একমাত্র আল্লাহ বাদে এই মহাবিশ্বের সব সৃষ্টি নশ্বর। আল্লাহ ছাড়া সব কিছু তার নির্দিষ্ট হায়াত পূর্ণ হওয়ার পর নিঃশেষ হয়ে যাবে। এ নিশ্চিত ধ্বংসের কথা অনেক সৃষ্টিই জানে না। অন্যান্য পশুপাখি, কীট-পতঙ্গ জানে না কখন কার জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটবে।
সব প্রাণের মৃত্যু আছে:
মৃত্যুর মতো সত্য আর কিছু নেই। সব আত্মাকে একদিন মৃত্যুবরণ করতে হবে। আল্লাহ তাআলা কোরআন মাজিদের সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৮৫; সুরা আম্বিয়া, আয়াত: ৩৫; সুরা আনকাবুত, আয়াত: ৫৭-তে বলেছেন, ‘প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। ’ আর এ মৃত্যু হয়ে থাকে আল্লাহ তাআলার নির্দেশে। অন্যত্র ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহর হুকুম ছাড়া কেউ মৃত্যুবরণ করতে পারে না। সে জন্য একটা সময় নির্ধারিত রয়েছে (সুরা আলে ইমরান: ১৪৫)তিনি জন্ম-মৃত্যুর স্রষ্টা। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আর আল্লাহ জীবন ও মরণ দান করেন এবং তাঁরই কাছে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। ’ (সুরা ইউনুস, আয়াত: ৫৬)
জন্ম-মৃত্যু সৃষ্টির কারণ:
জন্ম-মৃত্যু আল্লাহ তাআলার কুদরতের এক মহান সৃষ্টি। তিনি কেন জন্ম-মৃত্যু সৃষ্টি করেছেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘পুণ্যময় তিনি, যাঁর (কুদরতের) হাতে রাজত্ব। তিনি সব কিছুর ওপর সর্বশক্তিমান। যিনি সৃষ্টি করেছেন মরণ ও জীবন, যাতে তোমাদের পরীক্ষা করেন। কে তোমাদের মধ্যে কর্মে শ্রেষ্ঠ? তিনি পরাক্রমশালী, মহা ক্ষমাশীল। ’ (সুরা মুলক, আয়াত: ২)এ আয়াতে বলা হয়েছে, জীবন ও মৃত্যু সৃষ্টি করার কারণ হলো মানুষকে পরীক্ষা করা।
শুধু মানুষ জানে তার মৃত্যুর কথা:
শুধু মানুষ জানে যে তাকে একদিন মরতে হবে। আল্লাহ তাআলা কোরআন মাজিদে মানবজাতিকে তার মৃত্যুর কথা অবহিত করেছেন। নবী-রাসুলরা তাঁদের উম্মতদের পার্থিব জীবনের পর আরেকটি জীবনের কথা বর্ণনা করেছেন। মানুষের মৃত্যুর কথা অবহিত করার কারণ হলো, যাতে তারা মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারে। মৃত্যুর পর যদি আর কোনো জীবন না থাকত, তাহলে মৃত্যু নিয়ে কোনো চিন্তার কারণ থাকত না। মৃত্যু যদি জীবনাবসানের নাম হতো, তবে পৃথিবীতে যার যার ইচ্ছামতো চলার সুযোগ থাকত। কিন্তু মুমিন মাত্রই বিশ্বাস করে যে মৃত্যু মানে এক জীবন থেকে আরেক জীবনে প্রত্যাবর্তন। দুনিয়ার জীবন অস্থায়ী, আর পরকালের জীবন স্থায়ী। দুনিয়ার সুখ-শান্তি আখিরাতের সুখ-শান্তির তুলনায় তুচ্ছ ও অতি নগণ্য।মৃত্যুর সময় মানুষের অজ্ঞাত:
আল্লাহ তাআলা মানুষকে তার মৃত্যুর কথা জানিয়ে দিয়েছেন, কিন্তু কখন, কার কোন জায়গায় মৃত্যু হবে, তা গোপন করেছেন। হাদিস শরিফে বলা হয়েছে, মানুষের চোখের দুই ভ্রুর মাঝখানে মৃত্যুর তারিখ লেখা আছে। কিন্তু মানুষ তা দেখতে পায় না। মানুষ থেকে মৃত্যুর তারিখ অজ্ঞাত রাখার কারণ হলো, যদি মানুষ মৃত্যুর নির্দিষ্ট তারিখ জানত, তাহলে এ পৃথিবী অচল হয়ে যেত। মানুষ ঘর-সংসার করত না। মৃত্যুর সময় অজ্ঞাত হওয়ার কারণে মানুষ মনে করে সে দীর্ঘজীবী হবে, এমনকি মৃত্যুর কথাও ভুলে যায়।মৃত্যুর তারিখ নির্দিষ্ট:
মানুষ একেক জন একেক সময় মৃত্যুবরণ করে। তবে তার মৃত্যুর সময় ও তারিখ নির্দিষ্ট। মায়ের জরায়ুতেই তা নির্দিষ্ট করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আমি কোনো জনপদকে ধ্বংস করিনি, কিন্তু তার নির্দিষ্ট সময় লিখিত ছিল। কোনো সম্প্রদায় তার নির্দিষ্ট সময়ের আগে যায় না এবং দেরিও করে না। ’ (সুরা হিজর, আয়াত : ৪৫)পশু-পাখি মৃত্যুর কথা জানে না:
আল্লাহ তাআলা পশু-পাখির মধ্যে রেখেছেন মানুষের রিজিক। মনীষীরা বলেছেন, যদি এসব প্রাণী জানত যে তাদের একদিন মরতে হবে, তাহলে তারা মৃত্যুর চিন্তায় কঙ্কাল হয়ে যেত। আর এর ফলে মানুষের রিজিকের ঘাটতি দেখা দিত। আল্লাহ তাআলা মানুষের প্রতি এতই মেহেরবান যে তিনি পশু-পাখির মাধ্যমে তাদের রিজিকের ব্যবস্থা রেখেছেন এবং মৃত্যুর বিষয়টি তাদের থেকে অজ্ঞাত রেখেছেন।মানুষের কর্তব্য:
আল্লাহ তাআলা মানুষকে যেহেতু তার মৃত্যুর কথা জানিয়ে দিয়েছেন, সেহেতু তার উচিত হবে মৃত্যুর জন্য সদা প্রস্তুত থাকা। আর মুমিন যেহেতু বিশ্বাস করে তার মৃত্যুর পরে আরেকটি জীবন আছে, সেহেতু তার কর্তব্য হলো পারলৌকিক জীবনের সুখের জন্য কাজ করা। তাদের ভাবা দরকার, আমাদের আগে যারা মৃত্যুবরণ করেছেন, তাঁদের অনেকের কবরও খুঁজে পাওয়া যায় না। আমাদের অবস্থাও অনুরূপ হবে যে পরবর্তী সম্প্রদায় আমাদের কবরও খুঁজে পাবে না। তাই মুমিনদের উচিত, সর্বপ্রকার গর্ব-অহংকার, অন্যায়-অবিচার, পাপাচার ইত্যাদি অপকর্ম বর্জন করে স্বীয় প্রভুর নির্দেশমতো পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র জীবন লাভ করা এবং আখিরাতের সুখ-শান্তি কামনা করা। আল্লাহ তাআলা আমাদের পরকালের সুখ-শান্তির জন্য বেশি বেশি করে আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।লেখক: মুফতি মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, প্রধান ফকিহ, আল-জামেয়াতুল ফালাহিয়া কামিল মাদরাসা, ফেনী।