অধিকাংশ মানুষের কাছে মৌমাছি বা বোলতার হুল বিপজ্জনক নয়। কিন্তু যাদের পোকার বিষের অ্যালার্জি আছে, তাদের দেহে হুল ফুটলে মারাত্মক প্রতিক্রিয়া হতে পারে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই অ্যানাফিল্যাকটিক শক হতে পারে।
গরমের সময় অনেক পোকামাকড় আর দূরে থাকে না।
চিনির আশায় তারা ঘরে ঢুকে যেতে পারে এবং বিরক্ত করতে পারে, এমনকি হুলও ফুটিয়ে দিতে পারে।
মৌমাছি বা বোলতার বিষে শুধু ব্যথাই নয়, আরও বড় কিছুও হতে পারে। ক্রিস্টিনা ব্লেসমান একদিন তৃণভূমিতে এমন কামড় খেয়েছিলেন। তিনি বলেন, সেই ঘটনার দুই বছর হয়েছে চলতি সপ্তাহে। দুই বছর আগে পোকা হুল ফুটিয়ে দিলে আমার অ্যানাফিল্যাকটিক শক হয়। তখন আমি অচেতন হয়ে পড়ি, ফলে কিছু মনে নেই।
পোকার বিষক্রিয়ায় কয়েক মিনিটের মধ্যে তার সার্কুলেশন ভেঙ্গে পড়ে। তার মা দ্রুত অ্যাম্বুলেন্স ডাকেন। জরুরি চিকিৎসক ক্রিস্টিনা ব্লেসমানের জীবন বাঁচাতে লড়াই করেছেন।
বোলতার বিষে যাদের এলার্জি আছে, তাদের দেহ ম্যাসেঞ্জার সাব্সটেন্স হিস্টামিন রিলিজ করে প্রতিক্রিয়া জানায়। এতে রক্তনালীগুলো হঠাৎ প্রসারিত হয়ে যায়। ফলে রক্তচাপ কমে যায় এবং বিভিন্ন অঙ্গে পর্যাপ্ত অক্সিজেন পৌঁছায় না। আর তাতে দ্রুত কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হতে পারে।
সৌভাগ্যবশত জরুরি চিকিৎসক ক্রিস্টিনা ব্লেসমানের সার্কুলেশন স্থিতিশীল করতে সক্ষম হন। ক্রিস্টিনা ব্লেসমান বলেন, আমি ওঠার পর মনে করেছিলাম আমি সম্ভবত কোনো দুঃস্বপ্ন দেখছি। কিন্তু জরুরী চিকিৎসক আমার সঙ্গে তাৎক্ষণিক কথা বলতে শুরু করেন এবং আমি বুঝতে পারি যে স্বপ্নে নেই। কিন্তু আমি শুয়ে ছিলাম। এবং তিনি বলেন, আপনি ফিরেছেন, অল্পের জন্য বেঁচে গেছেন।
এলার্জি বিশেষজ্ঞ আন্দ্রেয়াস ক্লাইনহাইন্স এ রকম অনেক ভয়াবহ পরিস্থিতি দেখেছেন। যদি ফোলার সঙ্গে শ্বাস-প্রশ্বাসের ঘাটতি বা বমি ভাব হয়, তাহলে তিনি হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
অ্যালারগোলজিস্ট আন্দ্রেয়াস ক্লাইনহাইন্স বলেন, অ্যানাফিল্যাকটিক প্রতিক্রিয়া সবসময় জীবনের প্রতি ঝুঁকিপূর্ণ হয় না। কিন্তু এরফলে আমবাত, মুখ ফুলে যাওয়া এবং শ্বাসকষ্ট হতে পারে। আমরা রোগীদের এখানে রাখি এবং সারারাত পর্যবেক্ষণ করি।
ক্রিস্টিনা ব্লেসমান এখন এলার্জির চিকিৎসা নিচ্ছেন। প্রতি পাঁচ সপ্তাহ পরপর তার শরীরে ছোট্ট এক ডোজ হুলের বিষ প্রবেশ করানো হয় যাতে তিনি তাতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন।
এই সংবেদনশীলতা থেরাপি পাঁচবছর নিতে হয়। চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ড. উটে ল্যাপ বলেন, অল্প সংখ্যক রোগী কয়েকবছর পর আবার রিঅ্যাক্ট করতে পারেন, তবে বেশিরভাগই সুরক্ষিত থাকবেন। মৌমাছির বিষের ক্ষেত্রে বরা যায় চিকিৎসা নেওয়ার পর ৯৮ শতাংশই নিরাপদে থাকবেন।
এ কারণেই চিকিৎসক ইওয়াখিম কুর্ৎসবাখ হুল ফোটানোর দিকে নজর রাখতে বলেন। ফোলা জায়গা ঠাণ্ডা রাখার এবং না চুলকানোর পরামর্শ দেন তিনি।
ফ্যামিলি ডক্টর ইওয়াখিম কুর্ৎসবাখ বলেন, আমাদের ত্বকে ব্যাকটেরিয়া রয়েছে এবং কখনো কখনো মানুষ ক্ষতস্থান চুলকাতে গিয়ে সেখানে ময়লা লাগিয়ে ফেলেন। তখন সুপারইনফেকশন হতে পারে।
আরেকটি উপায় হচ্ছে হিট পেন দিয়ে দ্রুত চিকিৎসা করা। চিকিৎসক ইওয়াখিম কুর্ৎসবাখ বলেন, দুই থেকে তিন মিনিটের মধ্যে ডিভাইসটি তৈরি করতে হবে। সেটা হ্যান্ড ব্যাগে রাখা যায়। এবং দরকার হলে যেখানে হুল ফুটেছে সেখানে তাপ দেয়া যায় হিট পেন দিয়ে। এতে বিষের প্রোটিন ভেঙ্গে যায় ফলে মারাত্মক প্রতিক্রিয়া হয় না।
অবশ্যই সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে মৌমাছিকে হুল ফুটানোর সুযোগ না দেয়া। সেগুলোকে হাত দিয়ে সরিয়ে দিতে গেলে উল্টো আক্রমণ করতে পারে। কিংবা ফু দিলেও লাভ নেই। বরং পানি ছেটাতে পারেন। তখন বৃষ্টি পড়ছে ভেবে ঘরে ফিরবে সেগুলো।