মেহেরপুর বারাদী পুলিশ ফাঁড়ির এসআই আব্বাসের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ
নিউজ ডেস্ক:মেহেরপুর সদর উপজেলা বারাদী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) আব্বাসের বিরুদ্ধে মহিলাসহ ৭ জনকে পিটিয়ে আহত করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে। গত রোববার সকালে কলাইডাঙ্গা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। আহত ব্যক্তিরা হলেন কলাইডাঙ্গা গ্রামের মুকুলের স্ত্রী ফেরদৌসী খাতুন, মুকুলের কলেজপড়–য়া মেয়ে জ্যোতি ও প্রীতি, তাঁর চাচি আরবীয়া খাতুন, সিমা খাতুন ও বাবলু মিয়া। আহতরা মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলা কলাইডাঙ্গা গ্রামের কামরুজ্জামান মুকুল এবং আব্দুল হামিদ লিফনের পরিবারের মধ্যে জমির জায়গা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। যে জমি নিয়ে বিরোধ চলছে, সে জমিতে প্রাচীর দেওয়া ছিল। আব্দুল হামিদ লিফনের পরিবার প্রাচীরটি ভেঙে দেয়। প্রাচীরটি ভেঙে দেওয়াই মুকুলদের বাড়ি ফাঁকা হয়ে যায়। এই দেখে মুকুলের পরিবার ভেঙে যাওয়া প্রাচীরের স্থলে বেড়া দেওয়ায় আব্দুল হামিদ বারাদী পুলিশ ক্যাম্পে খবর দেয়। পরে ক্যাম্প ইনচার্জ এসআই আব্বাস আলীসহ কয়েকজন পুলিশ এসে মুকুলের স্ত্রীসহ সবার ওপরে লাঠিচার্জ করেন।
এ বিষয়ে আহত মুকুলের স্ত্রী ফেরদৌসী খাতুন জানান, ‘হঠাৎ করে বারাদী ক্যাম্পের পুলিশ আমাদের বাড়িতে প্রবেশ করে এবং আমাদের গালাগালি করে, এর প্রতিবাদ করলে আমার দুই মেয়েসহ আমাকে লাঠিপেটা করে এবং আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। আমার জামাকাপড় ছিঁড়ে দেয় তারা। তারপর আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়ায় আমার বুকে লাগে। আমার এখন শ্বাসকষ্ট হচ্ছে।’
আহত আরবীয়া খাতুন জানান, ‘পুলিশ বাড়িতে ঢুকেই কোনো কথা না বলেই লাঠিচার্জ শুরু করে দেয় আমাদের ওপর। এ সময় বাড়িতে কোনো পুরুষ লোক ছিল না, সবাই মাঠে গিয়েছিল। বাড়ির মহিলারা বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত ছিল। এ সময় বাড়িতে কাজ করা তিনজনকে ধরে গাড়িতে তোলে পুলিশ। আমি কথা বললে আমাকে মারতে শুরু করে। আমার মাজায় ও পিঠে কাঠ দিয়ে দুটা আঘাত করে। তারপর আমার ছেলের বউ কিছু বললে তাকেও মারতে শুরু করে। এ সময় আমার ছেলের বউকে ঠেকাতে গেলে পুনরায় আমাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। এরপর নজির আলি, সাজিব আর সোহানকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়।’
কামরুজ্জামান মুকুল বলেন, ‘আমাদের পরিবারের সঙ্গে আব্দুল হামিদ লিফনদের জমি-জায়গা নিয়ে দীর্ঘদিন বিরোধ চলছে। এ বিষয় নিয়ে বারাদী ক্যাম্পে লিফন প্রায়ই অভিযোগ করে। এ নিয়ে বারাদী ক্যাম্প ইনচার্জ এসআই আব্বাস আমাকে বিভিন্ন প্রকার হুমকি দেয়, বাড়িতে পুরুষ মানুষ না পেলে মহিলাদের কে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে। গত সপ্তাহে আমার মেজো ভাই ও আমার স্ত্রীকে হ্যান্ডকাপ লাগিয়ে গাড়িতে তোলার