নিউজ ডেস্ক:
অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও দীর্ঘস্থায়ী ভয়াবহ বন্যায় ভেঙে পড়েছে দেশের ২৯ জেলার ১৩৫ উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা। পানির চাপে ধসে গেছে অনেক এলাকার গ্রামীণ সড়ক। সেতু-কালভার্টের সংযোগ সড়ক ধসে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে জেলা-উপজেলা-ইউনিয়ন। দীর্ঘদিন পানির নিচে থাকায় উঠে গেছে সড়কের বিটুমিন। এমন অবস্থায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছে লাখো মানুষ। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) তথ্য বলছে, চলমান বন্যা ও তার আগে আম্পানের কারণে সংস্থাটির অধীন প্রায় ১১ হাজার ১৭৮ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একই সঙ্গে ১৬ হাজার ৫০০ মিটার সেতু ও কালভার্ট ভেঙে গেছে। এতে ৪ হাজার ৫৫ কোটি টাকা সরকারের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। চলতি বছরের ২০ মে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় আম্পান। অতিপ্রবল এ ঘূর্ণিঝড়ে দেশের ২৯টি জেলার ১৩৫টি উপজেলায় ৯০০টি সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের পরিমাণ ২ হাজার ১৭৮ কিলোমিটার। আনুমানিক আর্থিক ক্ষতি ১ হাজার ২২৫ কোটি টাকা। একই সঙ্গে যে হারে সেতু-কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাতে ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ ২০০ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে ঘূর্ণিঝড়ে সড়কে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা। এছাড়া চলমান বন্যাকবলিত ৩৩ জেলার মধ্যে এলজিইডির প্রধান কার্যালয় থেকে ২৭ জেলার ক্ষয়ক্ষতির তথ্য পাওয়া গেছে। দীর্ঘতম এ বন্যায় নয় হাজার কিলোমিটার সড়কসহ ১৫ হাজার মিটার সেতু ও কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ২ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা। তবে বিভিন্ন জেলায় সড়ক থেকে এখনো বন্যার পানি না নামার কারণে আর্থিক ক্ষতির প্রকৃত পরিমাণ নির্ধারণে আরো অপেক্ষা করতে হবে বলে এলজিইডির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
এলজিইডির সড়ক ও সেতু রক্ষণাবেক্ষণ শাখার অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সেখ মোহাম্মদ মহসিন বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের ক্ষতির পরিমাণ দৈনিক ভিত্তিতে আপডেট হচ্ছে। গতকাল পর্যন্ত বন্যায় আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ২ হাজার ৩০ কোটি টাকা। এলজিআরডির আওতায় পাকা সড়ক রয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার কিলোমিটার। বন্যা ও আম্পানে অধিকাংশ সড়ক কোনো না কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত বছর সড়ক উন্নয়ন ও মেরামতের কাজে ১ হাজার ৯০০ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও সরকার থেকে ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা প্রদান করা হয়। এরই মধ্যে বরাদ্দকৃত টাকার কাজ শেষ করা হয়েছে। তবে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো দ্রুত মেরামত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নতুন করে একটি প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পের মাধ্যমে ৫ হাজার ৪২৮ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার ও পুনর্র্নিমাণ করা হবে বলেও জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাতে ৩৯ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গত অর্থবছর এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৭ হাজার ৮৮৬ কোটি টাকা। এ বাজেট থেকে প্রতি বছর সড়ক ও সেতু রক্ষণাবেক্ষণে নির্দিষ্ট অর্থ বরাদ্দ থাকে। চলতি অর্থবছরে রাজস্ব খাতের ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ বরাদ্দ রয়েছে। তবে চাহিদার তুলনায় এ বরাদ্দ অনেক কম বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এজন্য প্রকল্পের উন্নয়নকাজ শেষ হওয়ার আগেই অনেক সময় বরাদ্দের অর্থ শেষ হয়ে গেলে উন্নয়নও বন্ধ রাখা হয় বলে জানান কর্মকর্তারা। স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামীণ সড়কগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মেরামত ও সংস্কার করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে একটি নতুন প্রকল্প অনুমোদনে কাজ চলছে। করোনা ও দীর্ঘস্থায়ী বন্যার কারণে গত বছরের কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। আমাদের বর্তমান লক্ষ্য হচ্ছে চলতি বছরেই এ কাজ শেষ করা।