দর্শনায় পূর্বশত্রুতার জের ধরে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, থমথমে শহর
জেলা যুবলীগের বিবৃতি-পল্টু যুবলীগ কর্মী নয়, হত্যার নেপথ্যে মাদক ব্যবসা
নিউজ ডেস্ক:দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনায় দুই গ্রুপের সংঘর্ষে নাইমুল ইসলাম পল্টু (৩৫) নামের এক যুবলীগের কর্মী নিহত হয়েছেন। প্রকাশ্যে ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও দুজন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাঁকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিহত নাইমুল ইসলাম পল্টু দর্শনা পৌরসভার ঈশ্বরচন্দ্রপুর গ্রামের মৃত আব্দুর রউফ ওরফে পুটে ম-লের ছেলে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে দর্শনা রেলওয়ে স্থলবন্দর-সংলগ্ন রুস্তম আলীর হোটেলের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় চাপা উত্তেজনা ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে শহরজুড়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। যেকোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে। সংঘর্ষের পরপরই চুয়াডাঙ্গার পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান পিপিএম (বার), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) কানাই লাল সরকার, দামুড়হুদা মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কে এম জাহাঙ্গীর কবীরসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এদিকে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত নাইমুল ইসলাম পল্টু যুবলীগ কর্মী নন, এ ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে মাদক ব্যবসা বলে এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে চুয়াডাঙ্গা জেলা যুবলীগ।
একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে দর্শনা ঈশ্বরচন্দ্রপুরের আব্দুর রউফের ছেলে নাইমুল ইসলাম পল্টু (৪০) দর্শনা রেল বন্দর-সংলগ্ন রেলগেটের নিকট তুল তুল নামক একটি কফি হাউজে বসেছিলেন। এ সময় স্থানীয় যুবলীগের ১৫-২০ জনের একটি দল পল্টুকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে রুস্তম আলীর হোটেলের সামনে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে যুবলীগের ওই নেতা-কর্মীরা পল্টুকে প্রকাশ্যে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়িভাবে কোপাতে থাকেন। এ সময় পল্টু ঘটনাস্থলে পড়ে গেলে স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। এ হামলার ঘটনাটি মনজুরুল ইসলাম নামের একজন ক্যামেরাবন্দী করতে গেলে তাঁকে ও প্রত্যক্ষদর্শী মহাব্বত নামের আরেকজনকে হামলাকারীরা লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেন। তাঁদের মধ্যে মনজুরুলের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাঁকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে আহত মনজুরুল জানান, পূর্বপরিকল্পিতভাবে ধারালো অস্ত্র নিয়ে দর্শনা পৌর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আসলাম উদ্দীন তোতা, সহসাধারণ সম্পাদক আব্দুল মান্নান এবং স্থানীয় যুবলীগের নেতা দিপু ও বাংলার নেতৃত্বে ১৫-২০ জন তাঁদের ওপর প্রকাশ্যে হামলা করেন।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, শুক্রবার সন্ধ্যায় গুরতর জখম অবস্থায় দুইজনকে সদর হাসপাতালে নিয়ে আসে লোকজন। এদের মধ্যে একজনকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়েছে। অপরজন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।
জানা যায়, দর্শনার স্থানীয় যুবলীগের নেতা দিপুর সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে ঈশ্বরচন্দ্রপুর গ্রামের হেলাল গ্রুপের দ্বন্দ্ব চলছিল। এ দ্বন্দ্বের জের ধরে কয়েক দিন আগে দিপুকে মারধর করেন হেলালসহ কয়েকজন। এই মারধরের ঘটনার প্রতিশোধ হিসেবে হেলাল গ্রুপের পল্টুর ওপর হমলা চালানো হয়েছে বলে ধারণা করছেন অনেকে।
একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, অবৈধ মাদক ব্যবসা ও চোরাচালান নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বেশকিছু দিন ধরেই বিরোধ চলে আসছিল। এ বিরোধের জেরে তিন মাস আগেই একবার তাঁদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছিল। সে সময় কোনো হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও গতকাল শুক্রবারের সংঘর্ষে প্রাণ হারালেন যুবলীগের কর্মী নাইমুল ইসলাম পল্টু।
নিহত পল্টুর ভাই দর্শনা পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মঈন উদ্দিন জানান, তাঁর ভাই যুবলীগের কর্মী নাইমুল ইসলাম পল্টু শুক্রবার বিকেলে সহকর্মীদের নিয়ে দর্শনা পুরাতন বাজার রেলগেট নামক স্থানে একটি চায়ের দোকানে বসেছিল। এ সময় দর্শনা পৌর এলাকার মোবারকপাড়ার আলী হোসেনের ছেলে দামুড়হুদা উপজেলা যুবলীগের সহসাধারণ সম্পাদক আব্দুল মান্নান খান, একই এলাকার মৃত কবীর উদ্দিনের ছেলে দর্শনা পৌর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আসলাম আলী তোতা, রাজ্জাক কম্পাউন্ডারের ছেলে বাংলা, পুরাতন বাজার বটতলার মৃত জিয়াউল হকের ছেলে স্থানীয় যুবলীগের নেতা দিপুসহ ১০-১৫ জন এসে তাঁর ভাইকে প্রকাশ্যে এলোপাতাড়িভাবে কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে পালিয়ে যান।
পল্টুর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, নিহত যুবলীগের কর্মী নাইমুল ইসলাম পল্টু দুই পুত্রসন্তানের জনক। বড় ছেলে শাহরিয়ার আহম্মেদ বাঁধন ওরফে রাতুল দর্শনা কেরুজ উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র এবং ছোট ছেলে আরিয়ান মাহমুদের বয়স দেড় বছর।
দামুড়হুদা মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কে এম জাহাঙ্গীর কবীর জানান, ঘটনা জানার পরপরই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয়েছে। নিহত পল্টুর লাশ ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি এবং কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি, তবে অপরাধীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান পিপিএম (বার) বলেন, ‘দর্শনায় দুই গ্রুপের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে একটি হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটেছে। আমরা হত্যাকা-ের ঘটনায় প্রকৃত দোষীদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছি এবং তাঁদের গ্রেপ্তারের অভিযান অব্যাহত রেখেছি। সেই সঙ্গে ঘটনাস্থলের পাশ থেকে সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে।’