তিযোদ্ধা আহসান মৃধার (৭০) মৃত্যু হয়েছে। যশোর সিএমএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। আহসান মৃধা আলমডাঙ্গা উপজেলার ভোদুয়া গ্রামের মৃত আখের আলী মৃধার ছেলে। তিনি সেনা বাহিনীর সার্জেন্ট হিসেবে অবসর নেন। তারপর আলমডাঙ্গা কলেজপাড়ায় বসবাস শুরু করেন।
তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। সম্প্রতি তিনি করোনাভাইরাস পজিটিভ হলে প্রথমে বাড়িতে চিকিৎসাধীন থাকলেও পরে যশোর সিএমএম হাসপাতালে ভর্তি হন। গতকাল আসরের নামাজের পর আলমডাঙ্গা দারুস সালাম মাঠে বীর মুক্তিযোদ্ধা আহসান মৃধাকে গার্ড অব অনার প্রদান করে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ লাইনসের একটি চৌকশ দল। সেনা বাহিনীর পক্ষ থেকেও গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। পরে জানাজা শেষে তাঁর দাফনকার্য সম্পন্ন করা হয়। তাঁর জানাজায় অংশ নেন আলমডাঙ্গা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) হুমায়ন কবির, থানার ওসি (তদন্ত) মাসুদুর রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাক্তার শাহাবুদ্দিন, বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী শেখ নুর মোহাম্মদ জকু প্রমুখ।
এদিকে, গতকাল নতুন আক্রান্ত ৪৫ জনের মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় আক্রান্তদের এলাকা হলো- ওয়াপদাপাড়া, বোয়ালমারী, ফার্মপাড়া, পলাশপাড়া, দশমীপাড়া, মোমিনপুর, গোবিন্দপুর, জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস, রায়পাড়া, রামনগর, শেখপাড়া, মাঝেরপাড়া, সিঅ্যান্ডবি পাড়া, গুলশানপাড়া, ইসলামপাড়া, পোস্ট অফিস, পিডাব্লিউডি অফিস, সবুজপাড়াসহ ২৭ জন আক্রান্ত হয়েছে। আলমডাঙ্গা উপজেলার বাঁশবাড়িয়া, রোয়াকুলি, মাদারহুদা, মুন্সিগঞ্জ গ্রামের ৮ জনসহ ১৪ জন ও দামুড়হুদা ইপজেলার ৪ জন।
গতকাল কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পিসিআর ল্যাবের তথ্যে জানা যায়, গতকাল ল্যাবে ফলোআপ নমুনাসহ চুয়াডাঙ্গার ৯৯টি, মেহেরপুরের ৪৬টি, ঝিনাইদহের ৮১টি, কুষ্টিয়ার ১৩৯ ও নড়াইলের ১১টি নমুনাসহ ৩৭৬টি নমুনা পরীক্ষা করে চুয়াডাঙ্গায় নতুন ৪৫ জন, মেহেরপুরে ১৫ জন, ঝিনাইদহের ২৬ জন, কুষ্টিয়ায় ২৭ ও নড়াইলে ৩ জনসহ মোট ১১৬ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা জেলার ১৩ জনের ফলোআপ রিপোর্ট পজিটিভ। বাকিগুলোর ফলাফল নেগেটিভ। এছাড়া গত রোববার করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত হামিদুলের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।
জানা যায়, গত রোববার জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ করোনা আক্রান্ত সন্দেহে ৭৭টি নমুনা সংগ্রহ করে। উক্ত নমুনার মধ্যে গতকাল ৭৭টি নমুনার ফলাফলই চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন অফিসে এসে পৌঁছায়। এর মধ্যে ৪৫ জনের রিপোর্ট পজিটিভ ও ৩২ জনের রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। গতকাল করোনা আক্রান্ত সন্দেহে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ গতকাল ৮৪টি নমুনা সংগ্রহ করে। সদর উপজলোসহ ৪ উপজেলা থেকে সংগৃহীত ৮৪টি নমুনা পরীক্ষার জন্য কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. শামীম কবির বলেন, জেলায় নতুন করে ৪৫ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় আক্রান্ত ২৭ জন। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আক্রান্তদের সার্বিক খোঁজখবর নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে সকল উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাগণকে অবগত করা হয়েছে। তারা আক্রান্তদের শারীরিক খোঁজখবর নিয়ে তাঁদের হোম আইসোলেশন ও প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে।
চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন অফিসের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী জেলা থেকে এ পর্যন্ত মোট নমুনা সংগ্রহ ৪ হাজার ৪৮১টি, প্রাপ্ত ফলাফল ৪ হাজার ২২৫টি, পজিটিভ ১ হাজার ৫৮ জন ও নেগেটিভ ৩০৭৭ জন। ফলাফল পেতে বাকি আছে ২৫৬টি নমুনার। গতকাল নতুন ১৯ জন সুস্থ হয়েছেন। এ নিয়ে জেলায় মোট সুস্থতার সংখ্যা ৫৪৫ জন ও মৃত্যু ২১ জন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জেলায় গতকাল হোম আইসোলেসনে ছিলেন ৪৩৪ জন ও প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে ছিলেন ৫৬ জন।