দর্শনায় মোটরসাইকেল মেকানিক জাকিরের মৃত্যুর ঘটনা : স্ত্রীর পরকিয়ার অভিযোগ
নিউজ ডেস্ক:দর্শনার আজিমপুরে স্ত্রীর বর্ষার পরকিয়ায় বলি হোলেন মোটরসাইকেল মেকানিক জাকির হোসেন এমন অভিযোগ তুলেছে নিহতের পরিবার। এ ঘটনায় জাকিরের পিতা লাল মোহাম্মদ বাদী হয়ে স্ত্রী বর্ষা ও তার প্রেমিক সুমনসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে দামুড়হুদা আমলী আদালতে অভিযোগ দায়ের ও জাকিরের লাশের পুনরায় ময়নাতদন্তের দাবি করেছে। আদালত বাদির অভিযোগ এজাহারভুক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দামুড়হুদা থানা পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন এবং অভিযোগকারীর আবেদনের প্রেক্ষিতে একজন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটের উপস্থিতিতে জাকিরের লাশ কবর থেকে উত্তোলন করে পুনরায় ময়নাতদন্তেরও নির্দেশ দিয়েছেনে। স্ত্রী বর্ষাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আজ সোমবার জাকিরে লাশ উত্তোলন করা হতে পারে। গত ৫ জুলাই বৃহস্পতিবার রাতে জাকির হত্যার শিকার হয়। জাকির দামুড়হুদা উপজেলার কুড়ালগাছী গ্রামের লাল মহাম্মদের ছেলে।
আদালত সুত্রে জানা যায়, গতকাল রবিবার দামুড়হুদা উপজেলার কুড়ালগাছি গ্রামের মৃত আমির হোসেনের ছেলে জাকিরের পিতা লাল মোহাম্মদ বাদি হয়ে দামুড়হুদা আমলী আদালতে ৩০২/৩৪ দন্ডবিধিতে জাকিরের স্ত্রী বর্ষা খাতুন তার পরকিয়া প্রেমিক সুমনসহ ৬ জনের নামে অভিযোগ দায়ের করে। আদালতের বিজ্ঞ বিচারক মো. মুস্তাফিজুর রহমান বাদির অভিযোগ পর্যালোচনা করে দামুড়হুদা থানার ওসিকে অভিযোগটি এজাহারভুক্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রজু করার নির্দেশ প্রদান করেন। একই সাথে তিনি একজন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রের উপস্থিতে হত্যার শিকার জাকিরের লাশ করব থেকে উত্তোলন করে পুনরায় ময়নাদন্তেরও নির্দেশ দেন।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ৫ জুলাই বৃহস্পতিবার রাত ১১টা থেকে ভোর ৬ টার যে কোনো সময় জাকিরের স্ত্রী বর্ষা খাতুন ও তার পরকিয়া প্রেমিক খালাতো ভাই দর্শনার মোহাম্মদপুর গ্রামের মনির ফোরম্যানের ছেলে সমুন ও তার সঙ্গীদের নিয়ে জাকির কে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। এরপর বর্ষা জাকিরের পরিবারকে প্রথমে মোবাইল ফোনে জানায় জাকির স্ট্রোক করে মারা গেছে। পরে জানায় সে সিলিং ফ্যানের সাথে ওড়না পেচিয়ে আত্মহত্যা করেছে। জাকিরের পরিবারের সদস্যরা দর্শনায় জাকিরের বাড়ীতে এলে জাকিরে স্ত্রী জানায়, জাকিরকে চুয়াডাঙ্গা হাসপাতালে নিয়ে গেছে। তবে কারা জাকিরকে হাসপাতালে নিয়ে গেছে সে তথ্যও যেমন দিতে পারেনি অপরদিকে জাকির ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস দিলো তাকে সিলিংপ্যান থেকে কে নামালো সে ক্ষেত্রে বর্ষার স্বীকার করে সে নিজেই ঝুলন্ত অবস্থায় ওড়না কেটে জাকিরকে নামিয়েছে। ওড়না এমনভাবে কাটা হয়েছে যা সন্দেহজনক এবং গলাই ফাঁস দিয়ে কেউ মারা গেলে তা পুলিশকে বা প্রতিবেশীকে জানানো দরকার হলেও বর্ষা কাউকে না জানিয়ে জাকিরের লাশ নামানোতে পরিবারের সদস্যদের সন্দেহ দানাবাধে। এসময় তারা দর্শনা তদন্তকেন্দ্রের কর্তব্যরত পুলিশ পরিদর্শকের কাছে অভিযোগ করে। দর্শনা পুলিশ পরিদর্শক ইউনুস আলী বর্ষাকে আটক করে। এরপর জাকিরে লাশ উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিলে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক জাকিরকে মৃত ঘোষণা করে।
এদিকে, জাকিরের লাশের ময়নাতদন্ত নিয়ে জাকিরের পরিবারের স্বজনরা ময়না তদন্তে নিযুক্ত চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিয়োগ তুলেছে। অভিযোগে স্বজনরা জানিয়েছেন, লাশের ময়না করার সময় কোনো ডোম ছাড়া কোনো কিচিৎসককে তারা দেখতে পায়নি। মর্গে ঢুকে জাকিরের স্বজনরা দেখতে পায় জাকিরের লাশের বুকের সামান্য উডরের চামড়া কাটা। রোগী স্বজনরা ডোমকে জিজ্ঞাসা করে লাশের ময়না মানেতো বুক চিরে ফেলে তো এতোটুকু কেটেছেন তাও ফিতরে না উপরের চামড়া কেটেছেন এটা আবার কেমন ময়নাতদন্ত। ডোম উত্তর দেয় চিকিৎসক ডা. পরিতোষ কুমার স্যার আর ডা. কানিজ নাইমা স্যার দেখে বলেছে আপনাদের স্বজন জাকির আত্মহত্যা করেছে। তাই বেশী না কাটার জন্য বলেছেন। তারপরেও স্যাররা বলেছে পেটে ও ঘাড়ে সামান্য কেটে সেলাই দিয়ে দিতে বলেছে।
এদিকে এ বিষয়ে ডা. পরিতোষ কুমার বলেন, ময়নাতদন্ত মানেই তো লাশেরকাটা ছেড়া করতে হয় অবশ্যই লাশের ময়নাতদন্ত নিয়ামানুসারে করা হয়েছে। পুলিশের কাছে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পৌঁছে যাবে। একই কথা বলেন ডা. কানিজ নাইমা।
উল্লেখ্য ১১ বছর আগে দামুড়হুদা উপজেলার কুড়ালগাছী গ্রামের লাল মোহাম্মদের ছেলে জাকির হোনের সাথে জীবননগর উপজেলার লাভলী পাড়ার হাতেম মিস্ত্রীর মেয়ে বর্ষার সাথে বিবাহ হয়। বর্তমানে জাকিরের দুটি নাবালিকা কন্যা সন্তান রয়েছে।