চেষ্টা করছিল। যে জমি নিয়ে সমস্যা হচ্ছে, সেই জমির পাশে প্রাচীর দেওয়া ছিল। সেই প্রাচীর ভেঙে দেওয়াই আমাদের বাড়ির সীমানা ফাঁকা হয়ে যায়। ওখানে আমরা বেড়া দিলে লিফন ক্যাম্পে খবর দেয়। আজ বারদী ক্যাম্পের এসআই আব্বাস আলী এসে আমার চাচা বাবলুকে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে দেয়। বাবলু চাচাকে টানাহেঁচড়া করে নিয়ে যাওয়ার সময় সে অজ্ঞান হারিয়ে ফেলে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ ঘটনায় আমাদের বাড়ির মহিলারা আব্বাস আলীর সঙ্গে কথা বলতে গেলে সে এবং তার সঙ্গে থাকা পুলিশ আমার পরিবারের ওপর লাঠিচার্জ করে। সেই সঙ্গে আমার বাড়িতে কাজ করা তিনজনকে আটক করে নিয়ে যায় ক্যাম্পে।’ তিনি আরও জানান, ‘জমিজমার বিষয় নিয়ে আমার বাপকে মার্ডার করা হয়েছিল। সে মামলায় আব্দুল হামিদ লিফন ৩ নম্বর আসামি। রোববার এ বিষয় নিয়ে এসআই আব্বাস আমাকে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি দিয়ে বলে, মামলা তুলে নিতে হবে এবং জমিজমা ফেরত দিতে হবে। আপনি পুলিশের লোক হয়ে জনগণকে এ ধরনের কথা বলা ঠিক না, এ কথা বলায় এসআই আব্বাস বলে, তোর বাবা তো সন্ত্রাসী ছিল, এমনিতে মার্ডার হয়েছে নাকি ?’
মুকুল আরও বলেন, ‘এসআই আব্বাস আলী এক বছর আগে বারাদি ক্যাম্পে আসার পর প্রতিনিয়ত এ জমিজমার বিষয় নিয়ে আমাদের হুমকি দিয়ে আসছে এবং বাড়িতে এসে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে। ১০০ বছর ধরে এই জমিতে আমরা বাড়ি করে আছি। এই জমি নিয়ে আদালতে মামলা চলছে। মামলা শেষ হলে যার জমি, সে পাবে। অথচ এর আগে এসআই আব্বাস আলী আমার ভাইকে ধরে নিয়ে যেয়ে ৫০ হাজার টাকা নিয়ে ছেড়েছে। আমাকে প্রতিনিয়ত এখন হুমকি দেয়; বলে, তোকে ক্রসফায়ার দেব। আমিসহ আমার পরিবারের সবাই আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছি। মেহেরপুর পুলিশ সুপারের কাছে আমার একটি অনুরোধ আপনি এ বিষয়টি দেখবেন।’
বারাদি ক্যাম্প ইনচার্জ এসআই আব্বাস আলীর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার কাছে অভিযোগ এলে আমি ঘটনাস্থলে যাই। ওই স্থানে গিয়ে দেখি, প্রাচীরের ওপর বেড়া দিচ্ছে মুকুলের পরিবার। মহিলাদের সঙ্গে আমার কয়েকটি কথা হয়। তারপর আমি চলে আসি।’ মহিলাদের পিটিয়ে আহত করেছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে, সব মিথ্যা।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সার্কেল) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ‘আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি এবং সেখানে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেছি। ওই জমি নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে মামলা চলছে। সেখানে প্রাচীর দেওয়া ছিল। প্রাচীর ভেঙ যাওয়ায় মুকুলের পরিবার বেড়া দেওয়াতে এ ঘটনাটি ঘটে।’ এসআই আব্বাসের বিষয়ে তিনি বলেন, কোনো পুলিশ সদস্য যদি মহিলাদের গায়ে হাত দেন, তাহলে ঘটনা তদন্ত করে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।