নিউজ ডেস্ক:
সন্তানের চিন্তা ভাবনা, আচার আচারণ, অভ্যাস এবং কর্ম প্রক্রিয়া তৈরিতে বাবা মায়ের ভূমিকা অপরিসীম।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, আপনার বাবা মায়ের কাছ থেকে আপনি যে ব্যবহার পেয়েছেন সেই একই আচরণ আপনি আপনার সন্তানের সঙ্গে করার প্রবণতা রাখেন। বাবা মায়ের কিছু নির্দিষ্ট আচরণ যেমন সন্তানের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে তেমনি ভুল আচরণ সন্তানের স্থায়ী ক্ষতির কারণ হতে পারে।
তাই নিজের অজান্তে সন্তানদের সঙ্গে ভুল আচরণ করে তাদেরকে ভুল এবং ব্যর্থতার পথে ঠেলে দিচ্ছেন কি না, তা খুঁজে বের করাটা জরুরি।
দ্বৈত নীতি
অসম এবং ভণ্ডামি মানসিকতা থাকলে এই পৃথিবীতে আপনি কিছুই পাবেন না, বিশেষত যখন আপনার সন্তানরা বড় হচ্ছে। আপনাকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে, আপনার সন্তানরা আপনার দিকে তাকিয়ে আছে, আপনার কথা কাজ এবং আচরণ দ্বারা তারা প্রভাবিত হচ্ছে।
ধরুন, আপনার কথা আর কাজে যদি মিল না থাকে তবে আপনার সন্তানরা মনে করবে, কথা আর কাজে মিল থাকার প্রয়োজন নেই, যা বলছি তা না করাটা বেঠিক কিছু না। এর ফলে তারা কপট মানসিকতার অধিকারী হবে।
উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি সন্তানদের খাবার টেবিলে মোবাইল ফোন ব্যবহার করা নিষিদ্ধ করেন তবে আপনার নিজেকেও খাবার টেবিলে মোবাইল ফোন ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
অতিরিক্ত নিরাপত্তা
বাবা মায়ের একটা প্রধান সমস্যা হল, তারা তাদের সন্তানদেরকে নিয়ে এত বেশি অনিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন যে, তাদেরকে সকল প্রকারের ঝুঁকিপূর্ণ কাজ থেকে দূরে রাখতে চান। সবধরনের ঝুঁকিপূর্ণ এমনকি স্বল্প ঝুঁকিপূর্ণ কাজের অভিজ্ঞতা থেকেও তাকে বঞ্চিত করা হয়।
আপনাকে অবশ্যই সন্তানদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তবে সবসময় আঠার মতো লেগে থাকলে এবং সবসময় বিপদ থেকে উদ্ধার করলে সে কখনোই নিজে নিজে সমস্যা সমাধান করা শিখবে না।
বাচ্চাদের কিছু জিনিস অবশ্যই শেখা দরকার যেমন- কিভাবে ধুলাবালি মাখতে হয় এবং কিভাবে তা থেকে বেরিয়ে নিজেকে পরিষ্কার করতে হয়।
অনুশোচনাহীন মুখাপেক্ষিতা
আপনি যদি আপনার সন্তানদের সকল চাহিদা মেটাতে পারেন এবং তারা যদি এ ব্যাপারে খুশি থাকে তবে ধরে নিতে হবে আপনি বা আপনারা ভালো বাবা মা হতে পারেন নাই। আপনার কাজ শুধু তাদের বন্ধু হওয়া নয়। আপনাকে হতে হবে তাদের গুরু, পরামর্শদাতা এবং সমালোচক অর্থাৎ বিশ্লেষণধর্মী উপদেষ্টা। সন্তানরা যা চায় তাই দেয়া মানে তাকে অনেকটা ভোঁতা করে ফেলা। আপনি যদি আলাদিনের চেরাগ হোন আর আপনার সন্তানরা যদি ‘যা চাই তাই পাই’ সূত্র প্রয়োগ করে প্রতিবার সফল হয় তবে জীবন যুদ্ধে তাদের টিকে থাকা কঠিন হয়ে উঠবে।
আপনার সন্তানদের জানতে হবে যে, জগতের সবাই এবং সবকিছু তাদের কাছে ঋণী নয়, ঋণীদের কাছে টাকা ফেরত চাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা দিতে বাধ্য থাকবে, ব্যাপারটা এরকম না। তাদের অবশ্যই জানতে দিতে হবে যে, জগতের কত মানুষ আছে যারা থাকা খাওয়ার মতো সুযোগ সুবিধাও পাচ্ছে না, সুতরাং সুবিধা পাওয়াই যে তার অধিকার সেই মানসিকতা থেকে বেরিয়া আসতে দিতে হবে।
তাদের সত্যিই কিছু দরকার হলে তারা যেন পরিশ্রম করে সেটা অর্জন করতে কোনো দ্বিধায় না পড়ে সেভাবে গড়ে তুলতে হবে।
অতীতের ভুলগুলো লুকানোর চেষ্টা
আপনি আসলে কি ধরনের মানুষ সন্তানদের সেটা জানানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনার অতীত তাদের সঙ্গে ভাগ করে নিন এবং আপনি যখন অল্পবয়স্ক ছিলেন তখন যে সমস্ত ভুলগুলো করেছেন সেগুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে স্বীকার করুন। এতে আপনার সন্তানদের সঙ্গে আপনার আত্মিক বন্ধন আরো দৃঢ় হবে।
ভুলেও এটা উল্লেখ করবেন না যে, এই কথাগুলো কিভাবে তাদের কাছে আপনাকে আরো ভালো মানুষ প্রমাণ করতে সাহায্য করছে বরং তারা যেন আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে সকল ব্যর্থতাকে মোকাবেলা করতে পারে এবং আপনার ভুলগুলো যেন দ্বিতীয়বার না করে সেই ব্যাপারে উৎসাহ দিন।
সহজেই প্রশংসা
হ্যাঁ, আপনার সন্তানদের আত্মবিশ্বাস বাড়ানোটা খুব জরুরি। তার মানে এই না, আপনি তার প্রত্যেকে পরীক্ষার ফলাফলের জন্য অথবা ফুটবল ম্যাচের প্রত্যেক কিকের জন্য আনন্দ উদযাপন করবেন। আপনার বাচ্চার খুশির জন্য আপনি তাকে একটি ট্রফি বাজার থেকে কিনে দিতেই পারেন তবে এর ফলে হয়তো সে চিরকাল একটা আসল বিজয় উল্লাস থেকে বঞ্চিত হবে। যার দরুন পরিশ্রম করে খেলে ট্রফি ছিনিয়ে আনার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলার আশঙ্কাই বেশি।
এই ধরনের বাচ্চারা বড় হয়ে মনে করে, পৃথিবী তাদের যোগ্যতাকে কদর করার যোগ্যতা অর্জন করেনি। তারা তার বাবা মায়ের কাছ থেকে নানা বিষয়ে এত বেশি প্রশংসা পেয়েছে যে, তারা জানেই না যে বিশ্বব্যপী আসল হিরো হওয়ার একটা মাপকাঠি আছে। তারা এও জানে না যে, পরিশ্রম করে সেই মাপকাঠিতে না পৌঁছাতে পারলে তার বাবা মায়ের মতো কেউ তাদের অহেতুক প্রশংসা করবে না।
তথ্যসূত্র : কিওর জয়