সম্প্রতি সংবাদমাধ্যম বিবিসি-কে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে এস কে সিনহা বলেন, বাংলাদেশে আমার শেষ দিনগুলো ছিল খুবই ভয়ংকর, যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। এটা কেবল উপলব্ধি করা যায়। আমি প্রধান বিচারপতি ছিলাম, সেই আমাকেই গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছিল। আমাকে কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেওয়া হয়নি। আমার ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। আমার বাড়ির চারপাশে নিরাপত্তা বাহিনী পাহারা বসায়। আমার একজন স্টাফ বাসায় ঢুকতে গেলে তাকে পেটানো হয়।
সাবেক এই বিচারপতি আরও বলেন, সাত বছর আগে জোর করে দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছিল আমাকে। ডিজিএফআইয়ের তৎকালীন প্রধান সাইফুল আবেদীন মধ্য রাতে আমাকে বিরক্ত করতেন এবং পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার জন্য চাপ দিতেন।
বর্তমান সরকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করলে তিনি দেশে ফিরে আসতে চান বলেও জানান। গত ১৪ আগস্ট বিদেশ থেকে ভিডিও কলের মাধ্যমে দেওয়া আরও এক সাক্ষাৎকারে সিনহা বলেন, তিনি বাংলাদেশে ফিরে আসতে চান। এখন তিনি গ্রিন সিগনালের জন্য অপেক্ষা করছেন।
তিনি দাবি করেন, ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে দেশের ২১তম প্রধান বিচারপতি নিযুক্ত হওয়ার পর নিম্ন আদালত যাতে বড় বড় চোরাকারবারি ও দুর্নীতিবাজদের জামিন দিতে না পারে সেজন্য কিছু উদ্যোগ নেওয়ার পর থেকেই দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হয়। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ তাকে শেখ হাসিনা, বর্তমানে পুলিশ হেফাজতে থাকা সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের সঙ্গে বৈঠকের জন্য বঙ্গভবনে ডেকে পাঠান। বৈঠকে শেখ হাসিনা তাকে পরদিন সরকারের পক্ষে রায় দিতে বললেও তিনি বিচার বিভাগের স্বাধীনতার স্বার্থে তা প্রত্যাখ্যান করেন।
সিনহা আরও বলেন, একপর্যায়ে, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বাগবিতণ্ডা চরমে ওঠে এবং শেখ হাসিনাকে তিনি বলেছিলেন এখনই পদত্যাগ করবেন। তখন শেখ হাসিনা তাকে পদত্যাগ না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, তিনি পদত্যাগ করলে জনগণ এটা ভালোভাবে নেবে না।
তিনি বলেন, আমি একদিন অফিসে কাজ শেষ করেছি মাত্র। ঠিক তখনই ডিজিএফআই প্রধান তার অফিসে গিয়ে তাকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী নিজেই তাকে পাঠিয়েছেন এবং আপনাকে পদত্যাগ করতে এবং দেশ ছেড়ে চলে যেতে বলেছেন। তখন এসকে সিনহা চিৎকার করে বলেন, ‘আপনি কে এবং আপনি এসব কী বলছেন?
তখন ডিজিএফআই প্রধান বলেন, তারা শুধু প্রধানমন্ত্রীর আদেশ বাস্তবায়ন করেন, আইনমন্ত্রী বা অ্যাটর্নি জেনারেলের নয়। এরপর থেকে তাকে গৃহবন্দি করে রাখা হয় বলে দাবি করেন সাবেক এই বিচারপতি।
এ অবস্থার মধ্যেই ২০১৭ সালের ১৩ অক্টোবর রাতে ঢাকা ত্যাগ করেন সাবেক এই বিচারপতি সিনহা।