চুয়াডাঙ্গায় রাতে সড়ক বর্ধিতকরণ কাজে ব্যাপক অনিয়ম : সংশ্লিষ্টদের আচরণ প্রশ্নবিদ্ধ!
নিউজ ডেস্ক:জীবননগর-দর্শনা-চুয়াডাঙ্গা আঞ্চলিক মহাসড়ক বর্ধিতকরণকাজের একটি অংশে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, যেনতেনভাবে কাজ করে বিপুল অর্থ লোপাট করছেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার। শুধু তায় নয়, রাতের আধারে সড়ক ও জনপথের প্রতিনিধিদের অনুপস্থিতিতে মাটির উপর নামমাত্র পিচ ঢেলে রোলার করে রাস্তার কাজ শেষ করা হচ্ছে। এরই মধ্যে নি¤œমানের সামগ্রী ব্যবহার করে দায়সারা কাজে বাঁধা দিয়ে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়েছে স্থানীয় জনগণ। গতকাল সোমবার রাতে সরেজমিনে এসব অনিয়মের সত্যতা পাওয়া গেছে। তবে ঘটনাস্থলে সওজ’র কোন প্রতিনিধিকে পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে কথা বলতে বার বার নির্বাহী প্রকৌশলী, উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী ও ঠিকাদারকে ফোন করা হলে তারা ফোন রিসিভি করেননি। এঘটনায় জনরোষ চরমে পৌছালে এলাকাবাসী কাজ বন্ধ করে দেয়।
বিভিন্ন তথ্য মতে, চুয়াডাঙ্গা পৌর শহরের কোর্ট মোড় হতে আদর্শ স্কুলের সামনে দিয়ে নতুন বাজার হয়ে কেদারগঞ্জ পর্যন্ত আনুমানিক ২ কিলোমিটার অংশের কাজ পান কুষ্টিয়ার একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। তবে এ কাজ বাস্তবায়ন করছেন চুয়াডাঙ্গার মেসার্স সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার ও বিশিষ্ট ঠিকাদার আরেফিন আলম রঞ্জু। অভিযোগ উঠেছে, প্রতিষ্ঠানটি শুরু থেকেই এ রাস্তার কাজে নি¤œমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করে আসছে। প্রাক্কলন অনুযায়ী সড়কটির দু’পাশে ছয় ফুট বর্ধিত করে রাস্তা পুনর্র্নিমাণের কথা। দু’পাশ বর্ধিতকরণকাজে ২২ ইঞ্চি বেড কেটে তিনটি স্তরে প্রথমে বালু, পরে বালু ও খোয়া এবং আবার খোয়া ফেলে ১৬ ইঞ্চি ভরাট করে দৃঢ়করণ (কমপ্যাক্ট) করে ভিত্তি (বেজ) নির্মাণের কথা। এরপর পুরো রাস্তায় ছয় ইঞ্চি খোয়া (ম্যাকাডাম) ও বালু দিয়ে চূড়ান্ত দৃঢ়করণ করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি।
সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কের এই অংশের কাজে দুই পাশে বর্ধিতকরণের জন্য ২২ ইঞ্চি খনন করে (বেড) লোকাল বালু দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। তার উপর নম্বরবিহীন ইটের খোয়া ও বালু দিয়ে চূড়ান্ত দৃঢ়করণ করা হয়। এরপর পিচ ঢালাইয়ের কাজ শুরু করে শ্রমিকরা। কমপ্যাক্টে জমাটবাঁধা বৃষ্টির পানি ও মাটির উপর পিচের ঢালাই দেয়া হলে কিছু সময়ের মধ্যেই গাড়ির চাকার সঙ্গে ঢালাই উঠে আসে। এ নিয়ে জনগণের মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হলে দিনের বেলা কাজে ধীরগতি দেখা যায়। সন্ধ্যার পর সওজ’র প্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ চলে গেলে আবারও মাটির উপর পিচঢালাই শুরু হয়। কেদারগঞ্জ নতুন বাজার অংশে কাজের সময় বাঁধা হয়ে দাড়ায় স্থানীয় ব্যবসায়ী ও জনগণ। তারা রাস্তার উপর দাড়িয়ে প্রতিবাদ জানালে পিচ বোঝাই পাওয়ারট্রিলার রাস্তার উপর ফেলে পালিয়ে যায় শ্রমিকরা। কিছু সময়ের মধ্যে রোড রোলারটিও দ্রুত গতিতে স্থান ত্যাগ করে।
স্থানীয় একজন অভিযোগ করে বলেন, ‘শিডিউলে যে নিয়ম আছে সেই নিয়মে ঠিকাদার কাজ করবে। আমরা শিডিউল দেখতে চাই, আর কাজ কী হচ্ছে বুঝে নিতে চাই। কিন্তু এখন এই রাতের বেলায় কাজ হচ্ছে, এখানে ঠিকাদার নেই, ইঞ্জিনিয়াররা নেই। আপনারা স্বচোক্ষে দেখুন কেমন কারচুপি হচ্ছে। মাটির উপর পিচঢালাই দেয়া হচ্ছে। যা হাত দিলেই উঠে যাচ্ছে।’
এ প্রসঙ্গে জানার জন্য রাত ১০টা থেকে বেশ কয়েকবার চুয়াডাঙ্গা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ জিয়াউল হায়দারের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি উত্তর না দিয়েই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন। এর আগে কাজের শিডিউল, গুনগত মান ও পরিদর্শনের ব্যাপারে জানতে ৮টা থেকে ৯টা পর্যন্ত বেশ কয়েকবার উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আদম আলীকে ফোন দিলে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এ কাজে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগের সত্যতা জানতে রাত ১০টার দিকে ঠিকাদার সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোকনের মোবাইলে কল করা হলে তিনি রিসিভ করেননি। এছাড়া বিশিষ্ট ঠিকাদার আরেফিন আলম রঞ্জুর সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। এ কারণে সংশ্লিষ্ট কারো বক্তব্য দেয়া সম্ভব হয়নি।