নিউজ ডেস্ক:
অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান বলেন, সামগ্রিক মূল্যায়নে যে পরিমাণ মুদ্রাপাচারের কথা বলা হয়েছে ওই পরিমাণ হয়তো হবে না। তবে যে পরিমাণই হোক না কেন আমাদের সংস্থাগুলো অত্যন্ত সক্রিয়। ইতিমধ্যে মুদ্রা পাচারকারীদের মধ্যে বেশকিছু অপরাধীকে শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ও বেশকিছু অপরাধী নজরদারিতে আছে।
গত বুধবার রাজধানীর আইডিবি ভবনে শুল্ক গোয়েন্দার সদর দপ্তরে সততার পুরস্কার হিসেবে দুই পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে সম্মাননা ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের উদ্যোগে মুদ্রাপাচার রোধে মানি লন্ডারিং আইন সংশোধন করে পুলিশের সিআইডি, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও বিআইএফআই এর সঙ্গে ক্ষমতা দেওয়া হয়। মুদ্রাপাচার প্রতিরোধে এনবিআরের শুল্ক গোয়েন্দা ও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা ইউনিট অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে। আমরা ইতিমধ্যে বেশকিছু বাণিজ্যিকভিত্তিক মুদ্রাপাচারের রহস্য উদঘাটন করে মামলা দায়ের করি। এতে বেশকিছু অপরাধীকে শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আরো বেশকিছু অপরাধী নজরদারিতে আছে। এ বিষয়ে আমরা সতর্ক থাকব।
নজিবুর রহমান বলেন, যদিও জিএফআইর প্রতিবেদনটির পদ্ধতিগত দিক নিয়ে ইতিমধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। কিসের ভিত্তিতে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে সেটা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ নেই। আমরা এটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছি। আমরা মনে করি এতে প্রকৃত তথ্য এলে দেশবাসী আরো উপকৃত হবেন। বাণিজ্যে আন্ডার ইন ভয়েসের মাধ্যমে পণ্য আমদানিতে যে অর্থপাচার হয় তারও একটি মূল্যায়ন প্রয়োজন।
তিনি বলেন, সামগ্রিক মূল্যায়নে যে পরিমাণ মুদ্রাপাচারের কথা বলা হয়েছে ওই পরিমাণ হয়তো হবে না, পরিমাণ অনেক কমতে পারে। যে পরিমাণই মুদ্রাপাচার হোক না কেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সংস্থাগুলো তার বিরুদ্ধে অত্যন্ত সক্রিয়।
ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই) মঙ্গলবার বাংলাদেশ থেকে ২০১৪ সালে প্রায় ৯১১ কোটি ডলার বা প্রায় ৭২ হাজার ৮৭২ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। আমদানি-রপ্তানির সময়ে পণ্যের প্রকৃত মূল্য গোপন করার মাধ্যমেই এই অর্থের বড় অংশ পাচার করা হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৪ সালে যে পরিমাণ অর্থ বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে পাচার হয়ে গেছে, তা চলতি অর্থবছরের মূল্য সংযোজন কর (মূসক) খাতে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার সমান। ২০০৫ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে প্রায় ৭ হাজার ৫৮৫ কোটি ডলার বা ৬ লাখ ৬ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা। এ অর্থ দিয়ে অর্থমন্ত্রী প্রায় দুই অর্থবছরের বাজেট তৈরি করতে পারতেন।
মূল প্রতিবেদনে ১৪৯টি দেশের অবৈধ অর্থ প্রবাহের তথ্য দেওয়া হয়েছে। সারাবিশ্বে যে পরিমাণ অর্থ পাচার হয় তার ২৪ শতাংশই হয় উন্নয়নশীল দেশ থেকে। আর প্রতিবছরই অর্থ পাচারের হার ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, কেবল ২০১৪ সালে উন্নয়নশীল ও উদীয়মান অর্থনীতির দেশ থেকে প্রায় ১ ট্রিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি আট বছর ধরে উন্নয়নশীল দেশ থেকে অর্থ পাচারের তথ্য প্রকাশ করে আসছে। এবারের প্রতিবেদনে রয়েছে ২০০৫ থেকে ২০১৪ সাল সময় পর্যন্ত তথ্য।
প্রতিষ্ঠানটি সর্বশেষ ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে ‘উন্নয়নশীল বিশ্ব থেকে অবৈধ অর্থের প্রবাহ ২০০৪-১৩’নামের প্রতিবেদন প্রকাশ করছিল। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৩ সালে বাংলাদেশ থেকে ৯৬৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার পাচারের তথ্য ছিল। টাকার অঙ্কে যা ৭৬ হাজার ৩৬১ কোটি ৪০ লাখ টাকা। আর সব মিলিয়ে ২০০৪ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে বাংলাদেশ থেকে পাচার হয় ৫ হাজার ৫৮৭ কোটি ৭০ লাখ ডলার বা ৪ লাখ ৪১ হাজার ৪২৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ গড়ে প্রতিবছর পাচার হয়েছে ৫৫৮ কোটি ৮০ লাখ ডলার। নতুন প্রতিবেদনে অনুযায়ী আগের বছরের তুলনায় ২০১৪ সালে অর্থ পাচার কিছুটা কমেছে।