চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল এলাকায় বেড়েছে দালালের দৌরাত্ম্য
নিউজ ডেস্ক:চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের প্রধান ফটকের সামনে দালালের হাতে প্রতারণার শিকার হয়েছেন নজরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি ও তাঁর পরিবার। গতকাল রোববার দুপুর ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। দালালের হাতে প্রতারণার শিকার নজরুল ইসলাম দামুড়হুদা উপজেলার জুড়ানপুর ইউনিয়নের বিষ্ণপুর গ্রামের মাদ্রাসা পাড়ার মৃত জাহা বক্সের ছেলে।
জানা গেছে, হাসপাতালে চিকিৎসক নেই, এ কথা বলে এক প্রকার জোর করেই রোগীর পরীক্ষা-নিরীক্ষার সব কাগজপত্র নিয়ে নেন দালাল। রোগী ও তাঁর স্বজনকে টাকা ছাড়াই চিকিৎসার ব্যবস্থা করিয়ে দেবেন বলে ওই দালাল তাঁদের নিয়ে যান হাসপাতাল সড়কের পপুলার ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড ডক্টরস চেম্বারে। এরপর ওই দালাল সেখান থেকে উধাও হয়ে যান। এ সময় পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের স্টাফরা নজরুল ইসলামকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেয়ে প্রেসক্রিপশন করিয়ে ৪০০ টাকা দাবি করেন। তাঁর কাছে ৪০০ টাকা না থাকায় ২০০ টাকা দিয়ে পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার ত্যাগ করেন তিনি।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গতকাল সকালে নজরুল ইসলাম, তাঁর স্ত্রী ও বোন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল সড়কে অবস্থিত যক্ষা নির্ণয় কেন্দ্রে আসেন নজরুল ইসলামের যক্ষা হয়েছে কি না, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষার করানোর জন্য। সেখান থেকে বিনা মূল্যে পরীক্ষা করিয়ে রিপোর্ট নিয়ে যাচ্ছিলেন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ডা. আবুল হোসেনের নিকট। সেখানে পৌঁছানোর পূর্বেই হাসপাতালের প্রধান ফটকের সামনে হেলমেট পরিহিত এক মোটরসাইকেল আরোহী তাঁদের কাছে আসেন এবং তাঁদের সমস্যার কথা জানতে চান। এ সময় নজরুল ইসলাম ও তাঁর স্ত্রী তাঁদের সমস্যার কথা জানালে বিনা মূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করিয়ে দেবেন বলে পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যান ওই ব্যক্তি। এরপর তাড়াতাড়ি নজরুল ইসলামকে ডাক্তার দেখিয়ে দিতে বলে তিনি সেখান থেকে সটকে পড়েন। ডাক্তার দেখানোর পর নজরুল ইসলাম, তাঁর স্ত্রী ও বোন সেখান থেকে চলে যেতে চাইলে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের এক স্টাফ তাঁদের পথ রোধ করেন এবং ডাক্তারের ভিজিট চান। এ সময় ৪০০ টাকা ভিজিট শুনে দরিদ্র নজরুল ইসলাম হতবাক হয়ে যান এবং বুঝতে পারেন তাঁরা দালালের খপ্পরে পড়েছেন।
এদিকে, প্রতারিত রোগী ও তাঁর স্বজনদের নিকট থেকে এ তথ্য জানার সময় হঠাৎ করেই হেলমেট পরিহিত ওই দালালকে আসতে দেখা যায়। এ সময় তাঁকে ডেকে কথা বলতে চাইলে ঘটনা আঁচ করতে পেরে মোটরসাইকেল ঘুরিয়ে দ্রুত গতিতে পালিয়ে যান তিনি। প্রতারিত হওয়ার অভিযোগ পেয়ে নজরুল ইসলাম ও তাঁর স্বজনদের সঙ্গে সরজমিনে পপুলার ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড ডক্টরস চেম্বারে গেলে সেখানকার কর্মরত স্টাফরা দালালের সঙ্গে তাঁদের সাক্ষাতের বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার করে বলেন, ‘এই রোগীরা নিজেরাই আমাদের এখানে এসে ডা. আওলিয়ার রহমানকে দেখাবেন বলে জানান। আমরা রোগীকে ডাক্তারের চেম্বারে নিয়ে যাই। ডাক্তার রোগী দেখেন এবং চিকিৎসা প্রদান করেন। তবে তাঁরা ভিজিট না দিয়েই চলে যাচ্ছিলেন। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে ৪০০ টাকা ভিজিট না নিয়ে মানবিকতার খাতিরে ২০০ টাকা নেওয়া হয়েছে।’ তবে নজরুল ইসলাম, তাঁর স্ত্রী ও বোন ডা. আওলিয়ার রহমানের নামও শোনেননি বলে জানান।
এক সূত্রে জানা যায়, হেলমেট পরিহিত এক মোটরসাইকেল আরোহীকে বেশ কিছুদিন ধরেই দেখা যাচ্ছে হাসপাতাল সড়কে। এ ব্যক্তি হলেন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ঘুরে বেড়ানো আলোচিত সেই জনি দালাল। যার নামে একসময় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের দেয়ালে সর্তকবার্তা লেখা থাকত, ‘জনি দালাল হতে সাবধান’।